ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

তিনজন হিজড়ার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ- জেলা প্রশাসক কক্সবাজারের ব্যতিক্রমি উদ্যোগ

Hijra-30-06-16‡cÖm weÁwß ::

২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। হিজড়াদের জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও সামাজিক সগঠন কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের ফলে এ অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২৯ জুন ২০১৬ খ্রিঃ তারিখ জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উদ্যোগে হিজড়াদের জীবন মান উন্নয়ন সংক্রান্ত এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠিত সেমিনারে কক্সবাজার জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ আলী হোসেন এ জেলার হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিনজন হিজড়া মো: এ্যানি, রহিম উল্লাহ ও মো: আবদুল্লাহ’র উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।তাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ থেকে শুরু করে চাকুরি পাওয়া পর্যন্ত সকল পরামর্শ, আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের তিনটি এনজিও ও ২ টি সামাজিক সংগঠন কে দায়িত্বভার অর্পন করা হয়।

মোঃ এ্যানি কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে আইনপেশায় নিয়োজিত করার স্বপ্ন দেখেন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ভার নিয়েছেন জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার।ম্যানেজার, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, রুমালিয়ার ছড়া, কক্সবাজার কে মোঃ এ্যানির বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষার সকল দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তার ভর্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

রহিম উল্লাহ কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার খুরুশকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্র । উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক বড় হবার স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়া ছিল কষ্টকর। জেলা প্রশাসক,কক্সবাজার এগিয়ে এসেছেন রহিম উল্লাহ্‌র স্বপ্ন পূরণে।তার উচ্চ শিক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন ম্যানেজার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাহার ছড়া, কক্সবাজারকে।তাকে পড়াশোনার বিষয়ে সকল সহযোগিতা, পরামর্শ ও মেনটরিং করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দেন ম্যানেজার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাহার ছড়া, কক্সবাজার।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবিষয়েসার্বিক সহযোগিতা ও নিয়মিত নজরদারি করা হবে।

মো: আবদুল্লাহ কক্সবাজার সরকারি কলেজে বি.এস.এস (পাস) কোর্সে অধ্যায়নরত। পড়াশোনা শেষে সরকারি কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার এই আকাশচুম্বী স্বপ্নকে বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন জেলা প্রসাশক,কক্সবাজার। তাকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সকল সহযোগিতা ও মেনটরিং করার বিষয়ে দায়িত্ব প্রদান করা হয় ইঞ্জি. কে. পল, প্রধান পরিচালক, সমাজসেবা আইসিটি এন্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কক্সবাজার কে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ থেকে চাকুরি পাওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সকল আর্থিক সাহায্য ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন বলে জানান ইঞ্জি. কে. পল ।

সমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসনের এই প্রশংসনীয় ভূমিকাকে সেমিনারে উপস্থিত সকলে স্বাগত জানান। এছাড়াও এই জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে এনজিও প্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করা ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সকলকে ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার। সরকার নানা মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও এবং বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের উদ্যোগই পারে সত্যিকার অর্থে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে।

 

পাঠকের মতামত: