ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন: বিদ্রোহীসহ আ’লীগ ১১ বিএনপি ৪ জাপা ১ স্বতন্ত্র ২

chakaria 23.04.2016ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :::
চকরিয়ায় দুই দফায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামীলীগ জয় পেয়েছে ৮টি ইউনিয়নে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয় ঘরে তুলেছেন আওয়ামী লীগেরই তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী। ১৭টি ইউনিয়নে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও মাত্র ৪টি ইউনিয়নে জয় পায় বিএনপি। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জামায়াত জয় পায় ২টিতে। এদিকে বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশ করে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া তিন ইউনিয়নের কোন প্রার্থীই জিততে না পারায় হতাশ দলের অনেক নেতাকর্মী। এমনকি আওয়ামীলীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃত্বেও এই তিন প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
প্রথদফায় ২৩ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ ইউনিয়নে। এর পর গত ৭ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় উপকূলীয় ৬ ইউনিয়নে। প্রথমদফার ১২ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ জয় পায় ৬টিতে। সেগুলো হলো হারবাং (মিরানুল ইসলাম মিরান), কাকারা (শওকত ওসমান), সুরাজপুর-মানিকপুর (আজিমুল হক আজিম), ফাঁসিয়াখালী (গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী), চিরিঙ্গা (জসীম উদ্দিন) ও সাহারবিল (মহসিন বাবুল)। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কৈয়ারবিল ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা (বহিস্কৃত) মক্কী ইকবাল হোসেন জয় ঘরে তুলেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী নুরুল আমিন ডুলাহাজারা ইউনিয়নে বিপুল ভোট পেয়ে জয়লাভ করে তাক লাগিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত দুটি ইউনিয়ন লক্ষ্যারচর (গোলাম মোস্তফা কাইছার) ও খুটাখালীতে (মাওলানা আবদুর রহমান) জয় পেয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় উপকূলীয় ৬ ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জয় পায় পশ্চিম বড় ভেওলা (সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা) ও কোনাখালীতে (দিদারুল হক সিকদার)। দলের একক প্রার্থীর পাশাপাশি সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় ঘরে তুলেছেন বদরখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা খাইরুল বশর ও বিএমচর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ সমর্থিত এস এম জাহাঙ্গীর আলম। পূর্ব বড় ভেওলা (আনোয়ারুল আরিফ দুলাল) ও ঢেমুশিয়া (নুরুল আলম জিকু) ইউনিয়নে জয় পায় বিএনপি প্রার্থীরা।
১৮ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৮টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয় হওয়া নিয়ে কথা হয় দলের তৃণমূলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। এ সময় তারা দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আগেরবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১০টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছিল আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা। তাছাড়া উপকূলীয় ৬ ইউনিয়নের সবকটিতেই জয়জয়কার ছিল আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের। কিন্তু এবারের নির্বাচনে উপকূলের ৬ ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয় পেয়েছে মাত্র দুটিতে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকরিয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র একাধিক নেতা বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কোন কোন ইউনিয়নে গ্রহণযোগ্যতা নেই এমন অনেককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল আওয়ামীলীগের। তাছাড়া মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ইউনিয়নে তৃণমূলের মতামতকে একেবারে উপেক্ষা করা হয়েছে। আবার মনোনয়ন বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির কারণে বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশ করেই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেলেও শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে তাদের।’
বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশ করে তিন ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, খুটাখালী ইউনিয়নে বিএনপির সাবেক নেতা বাহাদুর হক ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে খলিল উল্লাহ চৌধুরী।
বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, ‘সম্ভাবনাময়ী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কফিল উদ্দিনের পরিবর্তে বিএনপির বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিনকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়ায় হারতে হয়েছে দলকে। এখানে কফিল উদ্দিন এবং কামাল উদ্দিনের ভোট যোগ করলে নির্বাচিত বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের চাইতে কয়েকগুন বেশি।’
খুটাখালী ইউনিয়নের তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, ‘এই ইউনিয়নে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে মোটা অংকের বাণিজ্য হয়েছে। যার কারণে বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী বাহাদুর হক আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান। পক্ষান্তরে ত্যাগী ও দলের প্রবীণ নেতা জয়নাল আবেদীন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এই সুযোগে জামায়াত প্রার্থী দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করেন। বাহাদুর এবং জয়নালের প্রাপ্ত ভোট যোগ করলে বিজয়ী জামায়াত প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের চাইতে কয়েকগুন বেশি।’
পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা ইব্রাহিম খলিল অভিযোগ করেন, এই ইউনিয়নটি আওয়ামীলীগের হাতছাড়া হয়ে যায় বিতর্কিত একজনকে মনোনয়ন দেওয়ায়।
ুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুএ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘গতবারের নির্বাচনে ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা জয় পেয়েছিল। সেখানে এবারের নির্বাচনে ভোটাররা আওয়ামীলীগের পক্ষে থাকলেও দলের প্রার্থীদের বিজয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধতা হিসেবে কাজ করেছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাই এবার ৮ ইউনিয়নে জয় পেয়েছে আওয়ামীলীগ।’
তৃণমূলের দাবি গ্রহণযোগ্যতা না থাকা এবং বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারীকে দলের মনোনয়ন দেওয়ায় নির্বাচনে কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে? এমন প্রশ্ন করা হলে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘দল থেকে যেহেতু তারা মনোনয়ন পেয়েছিল, তাই তাদের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের কোন কিছু না হয় সেজন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি এবং তৃণমূলকে আরো সুসংগঠিত করা হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চকরিয়ার উপকূলীয় ৬ ইউনিয়নে সুষ্ঠু, শান্তিপুর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রশাসন। একইভাবে যদি প্রথমদফার ১২ ইউনিয়নে সুষ্ঠু ভোট হতো তাহলে সিংহভাগ ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীর অনুকূলে থাকতো ফলাফল।’

পাঠকের মতামত: