ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

চকরিয়া পেকুয়ার শ্রমজীবিরা বেকারঃ কাজের বিনিময়ে খাদ্য নিচ্ছে এক্সকেভেটর

জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া :::Pic, Chakaria 26.06 2016(2)
চকরিয়া ও পেকুয়ায় শ্রমজীবি মানুষের হাতের কাজ কেড়ে নিয়েছে এক্সকেভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র)। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ দেয়া কাজের বিনিময়ে টাকা, খাদ্য নিয়ে যাচ্ছে এই এক্সকেভেটর। এতে দুই উপজেলায় সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০ হাজার শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কারে গরীব মানুষদের হাতে কাজ ও খাদ্য দেয়ার সরকারের আসল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাচ্ছে। এক্সকেভেটর দিয়ে কাজ করে ঠিকই শ্রমজীবিদের নাম ঠিকানা ব্যবহার ও ভূয়া দস্তখত বানিয়ে মাষ্টার রোল তৈরীর মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্সকেভেটর দিয়ে এভাবে কাজ করে অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা স্বীকারও করেছেন। তবে তারা বলেছেন এক্সকেভেটর দিয়ে কাজ করা হলে কম সময়ে ও কম খরচে করা যায়।
খাল খনন, নদীতে লোপকাটিং, বেড়িবাঁধ নির্মাণে মাটির সম্পূর্ণ কাজগুলো করা হয়েছে এক্সকেভেটর দিয়ে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণেও এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। এলাকাবাসি জানায়; এসব প্রকল্পগুলোতে নামে মাত্র কাজ করে সংশ্লিষ্টরা সিংহভাগ টাকা আত্মসাত করে নিয়েছে।
চকরিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য দুই পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কাবিখা’র প্রায় ২শত ২৪ মেঃ টন চাল, টিআর’র প্রায় ১শত ৮২ মেঃ টন চাল বরাদ্দের কাজগুলো শেষ দেখানো হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে পাওয়া কাবিটা’র প্রায় ৫৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, কাবিখা’র প্রায় ৩২লাখ ৮৪ হাজার টাকা ও কাবিখা’র (সাধারণ) প্রায় ১১২ মেঃ টন গম বরাদ্দের কাজগুলোও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। একই অর্থ বছরে ৫টি খাল খনন, মাতামুহুরী নদীতে ১টি লোপকাটিং ও ২টি বেড়িবাঁধ নির্মণের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। পেকুয়া উপজেলায়ও চলতি অর্থ বছরের ১ম, ২য় পর্যায়ের টিআর কাবিখা ও কাবিটার ৯৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ২১৬ টন খাদ্য শষ্য ও কাবিটার নগদ ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৭ টাকার কাজ হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, কাজের বিনিময়ে টাকা ও খাদ্য কর্মসূচী’র কাজগুলো এলাকার শ্রমজীবি মানুষদের দিয়ে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। মাটি কাটার কাজগুলোর বেশীরভাগই করা হয়েছে এক্সকেভেটর দিয়ে। গত অর্থ বছরও এই দুই উপজেলায় মাটির কাটার কাজগুলো শ্রমজীবি মানুষদের দিয়েই করা হতো। কিন্তু এ বছর সংশ্লিষ্টরা এক্সকেভেটর মালিকদের সাথে যোগসাজস করে শ্রমজীবি মানুষের হাতের কাজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোতে শ্রমিক দিয়ে এক মুঠো মাটিও কাটা হয়নি। খাল খনন, নদীতে লোপকাটিং, বেড়িবাঁধ নির্মাণে মাটির সম্পূর্ণ কাজগুলো করা হয়েছে এক্সকেভেটর দিয়ে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণেও এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হয়েছে।
এলাকাবাসি জানায়; এসব প্রকল্পগুলোতে নামে মাত্র কাজ করে সংশ্লিষ্টরা সিংহভাগ টাকা আত্মসাত করে নিয়েছে। পেকুয়া উপজেলায়ও এ ধরণের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, চকরিয়ায় প্রায় ১৩ হাজার ও পেকুয়ায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমজীবি মানুষ এসব খাতের প্রকল্প গুলোতে মাটি কাটার কাজ করে অভাবের সময়ে সংসারের খায়খরচ যোগান দিতো। এদের বেশীরভাগেরই সরকারী এসব প্রকল্পগুলোতে কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু এ বছর এসব প্রকল্প গুলোতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মাটি কাটার কাজে এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। অপরদিকে চকরিয়া ও পেকুয়ায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের অধীনে বেড়িবাঁধের ব্যাপক কাজ চলছে। এখানেও মাটি কাটার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এক্সকেভেটর। এক্সকেভেটর এনে এভাবে গরীব মানুষদের মাটি কাটার কাজ থেকে তাঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেছেন; মাটি কাটার কাজে এক্সকেভেটর ব্যবহার করার কারণে শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। লক্ষ্যারচর বাইশ্যার ছড়া খাল আমার পাশে। এখানে খনন কাজে কোন শ্রমজীবি মানুষ দিয়ে কাজ করানো হয়নি। সরকার কাজের বিনিময়ে টাকা, খাদ্য কর্মসূচী প্রনয়ন করে গরীব মানুষের হাতে কাজ ও খাদ্য তুলে দিয়েছিল। কিন্তু এখানে একটি স্বার্থান্বেষী মহল, সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প কমিটির লোকজন গরীব মানুষের কাজ এক্সকেভেটর দিয়ে দিয়েছেন। অথচ শ্রমজীবিদের নামে ভূয়া মাস্টার রোল তৈরী করা হচ্ছে। পুঁজির মালিকেরা শেষ পর্যন্ত গ্রামের গরীব মানুষের মাটি কাটার কাজটিও কেড়ে নিয়ে মুনাফা লুটছে। কাজের বিনিমযে টাকা ও খাদ্য সরকারের জনহিতকর কাজ। এটি এই জনহিতকর কর্মসূচীর বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্ত। তিনি এ ব্যাপারে গরীব মানুষদের নিয়ে প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবেন বলে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়; এক্সকেভেটর দিয়ে মাটির কাজ করা হলেও প্রকল্পগুলো কাজের বিনিময়ে টাকা ও খাদ্য কর্মসূচী’র অধীনে হওয়ায় এ প্রকল্পগুলোতে শ্রমজীবি মানুষের স্বাক্ষর দেখাতে হয়। এ ব্যাপারে শ্রমজীবি ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ভূয়া টিপসহি ও দস্তখত দিয়ে মাষ্টার রোল তৈরী করা হচ্ছে। এভাবে ভূয়া মাষ্টার রোল তৈরী করার জন্যও চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একজন লোককে সার্বক্ষনিক ভাবে দায়ীত্ব দিয়ে রেখেছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আহসান উল্লাহ এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ সম্পন্ন করার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি অনিয়ম হলেও করতে হচ্ছে। এক্সকেভেটর দিয়ে কাজ করলে প্রকল্পগুলোর কাজ অতি অল্প সময়ে ও কম খরচে শেষ করা যায়।

পাঠকের মতামত: