ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন এ পর্যন্ত নিহত ৭৬

image_155070_0নিউজ  ডেক্স ::::

ঢাকা: প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে জনগণ যেমন নতুন নেতৃত্ব পেয়েছেন পাশাপাশি ৭৬ পরিবার হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জন কিংবা আপনজনকে। এর মধ্যে পরিবারের আয়ের প্রধান যেমন আছেন, আছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরাও।

জানা গেছে, কেন্দ্র দখল করে সিল মারা ও জালভোট দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে শনিবার অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ছ’জনে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরা, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ভোট চলার সময় একজন করে এবং গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভোট গণনার সময় সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

অপরদিকে রাজশাহীর বাগমারার সব ইউনিয়নে একদিন আগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হলেও সেখানে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরো তিন শতাধিক মানুষ।

শনিবার ৭০৩ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ ধাপে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ছয় ধাপে ভোটের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার পর শনিবারের ভোটের আগ পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়। এর সঙ্গে শনিবার নতুন করে যোগ হলো আরো ছয়টি লাশ। এ নিয়ে ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় ৭৬ জনের জীবন গেল।

স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নতুন বার্তা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী শনিবারের নির্বাচনে নিহতরা-

নরসিংদী: জেলার রায়পুর উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামে হোসেন আলী (৫৫) একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হোসেন আলীর বাড়ি মধ্যনগর গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তাদের মতে, দুপুরে মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের জাল ভোট দিতে বাধা দেন হোসেন আলী। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয়।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহার উদ্দিন বলেন, দুর্বৃত্তরা হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এদিকে রায়পুরার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী বিপ্লব ও তার ছোট ভাই সোহাগকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কুপিয়ে আহত করেছে বলে জানা গেছে। তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লা: চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের দুই সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তাপস চন্দ্র দাশ (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে উত্তর চান্দলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তাপস চন্দ্র দাশ তার বাড়ি উত্তর চান্দলা গ্রামে।

পুলিশ জানায়, সাধারণ সদস্য প্রার্থী মোরগ প্রতীকের রেজাউল করিমের অনুসারীদের সঙ্গে চাপকল প্রতীকের সুলতান আহমেদের অনুসারীদের ভোট দেয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই তাপসের মৃত্যু হয়।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের কালডাঙ্গী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিতে মাহবুব (২৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবুল কাশেম বলেন, আহত অবস্থায় পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে মাহবুবকে মৃত অবস্থায় পান চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন। তারা হলেন- বাবুল (৩৫), নাসিরুল (৩০), লিয়াকত আলী (৩০), আজিজুল (২৮) ও নাজিম (৫৫)। তাঁদের মধ্যে নাজিম ও আজিজুলের অবস্থা গুরুতর। নাজিমকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজশাহী: বাগমারার আউচপাড়া ইউনিয়নে শনিবার বিকেলে হাট গাঙ্গোপাড়া বাজারে আওয়ামী লীগ ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক নামে আওয়ামী লীগ কর্মী গুলিতে মারা যান।

নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সংঘর্ষ এলাকার মধ্যে তার মৃত্যু হলেও শরীরে কোনো আঘাতের দাগ পাওয়া যায়নি। ওই অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন জানান, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

ডিআইজি খুরশিদ বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আউচপাড়া ইউনিয়নের হাট গাঙ্গোপাড়া বাজারের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ৩৩ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

“সংঘর্ষের সময় হাতবোমার বিস্ফোরণ, পুলিশের গুলি ও টিয়ার গ্যাসের কারণে অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তি মারা যেতে পারেন।”

এ ঘটনায় আহত ১০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার জান মোহাম্মদের এবং বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলামের সমর্থকরা হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে মিছিল নিয়ে মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়।

গাইবান্ধা: সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নওশার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সংর্ঘষে একজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন।

নিহত লেবু মণ্ডল (৩২) রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নৈশ প্রহরী ছিলেন। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জামদানি গ্রামের আব্দুল কাদের মণ্ডলের ছেলে।

শনিবার রাত ৯টার দিকে ধাপেরহাট বন্দরের ফাইভস্টার মোড় এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে সাদুল্লাপুরের ইউএনও আবু রায়হান দোলন, এএসপি রবিউল ইসলাম, ওসি ফরহাদ ইমরুল কাওসারসহ বিক্ষোভকারী ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

ওসি ফরহাদ ইমরুল কাওসার জানান, ভোটগণনায় কারচুপির অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ করে প্রার্থী রফিকুলের কর্মী-সমর্থকদের করা বিক্ষোভ থামাতে গেলে তারা ইউএনও ও আইনশৃংখলা বাহিনীর উপর হামলা চালায়।

এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মহাসড়কের পশ্চিম পাশের রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের দোতালায় অবস্থানরত লেবু মণ্ডল গুলিবিদ্ধ হন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

পাঠকের মতামত: