ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দুই লেনের সড়কে চার লেনের সেতু নির্মাণ

1-12-800x440সাতকানিয়া প্রতিনিধি ::

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চন্দনাইশ, পটিয়া ও কক্সবাজারের চকরিয়ার অংশে চার লেনের ৪টি সেতু নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু করতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

চলতি বছরের শেষদিকে এ তিন সেতুর কাজ শুরু হয়ে আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতুগুলো হলো চন্দনাইশের শঙ্খনদীর ওপর দোহাজারী সাংগু ব্রিজ, বরগুলী খালের উপর বরগুনী ব্রিজ, পটিয়া ইন্দ্রপুল সেতু। এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া মাতামুহুরীতে আরো একটি সেতু নির্মাণ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভবিষ্যত পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এ সকল সেতু চারলেন বিশিষ্ট সড়কের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে পরিচিত চন্দনাইশের দক্ষিণ সীমান্ত শঙ্খনদীর ওপর দোহাজারী সাংগু ব্রিজ। ইতিমধ্যে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় দৈনিক পূর্বকোণে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ফলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে তার চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু। ইতিমধ্যে সেতুটিতে ফাটলও দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সেতুই নির্মিত হয়েছিল ষাটের দশকে। দীর্ঘদিন আগে এ সেতুগুলো নির্মাণ হলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বরগুনি খালের উপর নির্মিত বরগুনি ব্রিজ ও ইন্দ্রপুল সেতুর অবস্থাও নাজুক। যেকোন সময় এ সেতুগুলো ধ্বসে পড়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাই নতুন সড়ক নির্মাণের দাবী উঠেছে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণের। যদি কোন কারণে এ সব সেতুর কোনটি ধ্বসে পড়ে, তাহলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফলে সরকার হারাবে বিপুল অংকের রাজস্ব। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্রস বর্ডার রোড, নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাইকা এ ৪টি সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এ ৪টি সেতুর দৈর্ঘ্য ৬শ ৪৫ মিটার। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ ৮ কোটি টাকা। এ ৪টি সেতুর ২টি হবে চন্দনাইশে, ১টি পটিয়ায় ও অপরটি চকরিয়াতে। যা আগামী বছর জানুয়ারি মাসে সেতুগুলোর কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ সকল সেতুগুলো নির্মাণ করা হবে চার লেইন বিশিষ্ট সড়কের আদলে। যদিও বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে অদ্যাবধি চারলেনের কোন সেতু নির্মাণ হয়নি। তাছাড়া সড়কটিও এখনো চারলেনে উন্নীত করা হয়নি।
জানা যায়, ১৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটার দেড় লাইন (৫.৫ মিটার) বিশিষ্ট। সড়কটিতে প্রতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ হাজার গাড়ি চলাচল করে বলে এক তথ্য সূত্রে জানা যায়। একই মাপের সড়ক না হওয়ায় গতি কোথাও বেশি, আবার কোথাও কম থাকে। এ কারণে সড়কটি পাড়ি দিতে রাত্রীবেলা সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা, আর দিনে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। সরকার কক্সবাজারকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় এ সড়ককে চার লেনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। ইতিমধ্যে সুইডেনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিফাব ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ডিটেইল ডিজাইন চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে জমা করেছেন। এতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন প্রকল্পের অর্থ সংস্থানের জন্য জাইকাকে প্রস্তাব দিয়েছেন। জাইকা তাতে সম্মতিও দিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে এখনো প্রকল্পটি চূড়ান্ত না হওয়ায় এগুচ্ছে না কাজ। দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া বলেছেন, চার লেন সড়ক নির্মাণের আগেই চার লেন সেতু নির্মিত হচ্ছে। তাছাড়া প্রকল্পটি ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেকে) চূড়ান্ত হয়। বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা হবে। অপরদিকে কনসালটেন্ট সার্ভিসের প্রকৌশলী মুয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, দোহাজারী সড়ক বিভাগের অধীনে শঙ্খনদীর ওপর সাংগু ব্রিজ, বরগুনী ব্রিজ, পটিয়ার ইন্দ্রপুল ব্রিজ চকরিয়ার মাতামুহুরী ব্রিজ কনসালটেন্ট টিম প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ শেষ করেছেন। তবে আরো অধিকতর পর্যবেক্ষণ শেষে এ ব্রিজগুলির যত আয়তন আছে, তা নির্ধারণ করে চার লেনের ৪টি ব্রিজসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকায় আরো বেশকিছু ব্রিজ এক সাথে প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে খুব শীঘ্রই টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীতে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, সম্ভাবনার অন্যতম পাহাড়ি অঞ্চল বান্দরবানের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। ফলে মানুষ এ সকল এলাকায় বিনোদনের জন্য ভিড় জমাবে। সরকারের রাজস্ব আদায় হবে ব্যাপক হারে। সরকারের অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাবের পাশাপাশি এ সকল অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

পাঠকের মতামত: