ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারের বিশাল গরু চোর সিন্ডিকেটের সন্ধান পেল পুলিশ

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া :::

কক্সবাজারে গরু-মহিষ ও ছাগল চুরি এখন নিত্যকার ঘটনা হয়ে উঠেছে। গৃহপালিত এসব গবাদি পশু চোরের খপ্পর থেকে রক্ষা করতে সর্বক্ষণ টেনশনে থাকতে হয় মালিকদের। গরু চুরি আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও এই জেলায় চুরি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পেকুয়ায় চুরি হওয়া ৭টি মহিষসহ সিন্ডিকেটের এক চোরকে আটকের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। গবাদি পশু চুরির সাথে জড়িত বিশাল সিন্ডিকেটের নাম পরিচয়সহ নানা তথ্য উদঘাটন হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।

পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়ার মো. কালুর ছেলে ফরিদ আলম বলেন, গত ২৮ মে সন্ধ্যায় চরাতে দেয়া ৭টি মহিষ ঘরে না ফেরায় মাঠে খোঁজ নিতে যাই। ওই মহিষ না পেয়ে ২৯ মে সকালে পেকুয়া থানায় এটি অভিযোগ করি।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়া মোহাম্মদ মোস্তাফিজ ভূইয়া বলেন, ফরিদ বাদি হয়ে ৪জনকে আসামি করে দেয়া অভিযোগটি ২৯ মে রাত ৮টার দিকে মামলা হিসেবে এন্ট্রি করি। এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিই উপপরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামানকে।
ওসি মোস্তাফিজ ভূইয়া আরো বলেন, মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশের একাধিক টিমকে অভিযানে পাঠাই। পাশাপাশি বিভিন্ন সড়ককেন্দ্রিক সোর্স নিয়োগ করি। রাতেই সোর্স থেকে খবর পেয়ে শিলখালীর কাচারী মুড়া স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া ৭টি মহিষ উদ্ধার ও এক চোরকে আটক করা হয়। আটক চোর বাহাদুর আলম (৪০) চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নের আবদুল হাকিম পাড়ার মৃত মনছুর আলীর ছেলে।
আটক চোর বাহাদুর পুলিশের কাছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে মহিষ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গবাদি পশুর চুরির সাথে জড়িত বিশাল একটি সিন্ডিকেটের নাম প্রকাশ করেছে বলে ওসি মোস্তাফিজ ভূইয়া নিশ্চিত করেছেন। স্বীকারোক্তি মতে চকরিয়ার গরুর দালাল হিসেবে পরিচিত রুহুল কাদেরের শ্বশুর বাড়ি পেকুয়ায়। এই সুবাদে দুই উপজেলায় বিচরণ তার। সে ২৮ মে চকরিয়ার বাবরকে পেকুয়ার ওসমান ও শাহ আলমের কাছে পাঠায় গরু-মহিষ সংগ্রহের খবর নিয়ে। এই খবর পেয়ে চকরিয়া ও পেকুয়ার একটি গরু চোর সিন্ডিকেট করিয়ারদিয়া থেকে ৭টি মহিষ চুরি করে। এই মহিষ উদ্ধারের পর পুলিশি নিরাপত্তায় থানা সংলগ্ন ডোবার পানিতে রাখা হয়েছে। আটক চোরকে গত সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করতে।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিয়ে গরু চুরির একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পৃথক দল গঠন করে পাহাড়ি গ্রাম ও উপকূল থেকে প্রতিনিয়ত গরু-মহিষ-ছাগল চুরি করে। ইতিপূর্বে চলন্ত মাইক্রোবাসে চোরাই গরু জবাই করার সময় আটক করার ঘটনাও ঘটে চকরিয়ায়। এমনকি একটি পাকা বাড়ির ভেতর চোরাই গরু জবাই করে বাজারজাত করার আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ নানা তথ্য উদঘাটন করলেও রহস্যজনক কারণে ওইসব ঘটনার তদন্ত মাঝপথে চাপা পড়ে যায়। সুত্র মতে, গত তিন বছরে জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেষখালী, রামু ও সদর উপজেলা থেকে তিন শতাধিক গরু-মহিষ ও ছাগল চুরি হয়। উদ্ধার হয় মাত্র ৪৭টি। প্রশাসন সক্রিয় না হলে গবাদি পশু চুরি রোধ করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনের অভিমত।

পাঠকের মতামত: