ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলশিক্ষিকার মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক ::  চট্টগ্রাম নগরীর এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার ন্যাড়া মাথার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন বলছেন, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ফ্রেঞ্চ বেণী করার কারণে তাদের মারধর করার প্রতিবাদে তিনি তার মাথা ন্যাড়া করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শিক্ষিকার ফেসবুক পোস্ট
ঘটনার সূত্রপাত ‘শারীরিক শিক্ষা’ বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীনের একটি ফেসবুক ছবি ও পোস্ট থেকে।

বৃহস্পতিবার ফেসবুকে তিনি তার ন্যাড়া মাথার ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেঞ্চ বেণী করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়া অপরাধ, আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?’

এ ব্যাপারে জাহিদা পারভীনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় কাবাডি বিভাগে অংশ নিতে তিনি তার স্কুলের মেয়েদের এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

তিনি জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর খেলার আগের দিন গ্রুপ ছবি তোলার সময় তার নির্দেশে শিক্ষার্থীরা ফ্রেঞ্চ বেণী (মাথার তালু থেকে বেণী) বাঁধলে সেটা নিয়ে আপত্তি তোলেন প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বকাঝকা, গালাগালি এমনকি চুল ধরে মারধরও করেন। মারধরের ঘটনা এবং স্কুলের আরও কিছু অনিয়মের কারণে তিনি মাথার চুল ফেলে দিয়ে ফেসবুকে এমন প্রতিবাদ করেছেন।

তিনি আরও জানান, কাবাডি প্রতিযোগিতায় শরীরে ধাতব কিছু রাখতে মানা করা হয়। বিশেষ করে মাথায় ক্লিপ বাঁধা নিষেধ। এ কারণে খেলতে গিয়ে চুল যেন মুখের সামনে না আসে সেজন্য শিক্ষার্থীদের ফ্রেঞ্চ বেণী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

কী বলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ

জাহিদা পারভীনের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘স্কুলের নিয়ম শুধু দুই বেণী করা। আমি মেয়েদের ফ্রেঞ্চ বেণী খুলে নরমাল দুই বেণী করার নির্দেশ দিয়েছি। কারণ সেদিন শুধু ছবি তোলা হবে। এজন্য কাউকে বকাঝকা বা মারধর করা হয়নি। খেলার দিন মেয়েরা ফ্রেঞ্চ বেণী করে গিয়েছে। তাতে কোন বাঁধা দেয়া হয়নি। জাহিদা পারভীন ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আমার ও স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।’

এদিকে জাহিদা পারভীন বলছেন তার এই চুল ছেঁটে ফেলার প্রতিবাদ শুধুমাত্র ফ্রেঞ্চ বেণীকে ঘিরে নয় বরং ক্রীড়াকে ঘিরে স্কুলের উদাসীনতার বিরুদ্ধেও। তার অভিযোগ, তিনি ওই স্কুলে ২০১১ সালে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়ে খেলানোর কোন অনুমতি তাকে দেয়া হয়নি। বরং তাকে দিয়ে শারীরিক শিক্ষার থিওরি ও অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর ক্লাস করানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সবশেষ ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিযোগিতার দিনও শিক্ষার্থীদের স্কুলে মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ কারণে শিক্ষার্থীরা সময় মতো মাঠে যেতে পারে নি। ফলে মেয়েরা খেলায় অংশ নিতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন খেলা, সেদিন তো তাদের উচিত ছিল ওই ১২টা মেয়েকে ছুটি দেয়া। এটা তো স্কুলের কোন টার্ম পরীক্ষাও না। কিন্তু তারা বলেছে পরীক্ষা দিতেই হবে। আমি মেয়েদের বলেছি তারা যেন পরীক্ষা এক ঘণ্টা দিয়ে বের হয়ে আসে। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের আধাঘণ্টার মতো দেরি হয়ে যায়। যার কারণে মেয়েরা মাঠে খেলতে নামার অনুমতি পায়নি।’

প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতার দিন পরীক্ষা রাখলেও কোন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়নি, বরং জাহিদা পারভীনের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তাদেরকে সময়ের আগেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মেয়েরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে তিন বার বার জাহিদা পারভীনকে ফোন করেও জবাব পাইনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বার বার ফোন করেছি তারা খেলছে কি না, জাহিদা আপা কল রিসিভ করেন নাই। আগেরদিন আমি বাচ্চাদের সাথে হাসিমুখে গ্রুপ ছবি তুলেছি। মারধর করলে কি এভাবে ছবি তুলতো কেউ?’

শিক্ষিকার অব্যাহতি
এমন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মুখে ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি চেয়ে সভাপতি বরাবর চিঠি দেন জাহিদা পারভীন। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে তার অব্যাহতি কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তবে জাহিদা পারভীন তার ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, ‘আমাকে চাকরি থেকে বিদায় করছে আমার বকেয়া কোনও পাওনা না দিয়ে। আজকে স্কুলে মেয়েদের সাথে ক্লাস করতে দেয়নি।’

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তার পাওয়া মেটানোর প্রক্রিয়া চলছে, সেটা যথা সময়ে পরিশোধ করা হবে।’ সূত্র-বিবিসি

 

পাঠকের মতামত: