ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাকে ভোটার করতে সহায়তা

আলীকদমে দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা: ৩ জনের জামিন

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ছবিযুক্ত ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে একজন রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ ও প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার অভিযোগে গত ৯ আগস্ট থানায় ৮ জন আসামী করে মামলা রুজু হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এ মামলা করেন। এতে আসামী করা হয় নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কফিল উদ্দিন, সচিব মোঃ আবু হানিফ রাজু ও চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান ও সচিব মানিক বড়ুয়াসহ ৮ জনকে। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- কথিত রোহিঙ্গা নাগরিক ‘আহছাব উদ্দিন ও আয়েশা বেগম’, জামাল হোসেন এবং ইউপি সদস্য আব্দুল মানান।

মামলার বিবরণ: আলীকদম থানার মামলা নম্বর ০২ তারিখ: ০৯ আগস্ট ২০২২ এর এফআইআর-এ বলা হয়, ‘পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা করে জ্ঞাতসারে পরিচয় গোপন করতঃ জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদপত্র সংগ্রহ পূর্বক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার অপরাধ।’ এতে পেনাল কোডের ৪২০/৩৪ এবং ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ১৮ ধারা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০ এর ১৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়।

বাদীর দাবীঃ থানায় প্রদত্ত এজাহারে মামলার বাদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ৯ আগস্ট বিকাল চারটায় আলীকদম উপজেলা পরিষদ সভাপক্ষে নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের ভোটারদের সংগ্রহকৃত ২২৭টি ভোটার নিবন্ধন ফরম, বিশেষ তথ্য ফরম এবং সংযুক্ত কাগজপত্র বিশেষ কমিটি কর্তৃক বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। এ সময় নিবন্ধন ফরম নম্বর ১০০৫৯৭০৬৬ পূরণকারী আহছাব উদ্দিনকে রোহিঙ্গা মর্মে গোচরীভূত হয়। তার মা আয়েশা বেগম জীবিত থাকার পরও নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০২২ সালের ২০ জুন ‘মৃত্যু সনদ’ প্রদান করা হয়। অপরদিকে, চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আছহাব উদ্দিনকে ২০১৯ সালের ১৮ মে ‘জন্ম সনদ’ ইস্যু করা হয়। রোহিঙ্গা নাগরিক আহছাব উদ্দিনকে ভোটার তালিকাভূক্তি করতে সহায়তা করায় এজাহারে বর্ণিত ২ থেকে ৮নম্বর আসামীরা দায়ী বলে মনে করছেন মামলার বাদী।”

২০০৭ সালেই জন্ম সনদঃ অনুসন্ধানে জানা গেছে, চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের নিবন্ধন বই ১ এর মধ্যে ‘আহছাব উদ্দিন, পিতা- জামাল হোসেন, মাতা- আয়েশা বেগম’ নামে ‘জন্ম সনদ’ ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ইস্যু করা হয়। পুরাতন বালামের রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে ‘আহছাব উদ্দিন’কে ২০১৯ সালের ১৮ মে অনলাইন জন্ম সনদ ইস্যু করেন চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মানিক বড়ুয়া ও তৎকালীন চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান।

জাতীয়তা সনদ পেল যেভাবেঃ এদিকে, ‘আহছাব উদ্দিন’কে গত ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ‘জাতীয়তা সদনপত্র’ প্রদান করেন নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা। অপরদিকে, নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়ন পত্র রেজিস্টারে ২০২১-২০২২ সালের ৫৪ নম্বর স্মারকের একটি প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, আহছাব উদ্দিনের মা স্ট্রোক করে বিগত ২০০৫ সালের ৫ মার্চ মারা যান। এ প্রত্যয়নপত্রের স্বাক্ষর করেন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা।

কী বলছেন সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানরাঃ জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাবেক চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা বলেন, চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের ‘জন্ম সনদ’ এর ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত রোহিঙ্গাকে আমি জাতীয়তা সনদ প্রদান করেছিলাম। সেই সময় আমি আহছাব উদ্দিন যে রোহিঙ্গা জানতাম না। তবে তিনি আহছাব উদ্দিনের মা আয়েশা বেগমকে মৃত ঘোষণা সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্রকে সন্দেহজনক মনে করছেন। তিনি বলছেন, ‘আমি এ ধরণের প্রত্যয়ন যদি দিয়েও থাকি তবে মেম্বারের কথা ছাড়া দিইনি’।

নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কফিল উদ্দিন বলেন, কোন রোহিঙ্গা নাগরিককে জ্ঞাতসারে ভোটার করতে সহযোগিতা কিংবা প্রত্যয়ন দিইনি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে কথিত এ রোহিঙ্গা নাগরিককে চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ এবং নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয়তা সনদপত্র প্রদান করেন সাবেক চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান ও ফোগ্য মার্মা। আহছাব উদ্দিনের মায়ের মৃত্যু সংক্রান্ত একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান। সুতরাং পূর্বের ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে এবং ইউপি মেম্বারের প্রত্যয়নের পরই আমি সংশ্লিষ্ট প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দাবী- ‘যাচাই-বাচাইকালে আহছাব উদ্দিনের কথায় সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হই আহছাব উদ্দিনের বাবা রোহিঙ্গা। জন্ম নিবন্ধন সনদ ও চেয়ারম্যান সনদ যাকে বাবা বানিয়েছে তিনি তার জন্মদাতা বাবা নয়। আহছাব উদ্দিনের মা আয়শা বেগমরে দ্বিতীয় স্বামী জামাল হোসেন।’

জামিনঃ এদিকে ১১ আগস্ট এ মামলায় জামিনের প্রার্থনা করেন নয়াপাড়া ও চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব যথাক্রমে আবু হানিফ রাজু ও মানিক বড়ুয়া। জামিন শোনানী শেষে বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এএসএম এমরান দুই ইউপি সচিব এবং গ্রেফতার হওয়া জামাল উদ্দিনে জামিন মঞ্জুর করেন।

পাঠকের মতামত: