ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বিহীন দলে‘র জনপ্রিয়তা তলানিতে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে আওয়ামীলীগ

SALA-152x102মিজবাউল হক, চকরিয়া 

বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘাঁটি বলে পরিচিত চকরিয়ায় বিএনপি’র দুর্গে এখন ধস নেমেছে। সালাহউদ্দিন বিহীন বিএনপি একেবারে অচল। সময়ের পরিক্রমায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতাদের সাংগঠনিক অদক্ষতার কারণে তাদের সেই ঐতিহ্য এখন সোনালি অতীত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্থানীয় নেতাদের মাঝে কোন্দল, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবসহ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের আপসকামিতার কারণে দিনদিন জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে বিএনপির। এর প্রভাবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীরা। আর বিপরীতে বিএনপির হারানো জনসমর্থন চলে যাচ্ছে তাদের মিত্র জামায়াতের ঘরে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ে জেলা, উপজেলা এমনকি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ নিজেকে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পুরো কক্সবাজার জেলায় নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পাকাপোক্ত করেছিলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মার্ষ্টাস পাস করে সপ্তম বিসিএস-পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ করেন এই নেতা। একসময়ে চাকরির সুবাদেই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হন। পরবর্তী সময়ে সরাসরি যোগ দেন জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিতে। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে রাজনীতির মাঠে তাকে আর কোনোদিন পেছনে তাকাতে হয়নি। সরকারি চাকরি অবসান ঘটানোর পর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়া আসন থেকে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী সভায় যোগ দেন। সর্বশেষ ২০০৮সালে জাতীয় নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমেদের জনপ্রিয়তায় তারই স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, গত দুই বছর ধরে সালাহউদ্দিন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে আটক রয়েছেন। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা তার নির্দেশে চলচ্ছে। সেই হিসাবে তার নির্দেশের বাইরে কেউ যাবে না। নানাভাবে সালাহউদ্দিনের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার জনপ্রিয়তার উপর ভর করে যে কোন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক জয়লাভ করবে এমনটা মনে করছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু সালাহউদ্দিন বিহীন ধানের শীষের জনপ্রিয়তা নেই বললে চলে। এই রকমই দেখা গেছে চলতি বছরের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। গত ২০ মার্চ চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর কাছে ধরাশয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার। একইভাবে ২৩এপ্রিল ও ৭মে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন, পেকুয়ার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থীরা ধরাশয়ী হয়েছেন।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, চকরিয়া ও পেকুয়ায় বিএনপি দলটির জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। দুই দফা নির্বাচনে ১৮টির মধ্যে ৮টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা। ৩টিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয় লাভ করেছে। বিপরীতে মাত্র ৪টিতে বিজয়ী হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের। জাতীয় পার্টিও ১টিতে জয়লাভ করেছে। তবে নানা প্রতিকুলতার মাঝেও ২টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে জামায়াত। উপজেলা পর্যায়ের এক জামায়াত নেতার জানান, নির্বাচনে নিজ দলের অবস্থান আরও ভালো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের নানামুখী চাপ মামলার কারণে অন্যান্য ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি। তবে এই রকম সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাকী ইউনিয়ন গুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতাম। সেখানেও বিজয় হতো বলে জামায়াত নেতারা জানান।

এদিকে আওয়ামীলীগ নেতাদের মতে, নির্বাচনের ফলাফল আরও অনেক ভালো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে কিছু ক্ষোভ থাকায় সেই লক্ষ্য অর্জন হয়নি। নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে গিয়ে নির্বাচনের ফলাফল অনেক সময় বিরোধীদের পক্ষে চলে যাচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিদ্রোহী দমানো গেলে আওয়ামীলীগের অর্জন আরও ভালো হতো।

বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচনী মাঠ সরকার বিরোধীদের জন্য এখনও নিরাপদ নয়। নির্বাচনের নামে এক ধরনের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। তাছাড়া বিএনপির অনেক নেতাই জেলে, অনেকেই সাজানো মিথ্যা মামলায় পলাতক। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। নতুবা তৃণমূলের এ নির্বাচনে শাসক দলের কোনো অস্তিত্বই থাকত না। যথাযথ নির্বাচন হলে শুধু বিএনপির প্রার্থীদের জয় জয়কার দেখা যেত। ফলাফলের ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ের একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, সরকার নির্বাচন কমিশনের মতো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল পুরো উল্টো হতো।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাঁশিয়াখালীর ইউপি’র চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, দলীয় প্রতীক নিয়ে তৃণমূল আবার জেগে উঠেছে। এবারের ইউপি নির্বাচনে ফলাফল আরও ভালো হওয়ার কথা ছিলো। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ ও অনেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা লড়াই করেছে। এ সুযোগে বিরোধীরা ফায়দা নিচ্ছে।

পাঠকের মতামত: