ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ার মাতামুহুরী ব্রিজ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

স্টাফ রিপোর্টার  : Chotan Chakaria Pic. (Bridge) 15.06.16
ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী নদীর চকরিয়ার চিরিঙ্গার ব্রিজের মাঝখান দিয়ে যানবাহন চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায় তিন বছর আগে ব্রিজটির মাঝখানের একপাশে দেবে যাওয়ার পর তার ওপর পাটাতন বসিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার পর কিছুদিনের মাথায় অপরপাশের স্থানটিও দেবে যায়। সেই স্থানটিতেও পাটাতন বসিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু গতকাল বুধবার সকাল থেকে ব্রিজের মাঝখানের পুরোটাই আবারো দেবে গিয়ে পাটাতন সরে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যান চলাচল করছে। এতে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যানবাহন চলাচল। অবশ্য দেবে যাওয়া অংশের দুই প্রান্তে সওজ কর্তৃপক্ষ লাল পতাকা উঁচিয়ে দিয়ে উভয়দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোর চালককে সতর্ক করলেও তা দুর্ঘটনা এড়াতে কতটুকু
কাজে আসবে তা নিয়ে সন্দিহান চালক, যাত্রী-সাধারণসহ সচেতন লোকজন।
এ ব্যাপারে গতরাতে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. শহীদুল আলম বলেন, ‘টানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আজ বুধবার সকাল থেকেই ব্রিজটির মাঝখানে আবারো দেবে যাওয়া শুরু করে। দেবে যাওয়ার অংশের ওপর ইতিপূর্বে বসানো পাটাতনগুলো সরে যেতে শুরু করে। এই অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ততম এই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দুই প্রান্তে লাল পতাকা উঁচিয়ে দেয় এবং সার্বক্ষণিক নজরদারী বাড়ায়।’ শহীদুল আলম আরো বলেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে সরে যাওয়া পাটাতনগুলো নতুন করে বসানো হবে। এজন্য আজ রাত (গতকাল) থেকে কাজ শুরু করা হবে।’
স্থায়ী সমাধান কখন হবে, এই প্রশ্ন করা হলে শহীদুল আলম জানান, ইতিমধ্যে একনেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী ও সাংগু নদীর ওপর চারলেনের ব্রিজ নির্মিত হবে। চার লেনের এই ব্রিজ নির্মাণের জন্য এরইমধ্যে সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই বর্তমান ব্রিজটির মাঝখানে দেবে যাওয়া অংশে পাটাতন বসিয়েই যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে।’
প্রতিদিন ব্রিজের ওপর চলাচল করা সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী ব্রিজের ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। দিনের বেলায় তেমন সমস্যার সম্মুখিন না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার বাসগুলো ব্রিজটি পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অতিদ্রুত এই সমস্যা সমাধান করে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। না হয় যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত তিনবছর ধরে ব্রিজটির এই দুরবস্থার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ইতিপূর্বে দূরপাল্লার একটি পিকনিক বাস দেবে যাওয়া অংশ দিয়ে পারাপারের সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয় বাসটি। এতে একসঙ্গে ১৮ জনের মতো নারী-পুরুষ প্রাণ হারায় এবং আহত হয় অনেকে। একইভাবে ছোট-খাটো বহু দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ব্রিজটির এমন দুর্দশার কারণে।’
সওজ সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬০ সালে তৎকালীন আরাকান সডকের চকরিয়ার চিরিঙ্গার  মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ব্রিজটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামের জাপানী একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বছর ধরে এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে অদ্যাবদি এই ব্রিজের দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

পাঠকের মতামত: