ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৬ লেনের মধ্যে ৩ লেন ও অ্যাপ্রোচের নির্মাণকাজ শেষ

চকরিয়ায় স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতু দিয়ে যানচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গায় ৩২১ মিটার দীর্ঘ ও ১৫.১ মিটার প্রস্থের ছয় লেনের স্বপ্নের মাতামুহুরী সেতুর মধ্যে তিন লেনের নির্মাণকাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটির দুদিকে ২৭৫ মিটার করে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষের দিকে তিন লেন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এজন্য বাকি কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে চকরিয়া পৌর শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় যানজটের চাপ অনেকাংশে কমে আসবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি নির্মিত হবে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। সেই ডিজাইনের সাথে সঙ্গতি রেখে মহাসড়কে নির্মিত হচ্ছে ছয় লেনের চারটি সেতু। সেগুলো হলো পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু, দোহাজারীর সাঙ্গু সেতু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু। এই চার সেতুর নির্মাণকাজে অর্থায়ন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতামুহুরী সেতুর ছয় লেনের মূল নির্মাণকাজ শুরু করা হয় ২০১৮ সালের বন্যার পর। সেতুর মূল নির্মাণকাজের তদারকি করেছে জাইকার নিজস্ব টিম। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্কের আওতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছয় লেনের উক্ত চার সেতুর মধ্যে প্রথমবারের মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্কের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুলফিকার আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতুর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেতুটির তিন লেন এবং দুদিকের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি তিন লেনের কাজ শুরু করতে বিদ্যমান পুরনো সেতুটি ভেঙে সেখানে নতুন করে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। এজন্য পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়া তিন লেনের ওপর দিয়ে চলতি মাসের মধ্যেই যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়ার তৎপরতা চলছে।

তিনি জানান, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তিন লেনের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে মহাসড়কের দোহাজারীর সাঙ্গু সেতুর। তখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতামুহুরী সেতু ও সাঙ্গু সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। তবে চলতি মাসের শেষ দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মাতামুহুরী সেতুর তিন লেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এজন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তোড়জোড় চালাচ্ছেন।
জাইকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ডিজাইন অনুযায়ী ছয় লেনের সেতুর মধ্যে বিদ্যমান পুরনো দুই লেনের সেতুর দক্ষিণাংশে প্রথমে তিন লেনের নতুন সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি তিন লেনের নির্মাণকাজ শুরু করতে বিদ্যমান পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছয় লেনের এই সেতুর মধ্যে মাঝখানের চার লেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার ও দ্রুতগতির যানবাহন। বাকি দুই লেন দিয়ে চলবে ধীরগতির তথা স্থানীয় যানবাহন। এছাড়া এই দুই লেনে (উভয় পাশে) ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক মিটার করে উন্মুক্ত থাকবে।

তিনি জানান, ডিজাইন অনুযায়ী ছয় লেনের এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৩২১ মিটার। পূর্ব প্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত (কাকারা রাস্তার মাথা) এবং পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় পর্যন্ত এই সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ছয় লেনের মূল সেতুর প্রস্থ রয়েছে ৩০ দশমিক ২ মিটার। সেতুটির তিন লেনের ১৫ দশমিক এক মিটারে ধীরগতির স্থানীয় যানবাহনের জন্য ৩ দশমিক ৬ মিটার এবং ফুটপাত থাকবে ১ মিটার। বাকি মিটারে নির্ধারিত রয়েছে দ্রুত গতির দুই লেন।

এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইনে মাতামুহুরী সেতুর তিন লেনের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম।

পাঠকের মতামত: