ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে বনভূমিতে কারাগার নির্মাণ বন্ধে সচিবসহ ১৮ কর্মকর্তাকে চিঠি

কক্সবাজার সংবাদদাতা :: কক্সবাজারের উখিয়া ও রামুর রক্ষিত বনভূমিতে উন্মুক্ত কারাগার ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধে ১৮ সরকারি কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’।

কার্যক্রম বন্ধে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ এই ১৮ সরকারি কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।

আজ রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে ১৮টি দপ্তরের কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিতে গৃহীত প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে সকল শ্রেণির বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়।

৩ সচিব ছাড়াও কারা অধিদপ্তরের কারা মহাপরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, বন সংরক্ষক চট্টগ্রাম, এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উখিয়া ও রামু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) উখিয়া ও রামু, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে এ চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পাগলিরবিল মৌজার আরএস ৬০২ দাগসহ বিভিন্ন দাগের পাহাড়/টিলা শ্রেণির ভূমিকে গেজেট নোটিফিকেশন মূলে ১৯৩৫ সালে রক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে বন বিভাগ গেজেটভূক্ত বনভূমিতে বনায়ন ও ব্যবস্থাপনা করে আসছে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় ‘উন্মুক্ত কারাগার’ নির্মাণে ১৬০ একর পাহাড় শ্রেণির রক্ষিত বনভূমি কারা অধিদপ্তরের নামে বন্দোবস্ত প্রদান করে।

কারা কর্তৃপক্ষ সেখানে সীমানা নির্ধারণে কাজ করছে। অথচ এটি বৈলাম, গর্জন, জাম, তেলসুর, চাপালিশ, আকাশমণি, গামারি, আছারগোল, ডুমুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরা, বটসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় লক্ষাধিক গাছ সমৃদ্ধ এক বনাঞ্চল। এছাড়া এশিয়ান হাতি, অজগর, হরিণ, বানর, শিয়াল, সাপ, শজারু, শূুকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল।

অপরদিকে কক্সবাজারের রামুতে সংরক্ষিত বনে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এটিও একটি সমৃদ্ধ বনাঞ্চল এবং সংরক্ষিত বনভূমি।

এ অবস্থায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয় যে, পাহাড়-টিলা, ছড়া, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর উক্ত বনভূমিতে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ এবং রাস্তা নির্মিত হলে বনাঞ্চল বিলুপ্ত হবে। একইসাথে আশপাশের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের জন্য ঝুঁকি এবং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হবে।

প্রকৃতি রক্ষায় সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনভূমিতে গৃহীত প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ, উক্ত ভূমি কাউকে বন্দোবস্ত না দেয়া, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সকল শ্রেণির বনভূমি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে এমনিতেই হাজার হাজার একর বনাঞ্চল রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস করা হয়েছে। এর ওপর যাতায়াতের নামে সংরক্ষিত বনের বুক চিরে রাস্তা তৈরি ও উন্মুক্ত কারাগার নির্মিত হলে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, বনভূমি জবরদখল, হাতির বিচরণ ক্ষেত্র ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ উক্ত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। যার কারণে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমি সংরক্ষনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকি মোকাবেলায় কক্সবাজার অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

পাঠকের মতামত: