ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

এরদোয়ানের ভিডিও বার্তার পর মাইকিং হয়েছে মসজিদে

erতুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একাংশ ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান নিয়ে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে সেখানকার পরিস্থিতি জানতে বাংলা ট্রিবিউন কথা বলে তুরস্কের ইজমির শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশি একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

ওই শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গভীর রাত থেকেই ইস্তাম্বুলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে প্রথমে গুজবের মতো ছড়িয়ে পড়ে, ইউরোপ ও এশিয়ার কানেকটিং ব্রিজ দখল করে সেনারা বন্ধ করে দিয়েছে। শুরুতে নানা গুজব সৃষ্টি হলেও এক পর্যায়ে আমরা জেনে যাই, ইস্তাম্বুলে সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আমার বন্ধুদের (ইস্তাম্বুলে অবস্থারত) কাছে জানতে পারি, শেষরাতে ইস্তাম্বুল হয়ে পড়ে যুদ্ধক্ষেত্র। কারণ ততক্ষণে বিদ্রোহীরা বিমানবাহিনীর প্রধানকে জিম্মি করে হেলিকপ্টার নিয়ে আকাশে উড়তে থাকে।

এসব ঘটনার এরদোয়ান ভিডিও বার্তায় জনগণকে রাস্তায় নেমে প্রতিহতের নির্দেশ দেন। সঙ্গে-সঙ্গেই তা দ্রুত সবগুলো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশি ওই শিক্ষার্থী জানান, তিনি ইস্তাম্বুলে তার বন্ধুদের কাছে জানতে পেরেছেন, সেখানে মসজিদে মাইকিং করে এরদোয়ানের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তার কিছুক্ষণ পরে তিনি শুনতে পান ইজমিরের মসজিদগুলো থেকেও মাইকে এরদোয়ানের আহ্বান প্রচার করা হচ্ছে। তিনি আরও যোগ করে বলেন, ইজমিরের মসজিদগুলো কখনোই সরকারের পক্ষে কিছু প্রচার করেনি। এই প্রথম এখানে এমনটা দেখেছি। তার মানে ধরে নেওয়া যায়, সারাদেশেই মসজিদগুলো থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ইজমিরে বসে পুরো তুরস্কের বিষয়ে বর্ণনা করা খুব কঠিন। ইজমিরের অধিকাংশ জনগণ এরদোয়ানকে পছন্দ না করলেও তারা সেনা বিদ্রোহের বিপক্ষে মাঠে নেমে পড়ে। যা অনেকটা  এরদোয়ানের পক্ষেই কাজ করার মতো। কিন্তু এটা উল্লেখ করা অবশ্যই জরুরি যে বিশেষ করে ইজমিরের আশি শতাংশের অধিক মানুষ এরদোয়ানকে ক্ষমতায় দেখতে চান না। তবে তারা মনে করেন, সেনা শাসনের মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।

তবে এ আন্দোলনে জনতার জয় হয়েছে বলে তুরস্কের জনগণ মনে করছে বলে জানান বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। কারণ সেনাদের এভাবে সাহসের সঙ্গে রুখে দিয়েছে জনগণই।  তার অনেক বন্ধুও মনে করছেন, এই প্রতিরোধ করার সাহস তাদের ভবিষ্যতে নতুন কিছু করার দিশা দেখাতে পারবে।

বাংলাদেশি ওই শিক্ষার্থী বলেন, এরদোয়ান তুরস্কের একজন স্বৈরশাসক। তবে ইস্তাম্বুলে ও আঙ্কারায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আবার তার দল দ্য জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির কর্মীদের মধ্যেও এরদোয়ান অনেক জনপ্রিয়। অনেক মানুষ তাকে যেমন পছন্দ করে আর অপছন্দের সংখ্যাও কম নয়। যদিও শতাংশের হিসাব করলে পুরো তুরস্কে তাকে ৩৫% মানুষ তাকে অপছন্দ করে। তুরস্কের তরুণপ্রজন্ম এরদোয়ানকে সরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু এরদোয়ানকে ক্ষমতায় না চাইলেও তারা সেনা শাসনের মাধ্যমে কোনও সমাধান চায় না।

উল্লেখ্য, তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে এএফপি বলছে, সেনাদের একাংশের বিদ্রোহে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৯০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ হাজার ১৫৪ জন। আটক করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে। আত্মসমর্পণ করেছেন ২০০ সেনাসদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান।

 

পাঠকের মতামত: