এম জিয়াবুল হক. চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে মাতামুহুরী নদীতে ভাসমান অবস্থায় শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অবশেষে ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ আপন ভাগ্নে মোহাম্মদ আনাছকে নদীতে ফেলে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর খালা আঁখি রহমানের (১৮) বিরুদ্ধে।
বুধবার ভোরে উপজেলার মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন মাতামুহুরি নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় সাতমাস বয়সী শিশু মোহাম্মদ আনাছের মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাৎক্ষণিক চকরিয়া থানা পুলিশ নিহত শিশুর বাবা হোসাইন আলী, মাতা শাকিলা বেগম, ফুফু খতিজা বেগম ও খালা আখী রহমানকে থানায় নিয়ে যান। এরই মধ্যে বুধবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে খালা আখী রহমান গুপ্তধনের লোভে বোনের শিশু ছেলে আনাছকে বাড়ির অদুরে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, খালা আখী রহমান বলেছে তা নাকি স্বপ্নে জীনের বাদশা গুপ্তধনের লোভ দেখায়। আর সেটি পেতে হলে তার কাছে বেশি প্রিয় বড় বোনের শিশু ছেলে আনাছকে নদীতে বলি ( বিসর্জন) দিতে হবে। ওই বাসনা থেকে আখী নিজের বোনের শিশু ছেলেকে নদীতে ফেলে হত্যা করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এমন অভিযোগে চকরিয়া থানায় আঁখি রহমানকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত শিশু আনাছের বাবা হোসাইন আলী। সেই মামলায় আঁখিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চকরিয়া থানা-পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে হোসাইন আলীর ঘরের দুটি কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষে শিশু আনাছ, তাঁর মা সাকিলা বেগম, ফুফু খাদিজা বেগম ও খালা আঁখি রহমান এবং অন্য কক্ষে হোসাইন আলী একা ঘুমান। বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে মায়ের বুক থেকে শিশু আনাছকে কোলে তুলে নিয়ে প্রায় ২০০ মিটার দূরে মাতামুহুরি নদীতে ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করেন আঁখি। পরে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সকাল ছয়টার দিকে শিশুর মা সাকিলার ঘুম ভাঙলে তাঁর বুকে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে কান্না শুরু করেন।
শিশুর বাবা হোসাইন আলী বলেন, বুধবার ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন মুসল্লি মাঝের ফাঁড়ি সেতুর নিচে আনাছের লাশ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আনাছের লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মো তফিকুল আলম বলেন, ঘটনার পরপর প্রথমদিকেই আমরা ধরে নিয়েছিলাম, এটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে নিহত শিশুর মা, বাবা, খালা ও ফুফুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটির খালা হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, আঁখি নামের ওই তরুণী ঝাড়ফুঁক করতেন বলে শুনেছি । জীনের বাদশা নাকি তাঁকে স্বপ্নে দেখায় যে বেশি ভালোবাসেন এমন একটি শিশুকে নদীতে বলি ( বিসর্জন) দিতে পারলে গুপ্তধন পাওয়া যাবে।
মুলত এ উদ্দেশ্যে আখী গত ৫ নভেম্বর মধ্যম সুরাজপুরস্থ তাঁর বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান। সুযোগ বুঝে হত্যার জন্য মঙ্গলবার রাতে আপন শিশু ভাগ্নেকে বেছে নেন। আঁখি ওইরাতে সবাইকে নিয়ে দেরি করে ভাত খান, যাতে ভোর রাতে সবাই গভীর ঘুমে থাকেন। পরে ভোরের দিকে যখন বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে আছন্ন তখন নদীতে ফেলে হত্যা করেন আঁখি। মামলার এজাহারেও আখী রহমান এলাকায় কবিরাজি করেন বলে সনাক্ত করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, শিশু আনাছ হত্যা মামলায় একমাত্র আঁখি রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সৌপর্দ করা হয়। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পাঠকের মতামত: