ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফাইতংয়ে রাতের আঁধারে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের তান্ডব, কুপিয়ে দুটি বসতবাড়ি তছনছ, মা-ছেলেসহ আহত-৩

১৫এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::

চকরিয়া উপজেলার নিকটবর্তী লামার ফাইতং ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রামে রাতের আঁধারে অস্ত্রধারী ভাড়াটে দুর্বৃত্তরা তান্ডব চালিয়ে দুটি বসতবাড়ি কুপিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। ওইসময় তাদের মারধর ও ধারালো কিরিচের আঘাতে মহিলাসহ আক্রান্ত পরিবারের তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় দৃর্বৃত্তরা দুটি বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে বাহিরে বের করে দিয়ে লুটে নিয়ে গেছে নগদ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। ভাংচুর করা হয়েছে বসতবাড়ির আসবাবপত্রসহ প্রায় মালামাল। কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে অন্তত ৩০-৩৫টি গাছ। এতে প্রায় সাড়ে ৪লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আক্রান্ত পরিবার। সোমবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি এলাকায় ঘটেছে এ হামলার ঘটনা। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ফাইতং পুলিশ ফাঁিড়র একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছলে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ফলে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

এদিকে বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের এ ঘটনায় আক্রান্ত পরিবারের গৃহকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন বাদি হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে লামা থানায় ৯জনের নাম উল্লেখ্য করে আরো ২০-২৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে চকরিয়া পৌরসভার বিমানবন্দর পাড়া গ্রামের মাহাবুবুল আলমের ছেলে মিজানুর রহমানকে।

অভিযোগে মামলার বাদি ফাইতং ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন জানান, ১৯৭৯-৮০সালে ফাইতং মৌজার ৫০নম্বর জি হোল্ডিংয়ে এক একর জায়গা তার বাবা আমির হোসেন সিকদার বন্দোবস্ত মুলে মালিক হন। সেই থেকে ওই জায়গার কিছু অংশে গাছ লাগিয়ে বাগান সৃজন করেন, অপর অংশে দুটি বসতবাড়ি নির্মাণ করে তার পরিবার শান্তিপুর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন। ইয়াছিন অভিযোগ করেছেন, কয়েকবছর আগে চকরিয়া পৌরসভার বিমানবন্দর পাড়া গ্রামের মাহাবুবুল আলম নামের একব্যক্তি তাদের জায়গার পাশে অন্য একজনের কাছ থেকে কিছু জায়গা খরিদ করেন। খরিদকৃত জায়গার অজুহাতে অভিযুক্ত মাহাবুবুল আলম ইয়াছিনের পরিবারের বেশ কিছু জায়গা জোরপুর্বক দখলের জন্য অপচেষ্টা চালাতে শুরু করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আদালতে ইতোমধ্যে একাধিক পাল্টা-পাল্টি মামলাও হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও আক্রান্ত পরিবার সদস্যরা জানান, জায়গার বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন সর্বশেষ সোমবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে হানা দিয়ে কুপিয়ে তছনছ করে দেয় ইয়াছিনদের পরিবারের দুটি বসতবাড়ি। ঘটনার সময় বাঁধা দিতে গেলে মারধরে ও কিরিচের আঘাতে জখম করা হয়েছে মহিলাসহ তিনজনকে। আহতরা হলেন, জায়গার মালিক মরহুম আমির হোসেন সিকদারের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৫২), তার ছেলে ছরওয়ার আলম (২৮) ও তার স্ত্রী জুনি আক্তার (২৫)। ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদেরকে উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আক্রান্ত পরিবারের গৃহকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময় প্রতিপক্ষ মাহাবুবুল আলম ও তার ছেলে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ২০-২৫জনের অস্ত্রধারী ভাড়াটে দৃর্বৃত্তদল অংশ নেয়। কুপিয়ে বাড়ি দুটি তছনছ ও লুটপাট করার সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা অস্ত্র উচিঁয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। এ অবস্থার কারনে জনগন প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তিনি দাবি করেন, বাড়ি দুটি ভেঙ্গে দেয়ার পর দুর্বৃত্তরা আলমিরায় রক্ষিত গরু বিক্রির নগদ ৪৫হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। এসময় বাড়ি লাগোয়া বাগান থেকে ৩০-৩৫টি গাছ কেটে সাবাড় ও আসবাবপত্র ভাংচুরের ঘটনায় তার পরিবারের প্রায় সাড়ে ৪লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।

ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন কোম্পানী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জায়গার বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতের আধাঁরে ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের জড়ো করে ঘটনাটি সংগঠিত করেছে।

পাঠকের মতামত: