ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় খাল খননে দুর্নীতি বেশীরভাগ টাকা লোপাট

জহিরুল ইসলাম : 01
চকরিয়ায় ‘কাজের বিনিময়ে টাকা’ কর্মসূচীর অধীনে খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেন-তেনভাবে কাজ করে কাজ সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। এ কর্মসূচীর অধীনে উপজেলায় ৫টি খাল খননে বরাদ্দ দেয়া ১ কোটি ৩১লাখ ২৮ হাজার টাকার মধ্যে বেশীরভাগ টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এতে প্রকল্প কমিটির লোকজনের সাথে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী অনেকেরই যোগসাজস রয়েছে। খনন করা খালগুলো এলাকার কোন উপকারে আসছে না। একাধিক প্রকল্পে কমিটির সভাপতি বানানো হয়েছে চৌকিদার দফদারদের। এ বছর বর্ষা মৌসুমেই খালগুলো আবারও ভরাট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যলয় সুত্রে জানা যায়; কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচীর অধীনে উপজেলার লক্ষ্যারচর বাইশ্যার ছড়া খাল খননের জন্য ২৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, মানিকপুর খাল খননের জন্য ৫৮লাখ ৩৫ হাজার টাকা, সুরাজপুর পদ্মার ডেপা খাল খননের জন্য ১৪লাখ ৫৮ হাজার টাকা, সুরাজপুর কাটাখালী খাল খননের জন্য ২৩লাখ ৪৩ হাজার টাকা, কোনাখালী শোয়ার মরা খালের জন্য ১১লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, এসব খাল খনন প্রকল্প গুলোর কাজ প্রায় ৯৫ভাগ শেষ হয়ে গেছে। এ প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী বাবুল জানান, এসব খালগুলো খননে বরাদ্দ দেয়া টাকার মধ্যে সবগুলো টাকা ছাড় করে উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সুরাজপুর খাল খননের একটি ডিও বাকী আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্যারচর বাইশ্যার ছড়া খালটিতে নামে মাত্র কাজ করা হয়েছে। এই খালটি এখনও বন্ধ। কোন পানি চলাচল করছে না। যে বিলটির পানি নিষ্কাশনের জন্য খালটি খনন করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে ওই বিলটি বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। এখনও ওই বিলের পানি রয়ে গেছে। এলাকাবাসি জানায় এই খালটিতে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার মধ্যে ৪লাখ টাকাও খরচ করা হয়নি। খালটির দুই পাড়ের কিছু অংশে সামান্য কাদা মাটি দেখা গেছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে একটু করে ঝোপজঙ্গল পরিস্কার করে খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়। এখানে শ্রমজীবি মানুষের মাধ্যমে কোন কাজ করা হয়নি। স্কেবেটর দিয়ে শ্রমজীবি মানুষের কেড়ে নেয়া হয়েছে। শ্রমজীবি মানুষের টাকা নিয়ে যাচ্ছে স্কেবেটরের মালিক। স্কেবেটর দিয়েই যেন-তেনভাবে এ খালটির খনন কাজ করা হয়েছে। কাকারা ইউনিয়নের এস.এম চরের মোঃ নুরুল আবছার জানান, এ খালটি খননে শুধু পুকুর নয়, সাগর চুরি করা হয়েছে। তিনি জানান, যে উদ্দেশ্যে খালটি খনন করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য এখানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। খনন করা খাল দিয়ে পানি চলাচল করতে না পারায় বিলের পানি বিলেই রয়ে গেছে।
সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহেদুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে তিনটি খাল খননের জন্য বরাদ্দ দেয়া বেশীরভাগ টাকা লোপাট হয়ে গেছে। মানিকপুর খাল, সুরাজপুর পদ্মার ডেপা খাল, সুরাজপুর কাটাখারী খাল নামে মাত্র খনন করে সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। এগুলো খাল নয়, ছড়া। সব ছড়াগুলো আগে থেকে ছিল। এখন ওই ছড়া খালগুলো একটু পরিস্কার করে দেয়া হয়েছে। মানিকপুর পাগলির খালটির প্রকল্প কমিটির সভাপতি সুরাজুপুর মানিকপুরের চেয়ারম্যান আজিমুল হেেকর কেরানি। তিনি এটি একটু পরিস্কার করে দিয়ে খনন সম্পন্ন দেখিয়েছে। ওই খালে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জয়নাল আবেদীন, মোজাম্মেল হোসেন, নূরুল আমিন, কপিল উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি জাঁগ দিয়ে মাছের চাষ করছে। তিনি আরো জানান; এ খালগুলো খননে যাদেরকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি হিসাবে নেয়া হয়েছে তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিজুল হকের আপনলোক ও পরিষদের দফদার হওয়ায় এলাকাবাসি তার প্রতিবাদ করতেও সাহস করছেন না। আমি এ ব্যাপারে লিখিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিথ অভিযোগ দেয়ার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। খনন করা সুরাজপুরের কাটাখালী খালেরও একই অবস্থা।

সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসি জানায়, এখানেও সব কাজগুলো করা হয়েছে স্কেবেটর দিয়ে। শ্রমজীবি কোন লোকজনকে দিয়ে মাটি কাটার কাজ করানো হয়নি। খালগুলোও কোন কাজে আসছে না। খাল খননের পুরো প্রকল্পটি ব্যর্থ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরাজপুর কাটাখালী খাল খনন প্রকল্প কমিটির সভাপতি সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের দফদার নুরুল ইসলাম বলেন; এখানে কোন অনিয়ম দূর্নীতি হয়নি, খাল খননে কোন শ্রমজীবি মানুষকে কাজে লাগানো হয়নি এ কথা ঠিক। স্কেবেটর দিয়ে খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আহসান উল্লাহ’র সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমরা একটি জায়গায় অনিয়ম করেছি। মানুষের মাধ্যমে কাজ করানোর কথা ছিল, আমরা তা করতে পারিনি। স্কেবেটর দিয়ে খনন কাজ সম্পন্ন করেছি। টাকা আত্মসাত ও খনন কাজে অনিয়মের কথা তিনি অস্বীকার করেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম বলেন, খাল খননে অনিয়ম দুর্নীতির কোন অভিযোগ আমাকে কেউ দেয়নি। লক্ষ্যারচরের বাইশ্যার ছড়া খালটির মুখ এখন বন্ধ আছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে খালটি চালু করতে একটি বসতঘর ভাঙ্গতে হবে। খুব তাঁড়াতাঁড়ি ওই খালটি খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

পাঠকের মতামত: