ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার বেতারের বার্তা নিয়ন্ত্রকের লাগামহীন দুর্নীতি

বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক হেমায়েত আকবর টিপুর বিরুদ্ধে সরকারী সম্পদের অপব্যবহার সহ আরো কয়েকটি নতুন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, বেতার কেন্দ্রটি কে.পি.আই (বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা) হওয়ায় বেতার ভবনের ৩জন অফিস প্রধানের অফিস কক্ষে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে সিসি ক্যামেরার ৩টি মনিটর স্থাপন করা হয়েছে ৬ বছর আগে। সদর দপ্তর থেকে একাধিকবার অফিস আদেশে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল “সিসি ক্যামেরার মনিটরে অন্য কোন সফটওয়ার ব্যবহার বা কম্পিউটারের কোন কাজ করা যাবে না।” কিন্তু দুর্নীতিবাজ বার্তা নিয়ন্ত্রক হেমায়েত আকবর টিপু সরকারের নিরাপত্তার আদেশটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ৪ বছর আগে বেতার কর্মচারীদের সামনেই মনিটর থেকে সিসি ক্যামেরার তার ছিঁড়ে ফেলে সেই মনিটরে একটি সিপিইউ সংযোগ দিয়ে দিন-রাত তাঁর ব্যক্তিগত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার মনিটরে নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের পরিবর্তে ঢাকা শহরের একটি কেজি স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বেতার কর্মচারীরা জানান, ওই মনিটরে হেমায়েত আকবর টিপুর একটি ব্যক্তিগত কেজি স্কুলের প্রশ্নপত্র তৈরী, সিলেবাস তৈরী, বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের সাজেশন,মার্কশীট, রেজাল্টসীট, হাজিরা খাতা তৈরীর কার্যক্রম চলে আসছে। অথচ এই কম্পিউটার মনিটরে সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ছাড়া সংবাদ সংক্রান্ত কাজ পর্যন্ত না করতে সদর দপ্তরের নির্দেশ রয়েছে। অবিলম্বে বার্তা নিয়ন্ত্রকের অফিস কক্ষের সিপিইউ এবং কম্পিউটার মনিটরটি জব্দ করে গত ৪ বছরে এই সরকারী যন্ত্রপাতিগুলোতে কি কি কাজ করা হয়েছে তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখার জন্য সচেতন মহল তথ্য মন্ত্রনালয় ও বেতারের মহাপরিচালকের নিকট আবেদন জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, মনিটর থেকে তার ছিঁড়ার সময় কর্মচারীরা নিরাপত্তার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে বার্তা নিয়ন্ত্রক টিপু তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেন, “আমি বিসিএস অফিসার, আমরা সরকারী অফিসে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি, কোন সমস্যা হবে না”। সরকারী সিসি ক্যামেরার মনিটরে ব্যক্তিগত স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি তদন্তের দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এছাড়া বার্তা নিয়ন্ত্রকের অফিসের সরকারী টেলিফোনটি সরাদিন এসিএন টিপু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বার্তা বিভাগের সংবাদ কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের কাজে টেলিফোনটি ব্যবহার করতে পারেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সরকারী টেলিফোন দিয়েও স্কুলের কাজ সহ টিপুর ব্যক্তিগত কাজ করা হয় বলে জানা গেছে। এই ফোনের কললিষ্ট বের করে কয়টি কল সরকারী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে তা তদন্তের দাবী উঠেছে।
ইতিপূর্বে বার্তা নিয়ন্ত্রক টিপুর অর্থ আত্মসাত সহ ব্যাপক দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এখন তার বিরুদ্ধে নিত্য নতুন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, হাবিব উল্লাহ নামে একজন অনিয়মিত কর্মচারী চলতি বছরের এপ্রিল মাসে টিপুর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে চাকুরী ছেড়ে দেন। চাকুরী ছেড়ে দেয়ার সময় টিপু তার কাছ থেকে ৪ মসের বেতন ভাতার বিল ফরমে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে নেন। এর পর থেকে তিনি এপ্রিল মাস থেকে হাবিব উল্লাহর নামে প্রতিমাসে ৫হাজার ১০০ টাকা হারে সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাত করে যাচ্ছেন। আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, সাকিব নামে একজন অনিয়মিত কর্মচারীকে সম্প্রতি নিয়োগ দিয়ে তার নামে ৫ হাজার টাকা ট্রেজারী থেকে উত্তোলন করে সাকিবকে মাত্র ৩ হাজার টাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন দুর্নীতিবাজ টিপু।
অথচ এসব অভিযোগ বার্তা নিয়ন্ত্রক সবসময় অস্বীকার করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত কোন তদন্ত না হওয়ায় টিপুর দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। বার্তা নিয়ন্ত্রক টিপুর গ্রাস থেকে কক্সবাজার বেতারকে রক্ষা করার জন্য সচেতন মহল নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিটক দাবী জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: