ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টিতেই ধ্বসে পড়েছে দেড় কোটি টাকার বাঁধ মাতামুহুরী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া : 00
বন্যা প্রতিরোধে নির্মিত বাঁধ বন্যা আসার আগেই ধ্বসে পড়েছে। নির্মাণ ত্রুটি এবং সিমেন্টের বদলে শুধু বালুর বস্তা দিয়ে নির্মাণের কারণে একদিনের সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধটি ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। এরফলে প্রায় দেড় কোটি টাকায় নির্মিত মাতামুহুরী নদী তীর রক্ষা বাঁধের পুরোটাই পানিতে বিলীনের আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।
গত বৃহষ্পতিবার কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একদিনের বৃষ্টিতেই নির্মিত বাঁধের বিশাল অংশ ধ্বসে যাওয়ার স্থান স্বচক্ষে দেখতে পান। এ ব্যাপরে তিনি দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘নির্মাণ ত্রুটির কারণে বাঁধের শেষের দিকে কিছু অংশ ধ্বসে পড়েছে। মাটি কেটে সমান করা নদী তীরের ঢালু ঠিকমতো না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’
অবশ্য এনিয়ে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ধ্বসে পড়া অংশ নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে এই প্রকল্পের অনুকূলে একটি টাকাও এখনো দেওয়া হয়নি, তাই আপনাদের চিন্তার কিছু নাই।’
জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর প্রপার কাকারা অংশের তীর রক্ষা বাঁধ (সিসি ব্লক) ধ্বসে পড়ে বিগত ২০১৫ সালের জুন মাসে। এর ফলে কাকারার সাথে চকরিয়া উপজেলার চলাচলের একমাত্র সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে সিমেন্ট কংক্রিট (সি.সি) ব্লকের বদলে সিমেন্ট মিশ্রিত বালি দিয়ে কাজ শুরু করার ঘোষণা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সেই জরুরি মেরামতের কাজ শুরু হয় দশমাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে। তীর সংরক্ষণ বাঁধে ২০ হাজারের মতো বস্তা ফেলার কথা থাকলেও সেখানে ১২ হাজারের বেশি বস্তা পাওয়া যাবে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
স্থানীয় তরুণ গোলাম রাব্বান রণি বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীর তীব্র স্রোতের কথা বিবেচনায় নিয়ে পুরো তীর রক্ষা বাঁধ নির্মিত হয়েছে (সিমেন্ট কংক্রিট) সিসি ব্লকে। বিগত বন্যায় তীব্র স্রোতের তোড়ে সেই বাঁধের শেষাংশ তলিয়ে গেছে। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিক সেই অংশে এসে সিসি ব্লকের বদলে বালুর বস্তা দিয়ে বন্যা ঠেকানোর হাস্যকর চেষ্টা করছে। আসলে পরস্পরের যোগসাজশে সরকারের পুরো টাকাটাই নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার নাটক চলছে।’
এদিকে গত বৃহষ্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ওই বাঁধ পরিদর্শন করতে আসার খবর পেয়ে তোড়জোড় করে প্রকল্পের ঠিকাদার চকরিয়া ডেভলপমেন্ট সোসাইটির কর্ণধার ফরিদুল আলম সেখানে গিয়ে ছেঁড়া বালুর বস্তাগুলো খুঁজে খুঁজে সেখানে নতুন বস্তা বসিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে এই ধরনের বিপুল পরিমান বস্তা রয়েছে। সেগুলোর কী হবে তার কোন নির্দেশনা দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীও ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বস্তায় বালি ও সিমেন্ট মিশ্রন যথাক্রমে ৮ঃ১। ফলে কোন কোন স্থানে হয়তো কম পড়েছে তাই বস্তা ছিঁড়ে গেছে।’
সিমেন্ট মিশ্রন ছাড়াই বালুর বস্তা ফেলা এবং এরইমধ্যে বাঁধ ধ্বসে পড়ায় এলাকাবাসী চরমভাবে ক্ষুদ্ধ। তারা বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বিষয়গুলো তো পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দেখভাল ও নজরদারি করার কথা। আগামী উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এই বিষয়টি আমি তুলে ধরবো।’
তিনি বলেন, ‘সামনে বন্যা, আর বন্যা আসলেই সব দায়ভার তো নিতে হয় আমাদেরকে। সুতারাং সরকারের এতগুলো টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত আমাদেরকেই করতে হবে।’
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এই বালির বস্তা দিয়ে আর যাই হোক বন্যা ঠেকানো যাবে না। ফলে বর্ষা মৌসুমের আগেই বন্যা থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচাতে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলায় যতগুলো কাজ করেছে সবগুলোতেই এই ধরনের চরম অনিয়ম হয়েছে। ফলে জোয়ার, সামান্য বৃষ্টি ও ছোট বন্যায় এগুলো তলিয়ে যায়। আর পুরো চাপটাই পড়ে উপজেলা প্রশাসনের ওপর।

পাঠকের মতামত: