ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নিষিদ্ধ পলিথিনের চলছে রমরমা ব্যবসা

ুুুুুচট্রগ্রাম প্রতিনিধি :::

জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম নিয়ামক পলিথিনের ব্যবহার ফিরে এসেছে পুরনো চেহারায়। অবৈধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানেও তেমন প্রভাব পড়ছে না। পাশাপাশি ক্রেতা বা বিক্রেতা, কারো মধ্যেই পলিথিনের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা নেই। তাদের সচেতন করতে কোনো উদ্যোগও নেই। বাজারে পাটের ব্যাগ পাওয়া যায়, তবে দাম বেশি বলে সেগুলো কেনা বা ব্যবহারের তাগিদ নেই ক্রেতাদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে উৎপাদিত পরিবেশ দূষণের সবচে’ বড় নিয়ামক পলিথিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ দেশে গ্রামগঞ্জ ও শহরের মানুষ পাটের থলে, বাঁশবেতের ডোলা ইত্যাদি নিয়ে হাটবাজার করত। একটি পাটের ব্যাগ চলত বছরের পর বছর। এতে স্বাস্থ্য, অর্থ ও পরিবেশসব কিছুই সুরক্ষা পেত, সাশ্রয় হতো। দোকানিরা সদাই দিত কাগজের ঠোঙা ভরে। ওই বছর দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন ও বহুল ব্যবহার শুরু হয়। চাহিদার যোগান দিতে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে শত শত পলিথিন কারখানা। পরিবেশের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন ভাবনা থেকে একপর্যায়ে পলিথিনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতে থাকে। ১৯৯০ সালের ৬ জুন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) প্রথম পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধের আন্দোলন শুরু করে। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ক্ষতিকর পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ক ধারা সংযোজনের মাধ্যমে এসংক্রান্ত ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হয়।

প্রশাসনকে দেখানোর জন্য পলিথিন সিন্ডিকেট গার্মেন্ট, লবণ ও চিনিসহ ২৩ প্রকার প্যাকেজিং পলিথিন উৎপাদনের অনুমোদন নিয়ে শত শত কারখানায় তৈরি করছে নিষিদ্ধ পলিথিন। নগরীর চাক্তাইকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। স্থানীয় ওসমানিয়া গলিসহ সন্নিহিত এলাকায় ১০/১২ জন অসাধু ব্যবসায়ীর একটি সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করছে। চাক্তাই ওসমানিয়া গলি, মসজিদ গলিসহ কয়েকটি স্থানে গুদাম করে কোটি কোটি টাকার পলিথিন সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করা হয়। কেবল নগরীতে নয় মফস্বলেও পলিথিন সরবরাহ দেয়া হয় এখান থেকে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে গড়ে উঠা পলিথিনের আস্তানাগুলো থেকে প্রতিমাসে গড়ে পনের ট্রাক পলিথিন বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে আসা প্রতিটি ট্রাকে ১৩০ থেকে ১৪০ বস্তা পলিথিন থাকে। এক বস্তায় বড় আকারের পলিথিন থাকে ২০ হাজার। আর প্রতি বস্তায় ছোট পলিথিন থাকে আড়াই লাখ। বড় এবং ছোট মিলে চাক্তাই এবং সন্নিহিত অঞ্চলের আস্তানা থেকে প্রতিমাসে গড়ে বিশ কোটি পলিথিন বাজারে আসছে। প্রতিমাসে বিশ কোটি পলিথিন বাজার ঘুরে ক্রমে নালা নর্দমা দখল করছে। যা ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত জোট সরকারের আমলে পলিথিন ব্যাগ পুনরায় নিষিদ্ধ করার পর প্লাস্টিক দানা আমদানির উপরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরপর থেকে শুধুমাত্র বন্ডের মাধ্যমে প্লাস্টিক দানা আমদানি করা হতো। কিন্তু চট্টগ্রামে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর যোগসাজসে আমদানিকারকরা বন্ডের মাধ্যমে প্লাস্টিক দানা আনার পর অধিক মুনাফা লাভের আশায় তা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এ কাজে কাস্টমস বন্ড হাউজের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা জড়িত থাকে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে বন্ডের মাধ্যমে আমদানিকারকরা প্রথমে বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিকের থেকে আবার পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাইয়ে জড়িত একটি চক্র গার্মেন্টসের নামে আমদানিকৃত প্লাস্টিক দানা ছিনতাই করে বিক্রি করে দেয় পলিথিন উৎপাদনকারীদের কাছে।

পলিথিন বাণিজ্য অবাধ হওয়ার পেছনে পুলিশের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে ম্যানেজ করে সংঘবদ্ধ চক্রটি কোটি কোটি টাকার পলিথিন বেসাতি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ করা হয়েছে যে পুলিশ পলিথিন ব্যবসা ঠেকানোর জন্য আন্তরিক হলেই এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে বিভিন্ন সময় হিসাবের গোলমাল হলে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে দুয়েকটি অভিযান চালানো হয়। টুকটাক কিছু পলিথিনও ধরা পড়ে। কিন্তু শেষতক আবারো পলিথিন বাজারে আসতে থাকে।

পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে সম্প্রতি একের পর এক অভিযান শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার যেমন কাজীর দেউড়ি, রেয়াজ উদ্দিন বাজার, বকশির হাট, বাকলিয়া বউ বাজার, সিটি কলেজের সামনে বসা মাাছের বাজার ও আগ্রাবাদ কর্ণফুলী মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মাছ কিংবা সবজি যাই কিনুন তা ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে পলিথিনে ভরে। এছাড়া রাজাখালী, কালামিয়া বাজার, মাঝিরঘাট, দেওয়ান হাট, খাতুনগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এক রুমের ঘর ভাড়া করে তা পলিথিন মজুদ করার গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতেও দেখা গেছে।

পাঠকের মতামত: