ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া কৈয়ারবিল ইউপি নির্বাচনে নৌকা পাচ্ছেন বিএনপির আবজাল!

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: আগামী ২৮ নভেম্বর ততৃীয়ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সোমবার ১৭ অক্টোবর ১০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক পেতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান মিলিয়ে ৪৬ জন প্রার্থী। এছাড়াও আবেদনকারীদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্নস্তরের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।

প্রতিটি ইউনিয়নে চার থেকে পাঁচজন আওয়ামীলীগ নেতা দলের মনোনয়ন চাইলেও এবার উপজেলার একমাত্র ইউনিয়ন কৈয়ারবিলে নৌকার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন দুইজন। তাঁরা হলেন চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়াত বিএনপি নেতা শহীদ হোছাইন চৌধুরীর ছেলে সদ্য বিদেশ ফেরত আফজালুর রহমান এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদক জন্নাতুল বকেয়া রেখা।

স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বলেন, ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে কৈয়ারবিলে নৌকার প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ চৌধুরী। কিন্তু এবার সেই তিনি কৌশলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁিড়য়েছেন। গতবার দলের অনেকে প্রার্থী হতে চাইলেও এবার সবাই নিশ্চুপ।

অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান হানুসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ডাকসাইডের অনেক নেতা, এমনকি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ছোট-খাট নেতাকেও ইতোমধ্যে বিএনপি নেতা আফজালুর রহমান চৌধুরী ম্যানেজ করে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের দাবি, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকে এবার আওয়ামী লীগের নৌকা ছেঁেড় দেয়ার বিনিময়ে প্রতিজন নেতা কমহলেও লাখ টাকার বেশি সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেইজন্য তাঁরা এবার নৌকা বিএনপির হাতে তুলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামীলীগের তৃনমুলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় কৈয়ারবিল ইউনিয়নে এবার নৌকা নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আর্দশে অনুসারী আওয়ামীলীগের কোন নেতাকে খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছেনা।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শুধু কৈয়ারবিল ইউনিয়ন নন, পাশাপাশি নৌকা পেতে এখন বিএনপি নেতা আবজালুর রহমান চকরিয়া উপজেলা থেকে জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদে আসীন নেতাদের অনুকম্পা পেতে জোর চেষ্ঠা চালিয়ে আসছেন। এছাড়াও নাকি তিনি ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

জানতে চাইলে কৈয়ারবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজ আহমদ চৌধুরী বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে আমরা ইতোমধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ বিশেষ বর্ধিত সভা করেছি। সভায় ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী ও ইউনিট কমিটির সভাপতি সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সভায় এবারের নির্বাচনে কেউ প্রার্থী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। তাই সবার সিদ্বান্তে আফজালুর রহমান চৌধুরী ও জন্নাতুল বকেয়া রেখার নাম প্রস্তাব করে আমরা উপজেলা আওয়ামীলীগের মাধ্যমে জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তরে পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, আমি গতবার নৌকা পেলেও ষড়যন্ত্রের কারণে জিততে পারেনি। তাই এবারও নৌকা নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে রাজি হয়নি। তবে আফজালুর রহমান কাউকে কোন ধরণের সুবিধা দেয়নি। তিনি বর্তমানে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বে আছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কাছে নৌকার জন্য ফরম জমা দেওয়া আফজালুর রহমান চৌধুরী কখনো আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। তাঁর পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আফজালুর রহমান ছাত্র জীবনে হাটহাজারী মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন। সেখানে ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন বলে এলাকায় প্রচার আছে। তিনি লেখাপড়া শেষে দীর্ঘবছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন। সম্প্রতি সময়ে ইউপি নির্বাচন উপলক্ষ্যে তিনি এলাকায় এসেছেন।

এলাকাবাসির দাবি, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের দুইবার চেয়ারম্যান ছিলেন আফজালুর রহমানের বাবা প্রয়াত আলহাজ শহীদ হোছাইন চৌধুরী। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও আহবায়ক ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। অপরদিকে আফজালুর রহমানের অপর ভাই প্রবাসি আশরাফুল ইসলাম রাসেল দীর্ঘ অনেক বছর ধরে চকরিয়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের অন্যতম পৃষপোষক হিসেবে কাজ করছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে।

চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নে বিএনপি পরিবারের সদস্য কীভাবে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছেন জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই ইউনিয়নে কজন নৌকার জন্য ফরম জমা দিয়েছেন তা আগে দেখতে হবে। সেখানে কোন ধরণের বিচ্যুতি থাকলে অবশ্যই সেটি যাছাই-বাছাই করা হবে। তারপর প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের দপ্তরে পাঠানো হবে।

 

 

পাঠকের মতামত: