ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

১৯ লাশের পরিচয় নিয়ে বিপাকে পুলিশ

বিশেষ প্রতিবেদক :
২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারী থেকে ৬ মে পর্যন্ত জেলায় অজ্ঞাতনামা ২১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদেরকে বেওয়ারিশ হিসেবে শহরের বড় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পরে ২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারলেও বাকি ১৯ জনের পরিচয় এখনো পায়নি পুলিশ। আর এসবা মৃতদেহের পরিচয় নিশ্চিত করতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, সাধারনত নিহতের পরিচয় জানতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকায় ছবি সহ বিবৃতি, দেশের সকল থানায় ছবি ও বেতার বার্তা পাঠানো হয়। এছাড়া নিহতের ডিএন.এ সংগ্রহ করে রাখা হয়। যদি নিহতের লাশ পচে না থাকে তবে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, হোটেল বুকিং ও যাতায়াতের সময় যদি জাতীয়তা পরিচয়পত্র কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা চাকরীর পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ করে হোটেল কর্তৃপক্ষ ও যানবাহনের সাথে জড়িতরা তবে পরিচয় নিশ্চিত করাটা অনেক সহজ হত।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিগত ৪ মাসে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হওয়া মৃতদেহের মধ্যে রয়েছে হত্যা করে পাহাড়ে লাশ ফেলা দেওয়া, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ও খুন কনেদী কিংবা সাগরে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া সহ হাসপাতালে বারান্দায় কিংবা চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের অনেকেই।
উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারী শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়া নিয়ে উখিয়ার কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৫ বছর বয়সী একজন অজ্ঞাতনামা কিশোরী। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ মার্চ সে মারা যায়। এরপর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয় । কিন্তু আগুনে দগ্ধ সেই কিশোরীর পরিচয় এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
রামু থানার এসআই সৈয়দ সানাউল্লাহ বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারী দরিয়ানগরের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত আনুমানিক ২৬ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু এরপর কেটে গেছে ৩ মাস ১৩ দিন। কিন্তু সেই যুবকের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
সদর থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম বলেন, সাগরে ভেসে আসা অবস্থায় ১৭ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার শহরের হোটেল শৈবালের পশ্চিমপাশ থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর কেটে গেছে ৩ মাস ৩ দিন। কিন্তু নোনা জলের ভেজার কারণে লাশটির চেহারা কিছুটা বিকৃত হয়ে গেছে। তাই পরিচয় নিশ্চিত হতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।
চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াসির আরাফাত বলেন, ২২ ফেব্রুযারী চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর দুদিন পরে পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়। এরপর কেটে গেছে ২ মাস ২৭ দিন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে । তাই বিস্তারিত জানাতে পারছি না। তবে যতদূর জানি এখনো এর কোন সুরাহা হয়নি।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ( অপারেশন) মাঈন উদ্দিন বলেন, ১০ এপ্রিল কলাতলী রোড়ের বিএম রিসোর্ট থেকে ২৫ বছর বয়সী এক যুবতীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। হোটেলে লিপিবদ্ধ নাম ঠিকানা সঠিক নয়। তাই মৃতদেহ উদ্ধারের ১ মাস ১০ দিন পার হলেও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তার পরিচয় পেতে আঙ্গুলের ছাপ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ২ মে দিনগত রাতে ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে অজ্ঞাত তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার পার হয়েছে ১৭ দিন। কিন্তু এখনও ওই তরুণীর পরিচয় মেলেনি। মৃত্যুর কারণও জানাতে পারছে না পুলিশ। তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে কবর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পৌরসভা সূত্র জানায়, চলতি বছরে ২১ টি মৃতদেহ পুলিশ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফনের জন্য দিয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে পরে দুজনের মৃতদেহ আদালতের মাধ্যমে স্বজনরা গ্রহন করেছে। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারী কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী একজন অজ্ঞাতনামা পুরুষের উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ, ১৫ ?ও ২৪ জানুয়ারী ঈদগাও থকে অজ্ঞাতনামা দুটি মৃতদেহ,২২ ফেব্রুয়ারী সদর হাসপাতাল থেকে আনুমানিক ৫৮ বছর বয়সী উদ্ধার হওয়া বৃদ্ধের মৃতদেহ,২৮ ফেব্রুয়ারী রামুর জোয়ারিয়ারনালার ৬ নং ইউপির নুরপাড়ার রাবার বাগানের ভেতর থেকে ৫২ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ, ১ মার্চ উখিয়া উপজেলার রাজাপালং থেকে ৪৫ বছর বয়সী উদ্ধার হওয়া নারীর মৃতদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ মার্চ সোনাদিয়া সাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া দুই যুবকের মৃতদেহ, ১৬ মার্চ চকরিয়ার ইনানী রিসোর্ট সামনে সড়ক দূর্ঘটনায় ৭০ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধের মৃতদেহ, ২৬ মার্চ সদর হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসারত ৬০ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধের মৃতদেহ, ৩১ মার্চ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে ১০ দিন বয়সী শিশুর মৃতদেহ, ২২ এপ্রিল পেকুয়ার মগনামা ঘাটের নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া নবজাতকের মৃতদেহ এবং ৬মে সদর হাসপাতাল থেকে ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষের উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান বলেন, পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হওয়াদের মধ্যে এখনো ১৯ জনের মৃতদেহ রয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান বলেন, চলতি বছর অজ্ঞাতনামা নিহতদের মধ্যে ২২ জনের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এছাড়া অন্য আরেকজনের ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র আফরাজুল হক টুটুল বলেন, বিকৃত লাশের বেলায় পরিচয় পেতে একটু বেকায়দায় পড়ে পুলিশ।

পাঠকের মতামত: