কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
বহুল প্রত্যাশিত কক্সবাজারের পাঁচ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ দেখা গেলেও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বিরাজ করছে। তবে প্রশাসন বলছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ আয়োজনের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে মহেশখালী ও টেকনাফে সমাবেশ করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, কেউ ব্যালট পেপার ছিনতাই, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিতদের বাঁধা, ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইলে তাদের হাত গুড়িয়ে দেয়া হবে। আইনের কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। ভোটের আগের রাতে বা দিনে হউক এ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষনা করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কক্সবাজারে আজ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে রামু, পেকুয়া, মহেশখালী, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়।
রামুতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিয়াজুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। এ উপজেলায় দু’জনই কমবেশি জনপ্রিয়। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে রিয়াজুল আলমের যেমন জনপ্রিয়তা আছে, তেমনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সোহেল সরওয়ার কাজলও পিছিয়ে নেই।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরদের মতে, এবারের নির্বাচন সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ও তার ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহেল সরওয়ার কাজলের অস্থিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে হাসবে বিজয়ের হাসি, সেটি দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ফলাফল ঘোষণা করা পর্যন্ত।
রামু উপজেলা নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩ জন প্রার্থী। রামুতে ৬১ কেন্দ্রের ৩০১টি কক্ষে ভোট গ্রহণ চলবে। সেখানে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৮৬ জন। তৎমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ হাজার ৫৬৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৭৬ হাজার ৭২৩ জন। প্রতিকেন্দ্রে একজন ছাড়াও আপদকালীন সময়ে দায়িত্বপালন করার জন্য অতিরিক্ত ১০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মজুদ থাকবে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম। মূলত নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই করছে নিজ দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীরা। স্থানীয় সচেতন ভোটারদের ধারণা মতে, দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর লড়াইয়ে হেরে যেতে পারেন নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত ইয়াবার গেটওয়ে খ্যাত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে কে পরছেন জয়ের মালা সেটিই এখন দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে টেকনাফে জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী সমাবেশ করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ইয়াবা গডফাদারদের ভোট না দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এসপির ডাকে জনগণ কতটুকু মাদকের বিরুদ্ধে রায় দিচ্ছেন সেটি দেখা যাবে ভোটের ফলাফলে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেখানে ভোটগ্রহণ চলছে ৫৫টি কেন্দ্রের ২৫৪টি কক্ষে। ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৮ জন। তৎমধ্যে ৭২ হাজার ৬৫৭ জন এবং মহিলা ভোটার ৭৩ হাজার ১৫১ জন। প্রতিকেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও আপদকালীন সময়ের জন্য অতিরিক্ত ৮ জন প্রিসাইডিং অফিসার মজুদ থাকবে।
মহেশখালীতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ বাদশা, দোয়াত কমল প্রতীকে মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম ও মিনার প্রতীকে মো. ইরফান উল্লাহ। এখানে প্রধান দু’জনই নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী। মহেশখালীর সাধারণ ভোটারদের মতে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম ও বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ বাদশার মধ্যে। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কে হচ্ছে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেখানে ভোটার রয়েছে ২ লক্ষ ১১ হাজার ৬৫৪ জন। ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৭৪টি কেন্দ্রের ৩২০ টি কক্ষে ভোট গ্রহণ চলবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও আপদকালীন সময়ের জন্য ১০ জন প্রিসাইডিং অফিসার মজুদ থাকবে। মহেশখালী উপজেলা নির্বাচনে ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৫ প্লাটুন বিজিবি, ৩৫৯জন পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাস চন্দ্র ধর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, কেউ অবৈধভাবে ব্যালটে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করা হবে।
পেকুয়ায় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এসএম গিয়াস উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এখানেও নৌকা প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নিজ দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী।
স্থানীয় ভোটারদের মতে, পেকুয়ায় নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী আবুল কাশেম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে মূল লড়াই হবে। পেকুয়ায় দু’জনই সমান জনপ্রিয়। জনগণ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন।
পেকুয়ায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৩জন প্রার্থী। সেখানে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ২৭৯ জন। ৪০টি কেন্দ্রের ৮৫ কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। পেকুয়ায় আপদকালীন সময়ের জন্য ৬জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মজুদ রাখা হয়েছে।
উখিয়ায় ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেছা বেবী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। উখিয়ায় শুধুমাত্র পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ৩৩৮ জন। ৪৫টি কেন্দ্রের ২১১ কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে।
এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মত ভোটের পরিবেশ চায় সাধারণ ভোটারেরা। সচেতন ভোটারেরা জানান, ভোটের পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের ধরণের আতঙ্ক আছে। কিন্তু চকরিয়ার নির্বাচনের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে ভোটারেরা। চকরিয়ার মতো পরিবেশ থাকলে সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রমুখী হবে। কোন গোলযোগ হলে মানুষ আবারও ভোট প্রদান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৪৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, ৫ উপজেলায় পুলিশের পাশাপাশি ৩০ প্লাটুন বিজিবি ও ৬ প্লাটুন র্যাব মোতায়েন থাকবে। মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নে কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। আনসার সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বি কোন প্রার্থীকে বিন্দু পরিমাণ প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেওয়া হবে না। গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনের মত সকল ভয়ভীতি, হুমকি উপেক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করণীয় সব করা হবে। ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান এসপি।
পাঠকের মতামত: