ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সাজানো হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ।। টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে বান্দরবানে

11এনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান ।।

সারাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের গুপ্ত হামলা উপেক্ষা করে এবারও পবিত্র ঈদ উল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে পর্যটন শহর বান্দরবানে। পার্বত্য জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে ছোটবড় শতাধিক হোটেল,মোটেল ও গেস্ট হাউস, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্রামাগারগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে ভ্রমণপিপাসুদের পক্ষ থেকে। জেলা প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপত্তা ও সমূহ সুযোগ সুবিধা দিতে।

পবিত্র রমজান মাস শেষে পবিত্র ঈদ উল ফিতর আসছে। ৯দিনের টানা সরকারি ছুটি। জেলা শহর, রুমা ও থানছি উপজেলার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস ইতিমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বর্ষার সূচনাতেও সারাদেশসহ বিদেশি বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা। কারণ এবার রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই সারাদেশ,খানিকটা শান্ত এবং মানুষের ক্ষোভও নেই।

গত দুই বছরের মধ্যে জেলা শহরে ১০টি নতুন আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস গড়ে তোলা হয়ছে বেসরকারি উদ্যোগে। আধুনিক মডেল ও কারুকার্যে নির্মিত হয়েছে বিলাসবহুল এসব হোটেল। সাধারণ হোটেলের দুইবেড বিশিষ্ট কক্ষ ৫০০ থেকে ১হাজার টাকা এবং উন্নতমানের হোটেলগুলোতে দুইবেড বিশিষ্ট কক্ষ ভাড়া ১২০০ থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত। মাঝারি ও উন্নতমানের হোটেলগুলোতেই পর্যটকরা আগাম বুকিং দিয়েছেন বেশি।

এবার ৯দিনের টানা ছুটির সুবাদে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটবে বান্দরবানে,এখনও পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় ঈদের আগে থেকেই পর্যটকদের আগমন ঘটবে। জেলা শহরের অদুরে মেঘলা পর্যটন হোটেলের পরিচালক হুমায়ুন কবির,জেলা শহরের প্রেসক্লাবস্থ হোটেল গ্রীণহিলের মালিক সিরাজুল ইসলাম,নতুন আবাসিক হোটেল পালকি’র পরিচালক আলাউদ্দিন শাহরিয়ার এবং মো.শাফায়েত হোসেন জানিয়েছেন,তাদের হোটেলের কক্ষগুলো ঈদ উল ফিতরের পরদিন থেকে টানা ১৫দিন পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।

জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে প্রতিদিনই কোটি টাকার লেনদেন হয় পর্যটন খাতে। এতে হোটেল,গেষ্ট হাউস ও মোটেল ও খাবার হোটেলসহ পরিবহন সেক্টরে প্রতিদিনই কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়। তবে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে পর্যটকদের আগাগোনা থাকে না, এ কারণে প্রতিদিনই আর্থিকভাবে লোকসান গুণতে হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা হোটেল ও পরিবহন মালিকদের।

পর্যটন সেক্টরের উদ্যোক্তারা বলেন, জেলায় প্রতিমৌসুমে বিশেষ করে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত (পিকআওয়ার) গড়ে ১০ লাখ দেশিবিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে।

এ সময় কয়েক হাজার লোক অস্থায়ী মজুরি সুবিধাও পায়। জেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বুনুনকৃত রকমারী পোশাক,চাদর,গামছা,কম্বল এবং শীতবস্ত্র ক্রয়ে বেশি আগ্রহী হন পর্যটকরা। বিকিকিনি বাড়ে এবং আর্থিক ভাবে বেশি লাভবান হন স্থানীয়রা।

জেলা শহর এবং জেলার নানাস্থানে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে সাজানো হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও, জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

পার্বত্য জেলা শহর এবং আশেপাশের প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো হচ্ছে,মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র,আধুনিক শৈলীসমৃদ্ধ ও স্থাপত্যে অবকাঠামোয় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র,সোনালী রংয়ের বুদ্ধ ধাতু মন্দির,রামজাদি মন্দির,সেনানিবাসের শাপলা চত্বর,২টি পুরানো রাজবাড়ি,শৈলপ্রপাত,মেঘলায় স্থাপিত ক্যাবলকার ও ২টি ঝুলন্ত সেতু এবং মিনি চিড়িয়াখান। তাছাড়াও জেলার রশুমা উপজেলায় রিজুক ঝর্ণা,বপাহাড়ের ভাজে ভাজে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পাড়া/গ্রাম,কিংবদন্ডির বগালেক,ক্যক্রাডং,তাজিংডং,রামজু পাহাড়,সেনাবাহিনী পরিচালিত আধুনিক স্থাপত্যের নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র,থানছির উজানে সাংগু নদীর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রাজাপাথর, রেমাক্রি ঝর্ণা ও নাফাকুম পর্যটন কেন্দ্র বিশেষ কারুকার্যে সাজানো হয়েছে। প্রতিবছরের মত এবারও ঈদ উল ফিতরের টানাছুটি ও বন্ধে অবকাশ সময় কাটাতে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক জেলা শহরের আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে উঠেছে এবং অগ্রিম বুকিংও দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক এবং পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মিডিয়াকর্মীদের জানান, ইদের টানা বন্ধ ও ছুটিতে এবারও এ জেলায় কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটতে পারে। পর্যটকদের জন্য বিশেষ ট্যুর গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যবস্থায় যাতে করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়,পরিবহনের জন্যে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়া হয় এবং আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলগুলোতে ন্যায্য মুল্য বা ভাড়া আদায় করা হয় সেই সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: