ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কাউকে না কাউকে করতেই হবে’ -কক্সবাজারে ‘অধিকার’র বিশ্ব সংহতি দিবসের আলোচনা

11নিজস্ব প্রতিবেদক :::

নির্যাতন প্রতিরোধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত সংগঠন ‘অধিকার’ আয়োজিত বিশ্ব সংহতি দিবসের আলোচনায় বক্তাগণ বলেছেন, ‘আইন শৃংখলা বাহিনী, প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিবাদ কাউকে না কাউকে করতেই হবে। প্রতিবাদ লড়াই থেকে পিছিয়ে থাকলে কারোরই মানবাধিকার রক্ষা হবে না। তবে তিন ক্যাটাগরির মানুষ যদি এক কাতারে দাঁড়াতে না পারে তাহলে দেশের আটকাবস্থায় নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির কখনোই পরিবর্তনের আশা করা যাবে না, বরং নির্যাতন দিনে দিনে আরও বাড়বে। আর সেই ক্যাটাগরির মানুষ হলেন আইনজীবী, সাংবাদিক ও পেশাজীবী।’

রোববার (২৬ জুন) কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে ওই আলোচনার আয়োজন করেছিল ‘অধিকার, কক্সবাজার’। জেলার অন্যতম সিনিয়র সাংবাদিক মমতাজ উদ্দিন বাহারীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আলম।

‘অধিকার’ কক্সবাজার জেলা সমন্বয়ক ও সাংবাদিক আনছার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত ওই আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন এডভোকেট ও রাজনীতিক আবু সিদ্দিক ওসমানী, এডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্যারিষ্টার আবুল আলা সিদ্দিকী, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মো. রেজাউর রহমান ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক হিমছড়ি সম্পাদক হাসানুর রশীদ।

প্রধান অতিথি এডভোকেট সৈয়দ আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আরেকজনের অধিকার রক্ষা করে চলাটাই মূলতঃ অধিকার। হাতে বন্দুক থাকার পরও আরেকজনের অধিকার রক্ষা করাটাই হলো অধিকার। রাস্তায় হাঁটার পথে কাউকে ল্যাং মারাটাকে অধিকার বলে না।’

তিনি বলেন, ‘অনেক কথা বলা দরকার। কিন্তু দেশে এখন বলার মতো পরিবেশ নেই।’

সভায় জানানো হয়, ২৬ জুন হলো নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস। ১৯৮৭ সালের এই দিনটিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্টুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশন কার্যকরী হওয়ার পর সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিবছর ২৬ জুনকে নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

‘অধিকার’ কক্সবাজার জেলা সমম্বয়ক আনছার হোসেন দিবসের কী-নোটে উল্লেখ করেন, অধিকার এর সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ১০১ জন মানুষ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে শুধুমাত্র নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

সভায় ‘অধিকার’ এর পক্ষ থেকে নির্যাতন বন্ধে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করা হয়। এই সুপারিশ গুলোর মধ্যে রয়েছে (১) বাংলাদেশের সংবিধান এবং নির্যাতন বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা মানতে হবে, (২) মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং নির্যাতন বন্ধে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও পৃথক তদন্তকারী প্রতিষ্টান গঠন করতে হবে, (৩) অবিলম্বে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ বাস্তবায়নসহ সবধরণের নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে, (৪) নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বহাল দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে, (৫) নির্যাতনের লক্ষ্যে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরণের সরজ্ঞামাদী আমদানি করা বন্ধ করতে হবে, (৬) বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে হবে, (৭) ২০০৩ সালে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় দেয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং (৮) নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের কর্মকান্ডে কোনভাবেই বাধা দেয়া চলবে না।

তবে সভায় বক্তাগণ প্রশ্ন তুলেন, ‘অধিকার’ যে আজ মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলছে তারা কী আসলেই অধিকার ফলাতে পারছে, নাকি রাষ্ট্রীয় চাপের মুখে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে?

বক্তারা জানতে চান, বাংলাদেশ যখন নির্যাতন বিরোধী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল সেই চুক্তিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কী ‘ইন্টারন্যাশনাল’ ছিল নাকি ‘ইন্ট্রান্যাশনাল’ ছিল।

সভায় এই বিশ্ব সংহতি দিবসে মানববন্ধন করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়।

এতে উপস্থিত থেকে মতামত দিয়ে বক্তব্য রাখেন দ্য রিপোর্ট প্রতিনিধি আবদুল্লাহ নয়ন, দৈনিক নয়াদিগন্তের কক্সবাজার প্রতিনিধি গোলাম আজম খান, কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ প্রণেতা আজাদ মনসুর, দৈনিক বাঁকখালীর ইমাম খাইর, দৈনিক যুগান্তরের বলরাম দাশ অনুপম, দৈনিক হিমছড়ির সৈয়দ আলম, ছাত্রনেতা জাহিদুল ইসলাম রিটন, দৈনিক আজকের দেশ বিদেশের আবদুল আলীম নোবেল, অনলাইন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান মানিক, এশিয়ান টিভির আরোজ ফারুক, দৈনিক আমাদের কক্সবাজারের আজিজ রাসেল, জিটিভির ওমর ফারুক হিরু, সংবাদ কর্মী রাশেদুল আরাফাত, দৈনিক ইনানীর মনিরুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপার্সন মোহাম্মদ আলম, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপার্সন মোহাম্মদ ইউনুছ, ছাত্রনেতা সাজ্জাদ হোসেন সাগর, ইনজামামুল হক, মো. আজিম উদ্দীন, মোহাম্মদ সেলিম প্রমূখ। সহযোগিতায় ছিলেন কক্সবাজার ভিশন ডটকমের প্রধান প্রতিবেদক মহিউদ্দিন মাহী।

পাঠকের মতামত: