ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের ভিতরে নানা অনিয়ম-অপকর্ম, অনিয়ম গোপন করতে পার্কে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

sapari pak মনির আহমদ, চকরিয়া:

ঈদের টানা ছুটি কাটাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে ক্রমশ বাড়ছে দর্শনার্থীর ভীড়। নবদম্পতি থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্টানের কর্মচারী, ছাত্র-শিক্ষক প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্য প্রাণীর বিচরন আর দৃষ্টি নন্দন বনাঞ্চল দেখে প্রিয় কিছু মুহুর্ত কাটাতে এখানে আসছে। কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দূর্বল ব্যবস্থাপনার কারনে একবার আসার পর ২য়বার যেন আসা না হয় সে প্রতিজ্ঞাই করছেন অনেক পর্যটক। কারন, পার্কে দর্শনার্থীদের একান্ত উৎসব মুখর পরিবেশে আঘাত হানছে একদল যুবক। পার্কের অলি গলিতে আতংক ছড়ানো মোটর সাইকেল মহড়া আর গগনভেদী আওয়াজ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সহ চুরি-ছিনতাই ও এখন নিত্যদিনের ঘটনা। পার্ক এলাকার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করছে এমন অভিযোগ নিত্যদিনের হলে ও অজ্ঞাত কারনে নিরব ভূমিকা পালন করছে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিগত ঈদের পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক  মাতিয়ে তুলেছে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের ছাত্র-শিক্ষক সহ পর্যটকরা। রং বেরঙ্গের হরিন ছানা, দেশী-বিদেশী পশু-পাখি ও ময়ুরের নাচ ,কালো ভাল্লুক,সিংহ,বাঘ ও জলহস্থি সহ নানা অচেনা পশুর উম্মুক্ত বিচরন দেখে মুগ্ধ ভ্রমন পিপাসুরা। তবে নানা অনিয়ম হচ্ছে এমন অভিযোগ করছেন দর্শনার্থীরা। ঢাকা থেকে আগত এক ভদ্র মহিলা জানান, পার্কের সরু রাস্তার অলি গলিতে ৬/৭ জন যুবক দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে দর্শনার্থীদের বিব্রত করছেন। তাদের রাস্তা দিতে গিয়ে হুমড়ী খেয়ে পড়েছেন আনেক দশনার্থী। পার্কের সরকারী গাড়ী থাকলে ও ড্রাইভার না থাকায় তাদেরকে পায়ে হেটে চলতে হচ্ছে। অপরদিকে টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট গাড়ী ঢোকাচ্ছেন গেট ইজারদারদের অনুমতিতে। টানা ছুটি কাটাতে  এখানে প্রতিদিন প্রাইভেট গাড়ী নিয়ে আসছেন লক্ষাধিক পর্যটক।্ প্রাইভেট কারের আরোহী ভদ্রলোক জানালেন, নাছির নামক এক গেট ইজারাদার তাদের ঢোকার অনুমতি দিয়েছে। পার্কের ভিতরে নিরাপত্তা রক্ষার দায়ীত্বে নিয়োজিত কর্মচারীরা কেউ রয়েছে পানিয় বিক্রিতে, কেউ হাতির উপর চড়িয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করছেন টাকা। পার্কের কর্মচারীরা অর্পিত দায়ীত্ব পালন না করে আভ্যন্তরীন রাস্তার মোড়ে ও দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করছে নানা রকম বৈধ-অবৈধ পানিয় ও খাদ্য। পার্ক এলাকার এক ব্যক্তি জানান, মটর সাইকেল আরোহীদের সাথে রয়েছে টুকাই কানেকশন। কে কোথায় আছে, কাকে কিভাবে ধরলে টাকা পাবে সে সিদ্ধান্ত,দেয় মোটর সাইকেল আরোহীরা। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী টুকাইরা ঝাপটা মারে আর পর্যটকদের সর্বস্ব খুইয়ে নিচ্ছে। বান্ধবীদের নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরাই বিশেষ করে ছিনতাইয়ের স্বীকার হয় এদের হাতে। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনা ও দায়ীত্বহীনতার কারনে পার্ক অভ্যন্তরে চলছে নানা অপকর্ম। সচেতন মহলের প্রশ্ন? পার্কের ভিতরে ওরা কারা?

এ ব্যাপারে পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরুল হুদার সাথে একাধিক বার কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। অবশেষে মোবাইল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, পার্কের ভিতরে সাংবাদিক ঢুকতে ডিএফওর লিখিত অনুমতি লাগবে। তিনি সাংবাদিকদের পার্কে ঢুকার অনুমতি দিতে পারেন না। লিখিত বিভাগীয় অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকের সাথে তিনি কথা বলতে পারেন না বলে জবাব দেন।

একটি সুত্র জানায়, বিগত অর্থ বছরে পার্কের বিভিন্ন পশুপাখির খাচা তৈরী ও মেরামত, চুনকাম এবং রাস্তা ঘাটের বিভিন্ন উন্নয়নে অর্ধশত কোটি টাকার কাজ হয়। প্রতিটি কাজের সিকি পরিমান কাজ ও না করে ওই রেঞ্জারের সহযোগীতায় পুরো বিল তুলে নেয় ঠিকাদররা। অসম্পুর্ন কাজের ফাইনাল বিল নেয়ার সহযোগীতা ঠিকাদারের কাছ থেকে ৫০ফিফটি পারসন সুযোগ নিয়েছেন ওই রেঞ্জার। অপরদিকে পার্কের অভ্যন্তরে কর্মচারীদের কাজ থেকে বিরত রেখে ফেরি করে বিভিন্ন অখাদ্য-কুখাদ্য থেকে ভাগ পান অর্ধেক। তার টুকাই কানেকশন ও অপকর্মের কথা স্বীকার করার ভয়ে রেঞ্জার নুরুল হুদা এখন সাংবাদিক দেখলে ভয় পান।

পাঠকের মতামত: