ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু

অনলাইন ডেস্ক ::

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। নানা কারণে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০১৮ উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে আছে। তারা ডায়ারিয়া, ঠাণ্ডা, কাশি, চর্মরোগ, চোখের রোগ, আমাশয়, পেটের ব্যথা, নিউমোনিয়াসহ নানা রকম ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার শিশু প্রাণঘাতি অপুষ্টিতে ভুগছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গর্ভবর্তী মা রয়েছেন ২২ হাজার। তাদের মধ্যে অনেকে ডায়রিয়া, স্বাসতন্ত্রের সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে ওরাল পোলিও, ওরাল কলেরাসহ বিভিন্ন ধরণের ভ্যাক্সিন ও ভিটামিন এ খাওয়ানো হয়েছে। অপরিকল্পিত বসবাস, নোংরা-বাসি খাবার, অপরিচ্ছন্ন বসবাস, সর্বোপরি পরিবেশগত কারণে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে আড়াই লাখ শিশু। এর মধ্যে অধিকাংশ শিশু পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও কাজ করে যাচ্ছে। উখিয়ায় সরকারি ১১টি ও বেরসকারি ৭৬টি মেডিকেল ক্যাম্পে শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলায় সরকারি ছয়টি ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা পরিচালিত ২০টি মেডিকেল সেন্টারে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের সুস্থ রাখতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, মৌসুমী ফল খাওয়াতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী-শিশুর যৌন হয়রানি, চর্ম রোগ, মাদক সর্ম্পকে সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে তাদের জন্য প্রতিদিন ১ কোটি ৬০ লাখ লিটার পানি প্রয়োজন। প্রতি মাসে ১২ হাজার ২০০ মেট্রিকটন খাদ্য প্রয়োজন। ১ লাখ ৪৪ হাজার সিঙ্গেল মায়ের জন্য সুরক্ষা কর্মসুচি নেয়া দরকার। প্রায় ৫৩ হাজার ২৬৬ জন গর্ভবর্তী নারীকে জরুরি প্রসূতি সেবা দিতে হবে। ৪৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র এবং ১৪৪টি স্বাস্থ্য পোস্টের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মায়েদের জন্য শতাধিক পুষ্টি কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার।

সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (পরিবার পরিকল্পনা) বেনজির বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার সময় অপুষ্টিসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি নিয়ে এসেছেন। তাদের সুরক্ষায় টিকা, স্বাস্থ্য সেবা দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরণের ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করছে। জায়গা স্বল্পতার কারণে সেখানে হাসপাতাল তৈরি করা যাচ্ছে না। এ কারণে তাদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যক্ষা, ডিপথেরিয়া, জলবসন্ত ও যৌনসহ নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি রয়েছে।

সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আইসিডিডিআরবির প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান ডা. আফতাব উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বারডেমের সাবেক পরিচালক ডা. শুভাগত চৌধুরী, ইউনিসেফের পরামর্শক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: