ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় প্রকাশ্যে বনভূমি দখল নিয়ে দফায় দফায় গোলাগুলি

songarsচকরিয়ায় প্রভাবশালীদের আসকরায় প্রকাশ্যে বনভূমি দখল করে নিচ্ছে জবর দখলকারীরা। বনভূমি দখল করতে গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দুইদিন ধরে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটছে। সোমবার ও মঙ্গলবার উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী বনবিটের উচিতার বিল এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা চলে আসছে। পুলিশ ও বনকর্মীরা জবর দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে গিয়েও অসহায়ের মতো ফিরে গেছে। এতে এলাকাবাসিদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। বনবিভাগ বলছে, এখানে জবর দখলকারীদের রুখে দিতে না পারলে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসি জানায়, ২০১২ সালে এখানকার ৯০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের আগর বাগারে লক্ষাধিক গাছ সন্ত্রাসীরা কেটে নিয়ে গেছে। এখন তারা ওই উজাড় হয়ে যাওয়া ৯১২.৮৯ একর বনভূমি ও প্রায় ২০ একর ধানি জমি জবর দখলের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ কারণেই দুই পক্ষের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
এলাকাবাসি জানায়; সোমবার বেলা ২টার দিকে দুই সন্ত্রাসী দলের মধ্যে অন্তত শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। সন্ত্রাসী দলগুলোর মধ্যে অন্তত শতাধিক লোক রয়েছে। গোলাগুলির সময় এলাকাবাসিদের মধ্যে অতংকের সৃষ্টি হয়। তারা তখন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ও বনকর্মী ঘটনাস্থলে গেলেও তাদের উপস্থিতিতে আবার গোলাগুলির ঘটনা হয়। বৃষ্টির মতো গোলাগুলি শুরু হলে পুলিশ ও বনকর্মীরা পিছু হটে যায়। পরের দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও দ্বিতীয় দিন ওই দুই সন্ত্রাসীদের দলের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। কিন্তু পুলিশ বনকর্মীদের খবর দেয়া হলে তারা কেউই ঘটনাস্থলে যেতে সাহস করেননি। এলাকাবাসিরা বলেছেন; সশস্ত্র জবর দখলকারীরা কেউই ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লোক নয়। তারা পাশের চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা, চকরিয়া পৌরসভার পালাকাটা, করিয়াঘোনা ও তার আশে পাশের লোকজন। জবর দখলকারীরা এর আগেও ওই এলাকায় কয়েকবার বনভূমি জবর করে অবৈধভাবে ঘর তৈরী করেছিল। ২০১২ সালে ফাঁসিয়াখালী বনবিটের অধীনে ২০০৮-২০০৮ ও ২০০৯-২০১০ সালের সামাজিক বনায়নের ৯০ হেক্টর আগর বাগানের লক্ষাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এখন গত দুইদিন ধরে ওই উজাড় করা বনভূমি ও বনভূমির ভেতরে বনবিভাগের প্রায় ২০ একর ধানি জমি জবর দখল করে নিতে গেলে দুই সন্ত্রাসী দলের সাথে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এ গোলাগুলির সময় কতজন লোক আহত হয়েছে তা কেউ ঠিক করে বলতে না পারলেও বেশ কিছু লোক আহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আহতরা জবর দখলকারীদের লোক হওয়ায় সংখ্যা ও নাম জানা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসিম উদ্দিন জানান, এই বন রেঞ্জের ফাঁসিয়াখালী বন বিটের উচিতার বিল এলাকায় প্রায় ৭১২ দশমিক ৮৯ একর রিজার্ভ বনভূমি নিয়ে একাধিক সন্ত্রাসী দল জবর দখল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা করে আসছে। ইতিপূর্বে কয়েকবার পুলিশ ও বনকর্মীরা যৌথ অভিযান চালিয়ে ১০৩টি অবৈধ ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। গত ২৫ জুন ফাঁসিয়াখালী বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রায় অর্ধশত অবৈধ ঘর গুড়িয়ে দেয়া হয়। সোমবার ও মঙ্গলবার আবারও সশস্ত্র একাধিক জবর দখলকারীদের দল ওই বনভূমি দখলে নিতে যায়। এসময় ওই জবর দখলকারীদের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। খবর পেয়ে আমরা পুলিশ ও বনকর্মীদের নিয়ে গিয়েও জবর দখলকারীদের রুখে দিতে পারিনি। আমরাও চলে এসেছি, পুলিশও চলে গেছে। রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান; জবর দখলকারীদের প্রভাবশালীরা প্রশ্রয় না দিলে তারা সেখানে টিকতে পারতো না। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান; সন্ত্রাসীরা বাইরের এলাকা থেকে এসে এই ইউনিয়নের রিজার্ভ বনভূমি জবর দখল করে নিচ্ছে। আমার এলাকার সাধারণ মানুষ আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই এলাকা থেকে বাইরের এলাকার এসব সন্ত্রাসীদের হটানো না গেলে এখানকার পরিবেশ আরও অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। এলাকাবাসি জানান; এখানে মুলত ২০০৮সাল থেকে বন উজাড় ও বনভূমি জবর দখল শুরু হয়। ফাঁসিয়াখালী বিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার জানান; ৭১২ একর বনভূমির ভেতরে বনবিভাগের ২০ একর ধানি জমি বন জায়গিরদারেরা চাষ করতো। ওই জমিগুলো দখলে নিতে সন্ত্রাসীরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, আমরা এ পর্যন্ত চারবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। এখানে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ও বন জায়গিরদারদের সহযোগিতায় আমরা তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু জবর দখলকারীরা সংখ্যায় শতাধিক সশস্ত্র লোক। এতে সামান্য বনকর্মী নিয়ে তাদের সাথে পেরে উঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল ইসলাম খান বলেছেন, খবর পেয়ে এস.আই আবদুল খালেকের নেতৃত্বে একটি ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। প্রয়োজনে পুলিশ আবারও যাবে। যে কোন ভাবে জবর দখলকারীদের গ্রেফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হবে। বন বিভাগের একটি সুত্র জানায়, ফাসিয়াখালী রেঞ্জের উচিতার বিল এলাকায় ৭১২.৮৯ একর বনভূমি ১৯৭৪ সালে বিএস জরিপে ভুলে খাস হয়ে যায়। এ নিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ফাঁসিয়াখালী বিট কর্মকর্তা বাদী হয়ে ২০০৮ সালে একটি রেকর্ড সংশোধনী মামলা করেন। মামলাটি( অপর ১/২০০৯) কক্সবাজার জর্জ কোর্টে বিচারাধীন আছে। ওই বনভূমি জবরদখল করার জন্যই পাশের ইউনিয়নের লোকজন বারবার গোলাগুলি ও দখল বেদখলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত: