ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার-চট্টগ্রামের বাস ভাড়া : প্রশাসন নির্ধারিত ৩৩২ টাকার স্থলে ৪২০ টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের

তুষার তুহিন, কক্সবাজার ::  কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দুরত্ব ১৫১ কিলোমিটার। সরকারি নিয়মমতে যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা হিসেব করে ভাড়া আসে ৩৩২ টাকা। এমন হিসাব করেই কক্সবাজার চট্টগ্রামের ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৩৩২ টাকা জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৪২০ টাকা আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্ঠরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কক্সবাজার টু ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ জেলার অভ্যন্তরীন সকল সড়কের বাস ও মিনিবাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে পরিবহন মালিক, নেতা ও বিআরটিএ’র সাথে জেলা প্রশাসকের বৈঠক এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এনিয়ে এক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে জেলা প্রশাসন। তবে সিদ্ধান্তের প্রথম দিনেই প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়া মানছে না পরিবহন কর্তৃপক্ষের লোকজন।
প্রজ্ঞাপণে দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার হতে রামু (চৌমুহনি)’র দুরত্ব ২২ কিলোমিটার। এই রাস্তার পূর্বের ভাড়া ৪০ টাকা বর্তমানে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে ঈদগাওয়ের দুরত্ব ৩৮ কিলোমিটার হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪ টাকা। অতীতে এই সড়কের ভাড়া ছিল ৬৮ টাকা। খুটাখালির দুরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। এই রাস্তার আগের ভাড়া ৮৬ টাকা যা বর্তমানে ১০৬ টাকা করা হয়েছে। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে চকরিয়া বাস টার্মিনালের দুরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। এই পথে বাস যোগে যাতায়াত করতে যাত্রীদের গুনতে হবে ১২৮ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হয়ে বদরখালি ভায়া চকরিয়ার দুরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। আগে এই সড়কে যাতায়াতে গুনতে হত ১৩৫ টাকা বর্তমানে গুনতে হবে ১৬৫ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হয়ে মগনামা ভায়া চকরিয়া দুরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। অতীত ভাড়া ১৫৫ টাকা বর্তমানে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হতে উখিয়া ষ্টেশনের দুরত্ব ২৭ কিলোমিটার। পূর্বের ভাড়া ৪৯ টাকা হলেও বর্তমানে গুনতে হবে ৫৯ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হতে ইনানী বীচ পয়েন্টের দুরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। আগের ভাড়া ৬৩ টাকার স্থলে বর্তমানে ৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হতে টেকনাফের দুরত্ব ৮২ কিলোমিটার। আগের ভাড়া ১৪৮ টাকার স্থলে বর্তমানে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার হতে ঢাকার দুরত্ব ৪৪০ কিলোমিটার। এই রাস্তার নতুন ভাড়া ১১০০ টাকা।
তবে যাত্রীরা বলছেন এসব সিদ্ধান্ত অনেকসময় কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে। প্রশাসন বৈঠক করে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। আর অন্য দিকে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বাস মালিকরা।

গতকাল সরেজমিনে কক্সবাজার শহরের বাস কাউন্টার গুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, কক্সবাজার চট্টগ্রামের বাস যাত্রীদের কাছ থেকে ৪২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। টেকনাফের নন এসি বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। চকরিয়ায় জন্য গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা।
এবিষয়ে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কক্সবাজার জেলা সদস্য সচিব কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে জনগনের উপর হয়রানি নতুন কিছু নয়। এখানে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনেক সময় তা আর মনিটরিং করে না। পাশাপাশি আমাদের জনগনও সচেতন নয়। তারা প্রতিবাদ না করে সব অত্যাচার নীরবে সহ্যম করে। এই সুযোগটাই কাজে লাগায় পরিবহন মাফিয়ারা।
তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা বৈঠকেই পরিবহন সংশ্লিষ্ঠদের জানিয়ে দিয়েছি ভাড়া নিয়ে কেউ অরাজকতা করলে কাউকেই এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। ভাড়ার বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাস কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে শহরের জাম্বুর মোড় থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় থেকে সমস্ত পকেট/এজেন্ট কাউন্টার সরিয়ে নিতে। এছাড়া যেসব দূর পাল্লার বাস শহরে প্রবেশ করে তাদেরকেও বলা হয়েছে বাস শহরে না আনতে। এটি পুরোপুরি আগামী শীত মৌসুমের আগেই আমরা বন্ধ করে দিব।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনূর রশিদ বলেন, এ ভাড়া বৃদ্ধি গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল চালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: