ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার বরইতলীর মাহমুদ নগর এখন সন্ত্রাসের জনপদ

atongkস্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মাহমুদ নগর এখন সন্ত্রাসীদের জনপদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সেখানে নিরীহ মানুষের বসতবাড়িতে হানা দিয়ে লুট করে নিচ্ছে সহায়-সম্পদ। অগ্নিসংযোগ করে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বসতবাড়ি ভাঙচুর, পালিত গরু-ছাগল, ভিটের গাছপালা কেটে নেওয়াসহ নানা অপরাধ কর্মকা- সংঘটিত হলেও আইন-শৃক্সক্ষলা বাহিনীর কোন ধরণের তৎপরতা না থাকায় সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত করছে। সন্ত্রাসীদের এই অব্যাহত তা-বের কারণে ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ৩০টি পরিবার। এই সুযোগে এসব বসতবাড়ির সহায়-সম্পদ গণিমতের মালের মতো লুটেপুটে খাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা তাদের এই রাজত্ব ধরে রাখতে এলাকার অসংখ্য স্থানে সশস্ত্র পাহারা বসিয়েছে এবং সোর্স নিয়োগ করেছে। যাতে কোন সাংবাদিকও তাদের তা-বচিত্র তুলে আনতে না পারে।
এ বিষয়ে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘বরইতলী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম মাহমুদ নগর এলাকাটি এখন পুরোপুরি সন্ত্রাসীদের দখলে। সেখানে অল্প সংখ্যক পুলিশ নিয়ে অভিযানে গেলে কেউ প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরতে পারবে না। বলতে গেলে, সন্ত্রাসীদের রাজত্ব চলছে সেখানে। এক্ষেত্রে পুলিশ একেবারেই অসহায়। বিষয়টি ইতিমধ্যে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ বনভূমি দখল পরবর্তী বেচা-বিক্রির টাকার ভাগ নিয়ে আলোচিত ‘দা’ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে সতীর্থদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন একই বাহিনীর সদস্য বরইতলী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদের বাপের পাড়ার আলী হোসেনের পুত্র কলেজ ছাত্র মোরশেদ আলী (২৫)। এ ঘটনায় নিহত মোরশেদের বোন ঝিনু বেগম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করে।
এলাকাবাসী জানায়, মামলা দায়েরের পর বাদী পক্ষের সশস্ত্র লোকজন আসামী ও তাদের পক্ষের বাড়িঘরে ব্যাপক তা-বলীলা শুরু করে। অব্যাহত তা-বের কারণে পুরুষশুন্য হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আসামী প—েগর বাড়িতে থাকা সহায়-সম্পদ লুট করার পাশাপাশি মহিলাদের ওপর শারিরিক নির্যাতন শুরু করলে উপায়ান্তর না দেখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় অন্তত ৩০টি পরিবার। এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা গণিমতের মালের মতো এলাকার ছাড়া পরিবারগুলোর সহায়-সম্পদ লুট করার পাশাপাশি বসতবাড়ির টিনের চালা পর্যন্ত খুলে নিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী বরইতলী ইউনিয়নের মাহমুদ নগর পাহাড়তলী এলাকার এজাহার আহমদের স্ত্রী ছায়েরা বেগম অভিযোগ করেন, তার দুই ছেলে মোরশেদ হত্যাকা-ের সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদেরকে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। শুধু মামলায় জড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি, মামলার বাদী নিহত মোরশেদের বোন ঝিনুর ইন্ধনে ‘দা’ বাহিনীর বর্তমান নিয়ন্ত্রক শাহজাহানের নেতৃত্বে বেলাল, মহসিন, রোকন, রিয়াজ, মোবারক, শাহাদাত, বকুল, হাসিমসহ অন্তত ৩০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী এই তা-বলীলা ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে মাহমুদ নগর এলাকায়। তাদের এই অপরাধ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে যারা একটু উচ্চবাচ্য করার সাহস দেখাবে তাদের উপর নেমে আসে হামলার খড়গ। এই অবস্থায় তিনি বসতবাড়ি ছেড়ে গত দুইমাস ধরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সন্ত্রাসীরা এলাকায় সশস্ত্র পাহারা বসানোর কারণে দুই কন্যা সন্তান ও এক শিশু সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যেতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘গত ৯ মে আমার বাড়ির আসবাব পত্র আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তারও একসপ্তাহ আগে দুই কানি জমির পাকা ধান, এক কানি জমির আলু ও কাকরোলসহ বিভিন্ন উৎপাদিত সবজি লুট করে। এছাড়া তিনটি বড় সাইজের পালিত গরু লুট করে নিয়ে যায়। এতে কম করে হলেও অন্তত ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট এবং ক্ষতির শিকার হই। প্রতিরাতেই সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে করে এলাকায় মহড়া দেওয়ায় বাড়িঘরে থাকতে না পেরে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
ভুক্তভোগী একই এলাকার মো. নুরুচ্ছফার স্ত্রী মোমেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মুছা কাক্কা যদি মোরশেদ হত্যাকা-ে জড়িত থাকে তাহলে তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এই হত্যাকা-কে পুঁজি করে উপরোক্ত সন্ত্রাসীরা একের পর এক তা-ব অব্যাহত রেখেছে এলাকায়। তাদের এই অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রায় একমাস আগে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিই। এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা আসবাব পত্র, গরু-ছাগল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। একইভাবে মাহমুদ নগর এলাকার মোতাহেরা বেগম, রিদুয়ান, নুরুচ্ছফা, জাহাঙ্গীর, শামশুন্নাহারসহ অন্তত ৩০টি পরিবার সন্ত্রাসীদের অব্যাহত তা-বের ফলে এলাকা ছেড়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বরইতলী ইউনিয়নের মাহমুদ নগর এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। যারা বসতবাড়িতে তা-ব, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: