ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় শহীদ মিনারে ময়লা-আবর্জনা রেখে অবমাননা ও অপবিত্র করায় ক্ষোভ চরমে!

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া : Chakaria Pic. (Minar) 10.05.16
চকরিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সড়কের উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ময়লা-আবর্জনা রেখে অপবিত্র এবং শহীদদের অবমাননা করার ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কোন মাথাব্যাথা পরিলক্ষিত হয়নি। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী লোকজন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত শহীদদের প্রতি চরম অবমাননাকারীদের শাস্তির আওতায় আনারও দাবি তুলেছেন। পৌরসভার পুরাতন বিমানবন্দর সড়কের সেনাক্যাম্প সংলগ্ন কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারটির অবস্থান। এর পাশেই রয়েছে পৌরসভা কার্যালয়, এছাড়া চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ ও চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজেরও অবস্থান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের অধীন চিরিঙ্গা জনতা মার্কেট-বিমানবন্দর সড়কের কাজ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। সড়কটি বিটুমিন মিশ্রিত কংক্রিটের পিচ ঢালাই করার জন্য আগুনের তাপের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আগুন ধরাতে ব্যবহারের জন্য শহীদ মিনারের পাদেদেশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে ছেঁড়া কাপড়-চোপড়সহ নানা ময়লা-আবর্জনা।
সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘সড়কের উন্নয়নের কাজ চলবে। তাই বলে ময়লা-আবর্জনাসহ নির্মাণ সামগ্রী খোদ শহীদ মিনারের পাদদেশে রাখতে হবে, তা তো একেবারে নোংরামি। যেই নোংরামির কোন ধরণের যৌক্তিকতা নেই। ’
তিনি বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। তাদের সেই অবদানের স্বীকৃতি দিচ্ছি এভাবে মিনারের পাদদেশকে অপবিত্র করে। গত দুইদিন ধরে শহীদ মিনারের পাদদেশ এভাবে অপবিত্র অবস্থায় এবং শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা হলেও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এই যেন না দেখার ভান করেই আছেন।’
আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পীস পাইন্ডারের আদনান রামীম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদ মিনারের এই অবমাননার খবর জানতে পেরে আমার সংগঠনের কর্মীদের জড়ো হতে বলেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।’
উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী চকরিয়া পৌরসভার বাসিন্দা সমরজিৎ রায় দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বর আসলেই বুঝি শুধু শহীদদের প্রতি আমাদের ভালবাসা উপচে পড়ে? এই দিনগুলোতে শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পণ করার জন্য মানুষের ভিড় জমে যায়। কিন্তু এর পর বাকী সময়টা শহীদ মিনারের কপালে জোটে শুধুই ময়লা-আবর্জনা, অনাদর আর অবহেলা। যে শহীদদের আত্ম বলিদানে আজ আমরা স্বাধীন, সেই শহীদদের জন্য এতটুকুও সহানুভূতি বা শ্রদ্ধাবোধ আমাদের নেই?
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহীদুল আলম বলেন, ‘কাজ তো ঠিকাদার করতেছে। তাকে তো আর শহীদ মিনারের ওপর নির্মাণ সামগ্রী বা ময়লা-আবর্জনা রাখতে বলিনি? যদি এ ধরণের হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত এসব সরানোর ব্যাপারে নিদের্শ দিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: