ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

লবণবাহী ট্রাকে করে করোনা ছড়িয়ে পড়ুক, চায় না ইসলামপুরবাসী -মানববন্ধন ও বিক্ষোভে দাবী

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::  করোনা ভাইরাসের কারণে দেশ যখন দিনদিন ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে; মানুষের মাঝে বাড়ছে আতংক, ঠিক তখই খোলে দেয়া হয়েছে কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরের লবণমিলগুলো। লোড আনলোডসহ মিলকেন্দ্রিক নানা কাজে যাচ্ছে শতশত লবণশ্রমিক। আর লবণ পরিবহণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের মতো করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসছে ট্রাক। যেখানে চালক, হেলপারসহ সবার করোনার লক্ষণ থাকার সম্ভাবনা। এই অবস্থা চলতে থাকলে করোনামুক্ত কক্সবাজার জেলায় যে কোন সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে নিয়ন্ত্রণহীন এই ভাইরাস। গরীব, অসহায় এলাকার মানুষগুলো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাঁচানোর কোন সুযোগ থাকবে না। মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিতে হবে।-এমনটি জানিয়েছে ইসলামপুরের সর্বস্তরের মানুষ।

গত কয়েকদিন ধরে বেশ লেখালেলেখি ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদন হয়েছে। তবু জনপদে ঢুকে পড়ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লবণবাহী ট্রাকসমূহ। তাতে আতংক আরো বাড়ছে।

অবশেষে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ইসলামপুরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন।

বিক্ষোভ-মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন।

শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকে ইসলামপুরের নাপিতখালী বটতলী স্টেশনজুড়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধনে সবার দাবী ছিল একটাই -‘ট্রাক চাই না, বাঁচতে চাই।’ ‘আপাততঃ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ট্রাক নয়, লবণমিল বন্ধ রাখলে ভাল হয়।’ ‘আমরা সবাই বাঁচতে চাই, ইসলামপুর লকডাউন চাই।’
তবে, নাপিতখালী বটতলীতে বিসিকের পক্ষ থেকে চালক, হেলপারদের জীবানুমুক্তকরণের প্রক্রিয়া আব্যাহত থাকলেও তাতে যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

শুক্রবারের বিক্ষোভে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন -ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবদুশ শুক্কুর, বটতলী ট্রাক টার্মিনালের পরিচালক আনোয়ারুল আজম খোকন, চ্যানেল কক্সের সম্পাদক মনছুর আলম, ইসলামপুর ব্লাড ডোনার’স এন্ড জনকল্যাণ সোসাইটির সভাপতি নুরুল আজিম মিন্টু, সহসভাপতি ইউছুফ নবী, সিনিয়র সহসভাপতি হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হুসেন সাঈদী, সহসভাপতি নুরুল হুদা, ছাত্রলীগ নেতা ছৈয়দ মোহাম্মদ তামিম, শিক্ষক এস কে জাকের হোসেন, শামসুর রহমান শামীম, সোহেল, শফিউল আলম, তাফসীর।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উপস্থিত হন বিসিক কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান।

বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বিসিক কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান। এসময় স্থানীয় চেয়ারম্যান আবুল কালামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, দেশে যে পরিমাণ লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে তাতে আরো অন্তত ১ বছর চলবে। কোন ঘাটতি হবে না। সংকট দেখিয়ে লবণ আমদানির সুযোগ নেই।

ডিজিএম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোন শিল্প কারখানা বন্ধ না রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তাই মিলগুলো খোলা রেখেছে। এরপরও বাস্তবতা আমরা বিবেচনা করব। উর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি অবগত করবো। কারণ, মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলে কোন কাজ আমরা করব না। সব কিছু বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

এ সময় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আযাদ, সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম (দাদা), বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রিদওয়ানুর রশিদ, সহকারী নিয়ন্ত্রক মনজুর আলম, ইসলামপুরের ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এতে জানানো হয় -বতটলীতে নির্ধারিত স্থানে থাকবে বিসিকের একটি টিম। তারা চালক, হেলপারসহ পুরো গাড়িতে স্প্রে করবে। তারপর দেয়া হবে একটি টুকেন। যা একপ্রকার বৈধতার অনুমতিপত্র। টুকেন ও স্প্রে ছাড়া কোন গাড়ি লবণ পরিবহনে যেতে পারবে না।

এর আগে ইউপি চেয়ারম্যান, লবণমিল মালিকদের সাথে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে বৈঠক করেন বিসিক কর্মকর্তারা। সেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন আকারে অবগত করবে বিসিক।

বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, বিসিকের সিদ্ধান্ত হলো, সমগ্র দেশের স্বার্থে ইসলামপুরের লবন মিল চলবে। এটাই সরকারের নির্দেশ।

পাঠকের মতামত: