ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

mamla.চকরিয়া প্রতিনিধি ঃ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে হয়রাণি করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে বনবিভাগের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, থানায় মামলা রুজুর পর চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে আসামীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। হয়রাণিমূলক এই মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে নিরীহ এসব পরিবারে। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে রমজানের এই দিনে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

অভিযোগে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বিটের কাকারা ইউনিয়নের নলবিলা মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকা থেকে গত ২২ জুন রাতে পৌরসভার পালাকাটা ও মৌলভীর কুম বাজার এলাকার একদল বনদুস্য সেগুন গাছ কেটে পাচার করছিল। খবর পেয়ে বনবিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বনদুস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বনবিভাগের কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় নলবিলা বিট কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া বাদী হয়ে ২৫ জুন থানায় একটি মামলা রুজু করে। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরো ২০ জনকে।

ভুক্তভোগী মামলার আসামীদের মধ্যে ঘটনাস্থলের কাছের বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের নয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার। তন্মধ্যে ফাইতংয়ের নয়াপাড়ার একই পরিবারের তিন সদস্যও রয়েছে।

হয়রাণিমূলক মামলার আসামী ভুক্তভোগী ফাইতং ইউনিয়নের নয়াপাড়ার আবুল হোছাইনের পুত্র মো. মিজান অভিযোগ করেছেন, ঘটনার দিন তিনি বানিয়ারছড়া এলাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মানুষের জটলা দেখে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছিলেন বনবিভাগের কর্মী ও বনদুস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাটি। ইত্যবসরে কেটে ফেলা সেগুন কাঠের টুকরোসহ একটি গাড়ি ফাইতং পুলিশ ফাঁড়িতে আটকালে গাড়ির মালিক ফোন করে মিজানকে জানান, তার গাড়িটি পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রেখেছে, একটু খবর নেন। এর পর সেই গাড়ি দেখতে গিয়ে ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের সঙ্গে গাড়ির বিষয়ে কথা বলে জানতে পারেন চোরাই কাঠসহ গাড়িটি জব্দ করেছেন তারা। এই কথা শুনে মিজান ফাঁড়ি থেকে চলে আসেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত মামলায় তাকেও প্রধান আসামী করে দেন বিট কর্মকর্তা।

মিজান আরো অভিযোগ করেছেন, তাকেসহ পরিবারের তিন সদস্যকে এই মামলায় আসামী করে দেওয়া হয়েছে। এই মামলা দায়েরের আগে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছিলেন বিট কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া। টাকা না পেয়ে তাদেরকে মামলায় আসামী করে দিয়েছেন। এছাড়াও মামলায় বেশি সংখ্যক অজ্ঞাত আসামী করায় এলাকার মানুষের মাঝে এখন গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে অজ্ঞাত ইতিমধ্যে ৫-৬ জনের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নলবিলা বিট কাম চেক স্টেশন কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া দাবি করেন, যারাই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করেই মামলা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ঘটনাস্থল ফাইতংয়ের কাছে সেহেতু ওই এলাকার লোকরা জড়িত ছিল বিধায় তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। মামলা রুজুর ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়ার ঘটনাটি মিথ্যা।

এ ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘নলবিলা বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কারো কাছ থেকে যদি বিট কর্মকর্তা টাকা চাইতে যান তাহলে বেঁধে রেখে আমাকে খবর দিলে ভাল হবে। মামলায় কোন নিরীহ মানুষকে জড়ালে তাদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য আমি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলবো।’ ##

পাঠকের মতামত: