ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

২৯ এপ্রিল স্মরণে: দুর্যোগ ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণের আহবান উপকূলবাসীর

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::

দুর্যোগ ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহবান জানিয়েছে উপকূলের বাসিন্দারা।

তারা বলেছে, জাতিসংঘ সংস্থা ও আইএনজিওদের সরাসরি প্রকল্প পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে এবং স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব প্রদানে সুযোগ দিতে হবে।

সেই সাথে উপকূল বাঁচাতে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের আহবান জানিয়েছের উপকূলের ভাগ্যাহত মানুষেরা।

রবিবার (২৯ এপ্রিল) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে ভয়াল ২৯ এপ্রিল স্মরণে সভা থেকে বক্তার এ দাবী জানান।

কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা বলেন, উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারেনী সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি। প্রলয়ংকারী এই ধ্বংসযজ্ঞের ২৭ বছর পার হতে চলেছে, এখনো স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনী, বরং বাড়ছে আতংক। ঘরবাড়ী হারা অনেকে এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারেনী। ক্ষতি না কাটতেই উপকূলে সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, নাডা ও কোমেন নামক সাইক্লোন একের পর এক আঘাত হানছে উপকূলে। দিশেহারা উপকূলের জনগন, আতংকে নদী তীরের জনগন। স্থানীয় জনগন নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে মোকাবেলা করছে এগুলোর। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় নেয়া হয়নি কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ’ম্যারি এন’ বাংলাদেশের দক্ষিন পুর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। লন্ডভন্ড করে দেয় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারিদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত। পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা দেখে কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক। ২৯ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২৫০ কি:মি: (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ফুট) উঁচু জলোচ্ছাস হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে সরকারী হিসাবে উপকূলে ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন মানুষ নিহত এবং প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়। ২০ লাখ গবাদি পাশু মারা যায়। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ।

উপকূলবাসী জানায়, ভোলা, মনপুরাসহ দ্বীপের চারপাশে অরক্ষিত হয়ে আছে অনেক বেড়ীবাঁধ। প্রতি বছর জোয়ার ও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় দ্বীপের শতশত একর জমির ফসল। সাগরে লঘুচাপ, নি¤œচাপ কিংবা মেঘ দেখলেই আতঙ্কে চমকে উঠে তারা।

কোস্ট ট্রাস্টের আঞ্চলিক টীম লিডার জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন-কোস্ট ট্রাস্টের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম, মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কবি রুহুল কাদের বাবুল, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম মাস্টার, এডভোকেট এস.এম ইব্রাহিম খলীল, মাস্টার শফিউল্লাহ কুতুবী, অধিকার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট আবু মূসা মোহাম্মদ, সিবিএন এর যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর, পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলনের মূখপত্র আবদুল আলীম নোবেল, এডভোকেট মো. সাইফুদ্দিন, কোস্ট ট্রাস্টের কর্মকর্তা মো. ইয়াকুব, শাহীনুর ইসলাম, জুলফিকার হোসেন, মোহাম্মদ আলম, আবু মোহাম্মদ কাইছার, সাইফুল ইসলাম, মনসুর আলম প্রমুখ।

সভায় কুতুবদিয়া সমিতি, কুতুবদিয়া ছাত্র পরিষদ, ২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থেকে সংহতি জানায়।

পাঠকের মতামত: