ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ৬ ইউনিয়নে বিজয়ী চেয়ারম্যানরা কে কত ভোট পেল!

ুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুচকরিয়া নিউজ ডেস্ক :::

চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ৬ ইউনিয়নের নির্বাচন সকল জল্পনা-কল্পনা ও আতঙ্ক ছাপিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে প্রশাসন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এসব ইউনিয়নের ৫৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়।
এদিকে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহন শেষে গণনার পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। রাতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন মোহনায় স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তা এসব ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফলে এসব ইউনিয়নে যাদেরকে বেসরকারীভাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করা হয়েছে তারা হলেন, পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বাবলা (প্রাপ্ত ভোট ২১০৬), নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন (প্রাপ্ত ভোট-১৯৭৭)। কোনাখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দিদারুল হক সিকদার (প্রাপ্ত ভোট ২৩৮৮), নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মোক্তার আহমদ (২৩৩১)। পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী আনোয়ারুল আরিফ দুলাল (প্রাপ্তভোট-৭৩৪০), তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ প্রার্থী খলিল উল্লাহ চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৩৮২৮)। ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী নুরুল আলম জিকু (প্রাপ্ত ভোট-২৪৭৮), নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ প্রার্থী রুস্তম আলী (প্রাপ্ত ভোট-২০৫৫)। বিএমচর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (প্রাপ্ত ভোট-৫২২৭), নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ প্রার্থী বদিউল আলম (প্রাপ্ত ভোট-৪০১১)। বদরখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেম্বার খাইরুল বশর (প্রাপ্ত ভোট-৪২১৩), নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী আ ন ম হেফাজ সিকদার (প্রাপ্ত ভোট-৪১৬৭)।
তবে কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির চেষ্টা করলেও তা কোন কাজে আসেনি। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে তাদের সেই চেষ্টা ভ-ুল হয়ে যায়।
এদিকে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর এক সমর্থক সাংবাদিক স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি নিয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া নজর আলী রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাড়িটি থামিয়ে সেখানে তল্লাশী চালায়। এ সময় এক ভূঁয়া সাংবাদিককে আটক এবং গাড়িটি জব্দ করে এবং পরে মুছলেখা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে ।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের বড় ভেওলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে শত শত মহিলা ও পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। এ সময় বিএনপি প্রার্থী আনোয়ারুল আরিফ দুলাল অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগ প্রার্থী খলিল উল্লাহ চৌধুরী চরপাড়া নজর আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। তবে অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহন চলছে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও দাবি করেন।
সাড়ে ১১টার দিকে বদরখালী ইউনিয়নের বদরখালী কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মুবিনুল হক জানান, পাঁচটি বুথে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৮৬৯ ভোটের মধ্যে কাস্ট হয় ৮৫০টি। বদরখালী এম এস ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আমিনুল হক জানান, দুপুর বারোটা পর্যন্ত ২১৪৩ ভোটের মধ্যে কাস্ট হয় ৬ বুথে প্রায় ১২০০। ভেওলা মানিকচর ইউনিয়নে বেলা একটার দিকে একটি কেন্দ্রে জালভোট দেওয়ার সময় একজনকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। একইভাবে পশ্চিম বড় ভেওলা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, ভেওলা মানিকচর (বিএমচর) ইউনিয়নেও উৎসবমুখ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহন সম্পন্ন হয়। এই প্রতিবেদন লেখাকালীন সময় পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা চলছিল।
কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে। এতে সব ধরণের আতঙ্ক ছাপিয়ে ভোটগ্রহন সম্পন্ন শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গণনা চলছে।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, গাড়িতে সাংবাদিক স্টিকার লাগিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার সময় এক ভূঁয়া সাংবাদিককে আটক এবং ওই গাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার এবং গাড়িটি জব্দ করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ৫-৬জন করে পুলিশ ও ১৭জন করে আনসার, ৬টি ইউনিয়নে পুলিশের ২৩টি মোবাইল টিমে ১২০ জন পুলিশ, পুলিশের ৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্সে ৩৫ সদস্য, ১২০ সদস্যের ৪ প্লাটুন বিজিবি, ৪টি গাড়ি করে র‌্যাবের ৩৪ সদস্য দুটি টিমে বিভক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। মাঠে ছিলেন ৪জন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ১জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এই নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচন মনিটরিং করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো.আনোয়ারুল নাসের। সবমিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ১ হাজার ৫০৯ সদস্য কাজ করে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করতে।
উল্লেখ্য, ৬ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩১ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬৮জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৯০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় ছিলেন। এসব ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৭০হাজার ৮৩৭ জন। প্রথদফায় গত ২৩ এপ্রিল ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

পাঠকের মতামত: