ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

করিডোর ও আবাসস্থল না থাকলে হাতি টিকবে না

অনলাইন ডেস্ক ::  হাতি বাঁচাতে সচেতনমূলক সভা ও হত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেই দায়িত্ব শেষ করেছে বন বিভাগ। তবে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে করিডোর ও আবাসস্থল না থাকলে হাতি ঠিকবে না। তবে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘সুফল’ নামে একটি একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। টেকসই বন ও জীবিকাকে সামনে রেখে এ প্রকল্পের আধীনে দেশীয় প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ রোপণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলে তিন বছর ধরে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ চলবে।

কেস স্টাডি-১ : কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে আঠারো বছর বয়সী একটি স্ত্রী হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে রামু থানায় একটি মামলা হয়। তবে হাতিটিকে কে বা কারা হত্যা করেছে তা জানতে পারেনি বন বিভাগ। গত বছরের ১৭ নভেম্বর জোয়ারিয়া নালা রেঞ্জের গর্জনিয়ার সংরক্ষিত দুর্গম বনাঞ্চলের জুমছড়ি নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটেছিলো।

কেস স্টাডি-২ : একই মাসের ৬ নভেম্বর কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের খুটাখালি বিটের কালাপাড়া ফুটবল খেলার মাঠের উত্তর পশ্চিমে পাশের ঘোনা পাহাড়ি এলাকায় তিন বছর বয়সী একটি বাচ্চা স্ত্রী হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৯ নভেম্বর দুইজনকে এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। তবে ওই হাতি হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

কেস স্টাডি-৩ : কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ঈদগাঁও রেঞ্জের হাইছারঘোনায় ১৫ বছর বয়সী একটি স্ত্রী হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হাতি হত্যার অভিযুক্ত থাকার অপরাধে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাটি বর্তমানে কক্সবাজার বন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

কেস স্টাডি-৪ : কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের রাজঘাট বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ৩৫ বছর বয়সী একটি স্ত্রী হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে কক্সবাজার বন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে শুধুমাত্র কক্সবাজার উত্তর বন বনবিভাগে চারটি হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে হাতি হত্যার ঘটনায় বন বিভাগ মামলা দায়ের করেছে ১৫টি। এরমধ্যে সাতটি মামলায় ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকী ৮টি হাতি হত্যা মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি।

চট্টগ্রাম বন আদালতে পাঁচটি হাতি হত্যা মামলা রয়েছে। বন মামলা পরিচালক হারুনুর রশিদ বাবু জানান, মামলাগুলোর কোনটি বিচারাধীন আবার কোনটি শুনানিতে রয়েছে। তবে এখনো কোন মামলার বিচার শেষ হয়নি। হাতি হত্যায় মামলা দায়ের হলেও পরবর্তীতে মামলার তেমন তদারকি থাকে না। যথাসময়ে স্বাক্ষী হাজির করতে না পারায় বছরের পর বছর চলতে থাকে মামলার শুনানি। বন বিভাগের ধারণা হাতি হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের আসামি করা ও সচেতনতামূলক সভায় হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসন সম্ভব।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান জানান, হাতি বাঁচিয়ে রাখতে মামলা কিংবা সচেতনতামূলক লিফলেট কিংবা লাঠি, বাঁশি, টিন দিয়ে শব্দ করা কিছুটা কাজ করবে। তবে পুরোপুরি নয়। সার্বিকভাবে যদি সবদিকে বিবেচনা করা হয়- যেমন-করিডোরগুলো খুলে দেয়া হলে, আবাসস্থল নিরাপদ করা হলে তাহলে হয়তো সমস্যা সমাধান হবে। যে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছে এগুলোরও কিছু উপকার পাওয়া যাবে। কিন্তু পুরোপুরি যে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে তা নয়। কারণ হাতি অনেক বড় এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। এটাই তার স্বভাব। ছোট একটি এলাকায় যখন সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তখন হাতি দীর্ঘমেয়াদে টিকবে না। বিচ্ছিন্ন থাকলে ধীরে ধীরে সংখ্যা কমতে থাকবে এবং শেষ হয়ে যাবে। বড় এলাকায় হাতি ঘুরে বেড়াবে অন্য গ্রুপের সাথে তার যোগাযোগ হবে। এটাই হাতির স্বাভাবিক জীবন। স্বাভাবিক জীবন না থাকলে হাতি একসময় শেষ হয়ে যাবে। হাতি আলাদা হয়ে গেলেই সমস্যা। আলাদা হয়ে গেলে প্রজনন কমে যাবে।

পাঠকের মতামত: