ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

৭৩ মিয়ানমার নাগরিক পুশব্যাক: সীমান্তে কোস্টগার্ড ও বিজিবির টহল জোরদার

rohiগিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ :::

মিয়ানমার ঘেষা টেকনাফ উপজেলার নাফনদীর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অস্থায়ী চেকপোষ্টে ৭৩ মিয়ানমারের নাগরিকে আটক করে কোষ্টর্গাড ও পুলিশ। পরে আটক রোহিঙ্গাদের টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া ও হোয়াইক্যং নাফনদী সীমান্ত দিয়ে স্ব-দেশে পুশব্যাক করা করেছে। তবে নাফনদীতে বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল দল অব্যাহত রয়েছে। এবং নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধে সেন্টমার্টিনে মাইকিং করা হয়েছে। তবে রাতের আধারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল ২৬ আগষ্ট শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে টেকনাফের মিয়ানমার জেটি ঘাটে কোস্টর্গাড টেকনাফ ষ্টেশন কমান্ডার লেঃ কমান্ডার জাফর ইমাম সজীব সাংবাদিকদের জানান, গতকাল শনিবার ভোর রাত ৪ টার দিকে আমিসহ কোস্টর্গাড শাহপরীরদ্বীপ ষ্টেশন কমান্ডার কবিরের নেতৃত্বে পৃথক একটি দল নাফনদীতে টহল কালে সাবরাং নয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ৫৬ জন রোহিঙ্গা বোঝায় একটি ট্রলার অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। পরে উদ্ধতন কতৃপর্ক্ষের নির্দেশে এ সব রোহিঙ্গা বোঝায় ট্রলারটি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এতে ২১ জন নারী, ২১ জন শিশু ও ১৪ জন পুরুষ ছিল বলে জানায়। এ সময় কিছু দূরে আরো ৮ থেকে ১০টি ট্রলার দেখা গেলেও কোস্টগার্ডের বাধার মূখে রোহিঙ্গা বোঝায় ট্রলার সমূহ মিয়ানমারের ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে ঘটনার পর থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকায় নাফনদীতে কোস্টর্গাডের টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নদীতে কোস্টগার্ডের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানায়।

এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মাইন উদ্দীন খান জানান, শনিবার ভোর রাতে টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাড়ির আইসি উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহির খানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাড়ির সামনে চেকপোষ্ট বসিয়ে বিভিন্ন গাড়ী তল্লাশি চালিয়ে অনুপ্রবেশকারী ১৭ মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়। এতে ৫ নারী, ৫ শিশু ও ৭ পুরুষ রয়েছে বলে জানায়। আটক রোহিঙ্গারা রাতের আধারে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে লোকালয়ে ডুকার চেষ্টা করছিল। পরে আটককৃতদের বিজিবির মাধ্যমে হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা তৎপর রয়েছে। তবে লোকালয়ে যাতে কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে দিকে নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্ব-স্ব এলাকায় সর্তক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে অস্থায়ী চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশী চালানো হবে বলে জানিয়েছেন।

সুত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগষ্ট শুক্রবার রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর বরাদ দিয়ে মাইকিং করে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার সমূহ না যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে বলে মাইকে এমন প্রচারনা চালানো হয়। এই তথ্য নিশ্চিত করে সেন্টমাটিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, গত ২৫ আগষ্ট রাতে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে মিয়ানমারের মেরুল্লা ও হাইসসুরাতা এলাকায় ব্যাপক আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। বঙ্গোপসাগরে দেখা গেছে মিয়ানমার নৌ-বাহিনীর ৩টি জাহাজ। এ কারনে কোন মাছ ধরা নৌকাকে পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ ও পুর্বে না যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারে সরকারী বাহিনী ও বিছিন্নতাবাদী সংঘটনের মধ্যে শুরু হওয়া সহিংসতার জের ধরে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ওইদিন সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১৪৬ মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠায় হয় বলে জানায় টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, নাফনদী সীমান্ত অতিক্রম করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা রয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি পোস্ট ও টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকা সমূহে বিজিবির সর্তক অবস্থান রয়েছে বলে জানায়।

এদিকে শুক্রবার থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া, লম্বাবিল, খারাইংগ্যা ঘোনা, উখিয়ার পালংখালী এলাকা দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা নাফনদী অতিক্রম করে সীমান্তের উপকূলীয় বিভিন্ন কেওড়া বনে লুকিয়ে থাকছে বলে জানা গেছে। এ সব রোহিঙ্গারা রাতের আধারে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, নয়াপাড়া শারণার্থী ক্যাস্প, উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প, কুতুপালং ও বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাস্পে সুযোগ বুঝে আশ্রয় নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এবিষয়ে টেকনাফ হোয়াইক্যং আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুন রশিদ সিকদার জানান, গত ২৫ আগষ্ট শুক্রবারে অন্তত হাজারো রোহিঙ্গা নাফ নদী অতিক্রম করেছে। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই উখিয়ার কুতুপালং এলাকার দিকে চলে গেছে। অন্যরা সীমান্তবর্তী বাড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত উলুবনিয়া সীমান্তের ওপারে (মিয়ানমার) মুর্হুমুর্হ গুলির শব্দ শুনা গেছে। বিজিবি সীমান্তে টহল আরো জোরদার করেছে। তবে রোহিঙ্গারা সুযোগ বুঝে আবারও অনুপ্রবেশ করতে পারে এমন আশংকা এ আওয়ামীলীগ নেতার।

পাঠকের মতামত: