ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় টিআইবি-সনাকের মানববন্ধনে বক্তাদের অভিমত

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক দোষারোপের সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::   হিন্দু স¤প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লাসহ দেশের অন্তত ১৫টি জেলায় শতাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজনৈতিক দোষারোপের ঘেরাটোপে আটকে এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায়, নিয়মিত বিরতিতে এধরণের সহিংসতা ঘটছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। তাই এই ধারাবাহিক সহিংসতাকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল দশটায় চকরিয়া উপজেলা সদরের থানা সেন্টার এর সামনের সড়কে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব কথা বলেন সনাক-টিআইবি, চকরিয়ার নেতৃবৃন্দ।

সনাক-টিআইবি, চকরিয়ার সভাপতি বুলবুল জান্নাত শাহিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে টিআইবি’র অবস্থানপত্র পাঠ করেন সনাক চকরিয়ার ইয়েস মো: ইসফাতুল হোসাইন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সনাক-টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো: আবু বকর, সনাক সদস্য জনাব জিয়া উদ্দিন, জনাব মহব্বত চেীধুরী, স্বজন সদস্য আবুল মাশরুর, ফাতেমা বেগম, জাহানারা বেগম, খালেদা খানম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি-সনাক চকরিয়ার সনাক, স্বজন, ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্যবৃন্দ, ও চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ।

মানববন্ধনে সনাক-টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো: আবু বকর বলেন, “আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জীবন-জীবিকার ওপর প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসন দুঃখজনক ব্যর্থতার পরিচয় দিলো। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার আসামী করা হলো; অথচ চিরাচরিত রাজনৈতিক দোষারোপের বাইরে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ স্থানেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পূর্ববর্তী সমস্ত সহিংসতাতেও আমরা একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যায় এবং নিয়মিত বিরতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতেই থাকে।”

সনাক-চকরিয়ার সভাপতি বুলবুল জান্নাত শাহিন বলেন, “বিগত এক দশকে তিন হাজারেরও অধিক সহিংস হামলায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দেড় হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, প্রতিমা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের একটি ঘটনাতেও আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তথ্য পাই না। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই হামলাকারীদের আরো উস্কে দিচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িকতার বীজ জিইয়ে রেখেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করে সহিংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ অসম্ভবই রয়ে যাবে।”

সনাক সদস্য মো: জিয়া উদ্দিন ও মহব্বত চৌধুরী তাদের বক্তব্যে বলেন, “প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নয়, বরং দলমত নির্বিচারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে পরিস্থিতি এতদূর গড়াতো না বলেই আমরা বিশ^াস করি। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক অতীতে রামু, উখিয়া, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্য থেকে এই আশংকা অমূলক নয় যে, প্রতিটি সহিংসতার পেছনেই কোনো না কোনো স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ আছে; ধর্মের মোড়কে যা ভয়ংকর আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কিন্তু পর্দার পেছনের কুশীলবরা অদৃশ্য আঙ্গুলের ইশারায় সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।” এইসব প্রভাবশালীদের সুরক্ষা দিতেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হয় নাÑ এমন সন্দেহ অলীক হবে না মন্তব্য করে বক্তারা আরো বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নে অপরাধীকে সুরক্ষা প্রদান না করে প্রচলিত আইনে এধরণের ফৌজদারি অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

 

পাঠকের মতামত: