ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান ইনুর গুলিবিদ্ধ লাশ রামু থেকে উদ্ধার

Chakaria  Pictuer 15-07-16মিজবাউল হক, চকরিয়া:

চকরিয়া উপজেলার তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. ইউনুছ প্রকাশ ইনু বাহিনীর প্রধান ইনুর (৪৭) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে রামু থানার পুলিশ ঈদগাও ও ঈদগড় সড়কের পূন্য গ্রামের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে প্রথমে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশটি ইনু’র বলে নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী জুবাইদা বেগম। এব্যাপারে রামু থানায় একটি হত্যা মামলা ও একটি অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। লাশের ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত ইনু ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলির বিল মোহাম্মদ হোসের ছেলে ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বলে জানান স্থানীয়রা।

জেলা সদর ও হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ১৫জুলাই শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সামনে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন হাসপাতালে কর্মচারীরা। তবে কার লাশ, তাকে কে বা কারা মেরেছে তা কেউ বলতে পারেনি। অবশেষে এক সংবাদকর্মীর ফেইস বুকে দেখে লাশটি চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের অধিবাসী মোহাম্মদ ইউনুছ প্রকাশ ইনু বলে নিশ্চিত করেছেন স্ত্রী জুবাইদা বেগম। সে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকার মোঃ হোসেনের ছেলে।

ইনুর স্ত্রী জুবাইদা বেগম বেগম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় তার নিজ গ্রাম ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলিরবিল এলাকা থেকে সাদা পোশাকদারী একদল লোক মাইক্রোবাসে করে মোহাম্মদ ইউনুছ প্রকাশ ইনুকে তুলে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জুবাইদা আরো জানান, সন্ধ্যায় একটি কাল নোহা গাড়ি প্রবেশ করে। একদল লোক পাগলিরবিল গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে ইনুকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তিতে তিনি সহ তার স্বজনরা চকরিয়া থানায় যোগাযোগ করা হলে এব্যাপারে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে বলে জানান পুলিশ।

এব্যাপারে রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, থানার এসআই আবুল খায়ের ঈদগা ও ঈদগড় এলাকায় ডিউটি করার সময় সড়কের পাশে মূমুর্ষ অবস্থায় একব্যক্তির দেখতে পায়। ওই সময় তাকে উদ্ধার করে রাম হাসপাতাল পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন থানায় ম্যাজেস পাঠিয়ে তার পরিচয় জানতে পারি চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইনু বাহিনীর প্রধান ইনু। এসময় দেশীয় তৈরী একটি একনলা বন্দুক উদ্ধারের কথা জানান।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল হোসেন জানান; নিহত ইনু চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক।

এলাকাবাসি জানায়; নিহত ইনু ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে যুবদল নেতা হিসাবে দায়ীত্বপালন করেন। পরে স্বার্থন্বেষী আওয়ামীলীগ নেতা তাকে নিজেদের স্বার্থে স্থানীয় আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন কমিটিতে যুক্ত করে নেন। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসিম উদ্দিন জানান, ওই ইনু’র নেতৃত্বে ডুলাহাজার বনবিট, খুটাখালী বনবিট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বনজ সম্পদ ১০বছর আগেই উজাড় করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বহু বন মামলা বিচারাধীন আছে। ইনু ১৪বছর জেল কেটে গত বছর জেল থেকে বের হয়েছে। এরপর থেকে তিনি তাবলীগ জামাতের হয়ে এলাকায় কাজ করতেন।

এব্যাপারে চকরিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন তাকে কে তুলে নিয়েছে তা আমরা জানিনা। তবে তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও বন আইনে ১৮টি মামলা আছে। গত ১০ জুলাই ডুলাহাজারা থেকে কবির হোসেনের ছেলে জিয়াবুল, রমজান আলীর ছেলে মোঃ জয়নাল আবেদীন ও মিলন মুন্সির ছেলে হেলাল উদ্দিনকে তার নেতৃত্বে অপহরণ করা হয়েছিল। পুলিশের রাত ব্যাপী অভিযানে টিকতে না পেরে পরের দিন তাদের ছেড়েও হয়।

এদিকে চকরিয়া সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই ডাকাত দলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত সর্দার ইউনুস নিহত হয়। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, ইউনুছ একজন পেশাদার ডাকাত। তার নামে ইনু বাহিনী একটি ডাকাত দলও রংমহল এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় বলে জানান। ওই বাহিনীতে ২০-২৫জনের সশস্ত্র সদস্য রয়েছে।

তাদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ভূমিদস্যু নানা অপরাধ সংগঠিত করে আসছিলো। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানা ও সদর থানায় হত্যা, ডাকাতি ও অপহরণ সহ বিভিন্ন অপরাদের প্রায় ১৮টি মামলা রয়েছে। ##

পাঠকের মতামত: