ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার কাস্টমস অফিস অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব

indexআবদুর রাজ্জাক,কক্সবাজার-

কক্সবাজার কাস্টমস অফিসে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সরকারী টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা ভ্যাট আদায়যোগ্য একাধিক প্রতিষ্ঠানকে বাৎসরিক প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসাসহ সেবা খাতে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে দুর্নীতিবাজ কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তার কারণে কক্সবাজার জেলা ও উপজেলার অসংখ্য ব্যবসায়ীরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে । ভ্যাট আদায় কল্পে সেবা খাতে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা যথানিয়মে ব্যয় না করে ভূয়া বিল-ভাউচার তৈরির মাধ্যমে জায়েজ করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভ্যাট আদায় কল্পে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে প্রচার ও বিজ্ঞাপন বাবদ সরকার প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলেও পৌর শহরে মাত্র ৪Ñ৫দিন মাইকিং করে দায়িত্ব শেষ করেছেন কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট কক্সবাজারের সহকারী কমিশনার। চলতি অর্থবছরে হায়ারিং চার্জ ও পরিবহন বাবদ প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা গোপনে কথিত ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কাস্টম কর্মকর্তা মিলে ভাগবাটোয়ারা করেছে বলে তথ্য মিলেছে। বিক্রয় মূল্যের ওপর প্রতিমাসে শতকরা ৪ থেকে ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রদানকারী বহু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে বাৎসরিক প্যাকেজ ভ্যাটের (৬ হাজার টাকা) আওতায় নিয়ে আসায় সরকার প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার বিভাগীয় কাস্টম কর্মকর্তার জন্য স্থাপিত সরকারী কার্যালয়কে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতিরেকে ফ্যামিলি বাসায় রূপান্তর করার কারণে ভ্যাট প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের অনেকে কাস্টম কার্যালয়ে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে দুর্নীতিবাজ কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তা জেলার মহেশখালী উপজেলা,চকরিয়া উপজেলা,রামু উপজেলা,উখিয়া উপজেলা,পেকুয়া উপজেলা,টেকনাফ উপজেলা ও কুতুবদিয়া উপজেলার ভ্যাট আদায়যোগ্য একাধিক প্রতিষ্ঠানকে বাৎসরিক প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসাসহ সেবা খাতে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট কক্সবাজার বিভাগীয় দফতরের জন্য ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরে সরবরাহ ও সেবা খাতে সরকার প্রায় ১৩ লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার বিভাগীয় কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট দফতরে এ নিয়ম পালন না করে সহকারী কমিশনার চট্টগ্রামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গোপনে ঠিকাদার নিয়োগ দেখানো হয়। কথিত ওই ঠিকাদারের মাধ্যমে ভূয়া-বিল ভাউচার জমা করে বাজেট বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। টেন্ডার আহ্বান না করে গোপনে ঠিকাদার নিয়োগ করায় কক্সবাজারের বহু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কক্সবাজার শহর ও শহরতলীতে রড-সিমেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপার সপ, স্যানেটারি, টাইল্স ও কাপড়ের দোকানসহ অন্তত সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য বিক্রির ওপর শতকরা ১৫ থেকে সর্বনিম্ন ৪ ভাগ পর্যন্ত মাসিক ভ্যাট আদায় করার নিয়ম রয়েছে। মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় করা হলেও কিন্তু মাসিক ভ্যাটের আওতায় পড়ে, এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে মাত্র ৬ হাজার টাকায় বাৎসরিক প্যাকেজে লিপিবদ্ধ করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার পথ সুগম করে দিয়েছে অসাধু কাস্টম কর্মকর্তারা। বর্তমান দায়িত্ব পালনকারী সহকারী কমিশনার কক্সবাজারে যোগদানের পর থেকে শহর বা শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে বাস্তবে মালামাল ভর্তি বড় দোকান (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) হলেও কাস্টমের খাতাপত্রে খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। দুর্নীতিবাজ কাস্টম কর্মকর্তার দুর্বলতার সুযোগে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার কৌশল বেছে নিয়েছে একাধিক ব্যবসায়ী। কাস্টম নিবারক দল অভিযান চালিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের বিক্রি রেজিস্টার (খাতাপত্র) জব্দ করে নিয়ে এসে সহকারী কমিশনারের কাছে জমা দেয়। পরবর্তীতে মামলার ভয় দেখিয়ে ওইসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে জব্দকৃত রেজিস্টার, খাতাপত্র ফেরত দেয়া হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। এ কারণে কক্সবাজারে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী মহলের অনেকে। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।

পাঠকের মতামত: