নিউজ ডেস্ক ::
সারাদেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে তার ৯০ শতাংশ আসছে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী রুট ব্যবহার করে। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় তা এখন ইয়াবা পাচারের মূল ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। এরপর তা জালের মতো ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হচ্ছে তার ৫০ শতাংশেরও বেশি মিলছে কক্সবাজারে। দেশব্যাপী পুলিশ-র্যাবের চলমান অভিযানের তালিকায় শুধু এ জেলারই ১২০ ইয়াবা কারবারির নাম রয়েছে। এক জেলার এত সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ীর তালিকাভুক্ত হওয়া নজিরবিহীন। নতুন তালিকায় কক্সবাজারের তিনজন একরামের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে তালিকার ৩৫ নম্বরে থাকা কাউন্সিলর একরামুল হক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তবে তার পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকের দাবি- তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। অন্য দুই একরাম পলাতক। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তালিকায় সারাদেশে মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ব্যক্তি।
পুলিশ-র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ দেশের যে কোনো এলাকায় কোনো মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার বা মাদকদ্রব্য জব্দ করা হলে তার রুট কক্সবাজারে পাওয়া যায়। অল্প সংখ্যক ঘটনায় কুয়াকাটাকে রুট ব্যবহার করে ইয়াবা ঢাকায় এসেছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশের শক্তিশালী সিন্ডিকেটে স্থানীয় নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, বৃদ্ধ, চালক-হেলপার, বেকার ও রোহিঙ্গা নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ব্যবহার করে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। মিয়ানমার থেকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, নদী ও সাগর পথে ইয়াবার চালান এ দেশে ঢুকছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় কক্সবাজার জেলার যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে এমপি আবদুর রহমান বদির নাম। গোয়েন্দা তালিকায় তাকে বলা হয়েছে ইয়াবার অন্যতম নিয়ন্ত্রক। তার অজান্তে ইয়াবা ব্যবসা করা অসম্ভব বলে মনে করা হয়। তালিকার দুই নম্বরে রয়েছে টেকনাফের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল করিম, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার মং চেন, মং উইন মিন্থ, মজিবুর রহমান, আবদুস শুক্কর, আমান, জাফর আহমেদ, শফিক ওরফে শফি, ফয়সাল, মো. ইসলাম, নূর আলম, মো. আলম, এমদাদ হোসেন, জহির আহম্মেদ, আলম ওরফে শাহ আলম, মেহেদী হাসান, তৈয়ব, আনোয়ার, নূর মোহাম্মদ, সৈয়দ আলম, ফরিদুল আলম, মাহামুদুল হক, আবদুল আজিজ, ফিরোজ আহমেদ, জসীম উদ্দীন, নূরুল বশার, আবুল হাশিম, সেলিম আহম্মেদ, নূর মোহাম্মদ, শাহ আলম, রেদোয়ান, এমাদুল ইসলাম, টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীপাড়ার মৃত আবদুস সত্তারের ছেলে একরামুল হক, শাহজাহান পারভেজ, মো. সুমন, রফিক, আলম, তিন সহোদর কেফায়েত উল্লাহ, রাহামাত উল্লাহ ও ছালামত উল্লাহ, আমিন শরীফ, ইমান শরীফ, শাহজাহান মিয়া, দিদার মিয়া, মো. ইসমাইল, সৈয়দ আলম, আছু মিয়া, মো. ইসলাম, চান মিয়া, টেকনাফের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোজাহার মিয়ার ছেলে একরামুল হক, সৈয়দ হাছান, ফরিদুল আলম, আবদুর রহমান, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ফজলু আহম্মদের ছেলে মো. একরাম, আবদুল গণি, মো. আলী, আমির মোহাম্মদ, ফরিদ আহম্মেদ, আবুল কালাম, জাফর আলম, কালাম হোসেন, হাছন আহম্মদ, রশিদ মিয়া, আবদুর রহমান, আবদুল গফুর, আলাউদ্দিন, ফজল আহমদ, শামসুল আলম, মো. আমিন, আলী আহম্মদ, আকতার কামাল, জাফর আহম্মদ, আবদুল করিম, আরিফা বেগম, আবদুল হামিদ, কবির আহমেদ, খায়ের হোসেন, মো. ফারুক, তৈয়ব, শামসুল আলম, নুরুল আলম, আলী আহম্মদ, সাব্বির আহমদ, সাইদুর রহমান নিপু, সলিমুল্লাহ, আবদুল জব্বার, মো. ইয়াহিয়া, আবদুল গফুর, মো. তৈয়ব, ফারুক, বুলু, আবদুল মজিদ, আবদুস শরীফ, আবু বকর সিদ্দিক, আবদুর রব, শামসুল আলম, দেলোয়ার হোসেন, লিয়াকত আলী সওদাগর, মো. শাহ, হোসাইন আহম্মদ, শামসুল হুদা, মুরাদ হাসান, আবু তাহের, হাসান, নুরুল কবির, মোস্তাফিজুর রহমান. মো. আলম, ইকবাল হোসেন ও জয়নাল আবেদীন।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকায় ৫৬ নম্বরে থাকা মো. একরাম দেশের অন্যতম শীর্ষ মাদকের গডফাদার। তার বাড়ির কাছে নাফ নদ। পলাতক এ ব্যক্তি প্রশাসনকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিলেন। এ ছাড়া তালিকার ৫২ নম্বরে থাকা একরামুল হক জেলে থেকে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন। পরে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও ইয়াবার কারবারে জড়ান। এখন তিনিও পলাতক।
মিয়ানমার থেকে নদী ও স্থলপথে বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজার হাজার ইয়াবা ঢুকলেও এর নেপথ্য নায়করা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারের মংডু এলাকায় প্রায় অর্ধশত ইয়াবা কারখানা গড়ে তুলেছে মিয়ানমার। এর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পাঠকের মতামত: