ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১১দিনে চকরিয়ায় বাবা-ছেলের করোনা জয়

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া :  কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রথম করোনা সনাক্ত হওয়া একই পরিবারের দুইজন স্বাস্থবিধি মেনে (বাবা-ছেলে) কোভিড-১৯ করোনাকে জয় করে সম্পূর্ন সুস্থ হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার প্রায় এগার দিন হোম আইসোলেশনে থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের নির্দেশনা ও চিকিৎসা নেয়ার পর তারা এখন সুস্থ হয়ে আইসোলেশন অবমুক্ত করা হয়। কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার এক সপ্তাহের পরে গত ৬ মে আবার বাবা-ছেলে দুইজনকে করোনা টেষ্ট করানো হলে ল্যাব পরীক্ষায় তাদের রির্পোট নেগেটিভ আসে। এ উপজেলায় প্রথম বারের মতো হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিয়ে কোভিড-১৯ জয় করা সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কাছারি পাড়া এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্টসের কর্মকর্তা সাঈদুল ইসলাম (৩৪) ও তার বৃদ্ধ বাবা আবদুল মতলব (৬০)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: মোহাম্মদ শাহবাজ।
শুক্রবার (৮মে) বেলা ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা জয় করা দুইজনকে হাসপাতালের পক্ষথেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে ছাড়পত্র দেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ শাহবাজ। এসময় উপস্থিত ছিলেন-ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ইউপি সদস্য মো: মহিউদ্দিনসহ স্অন্যান্য কর্মকর্তারা।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, উপজেলার প্রথম দুইজন কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোগী যারা হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধানে হোম আইসোলেশনে ছিল তারা সম্পূর্ণ সুস্থ। প্রায় ১১দিন তারা বাসায় চিকিৎসা করে রোগ মুক্ত হয়ে হোম আইসোলেশন থেকে অবমুক্ত হলেন। গত ২৭এপ্রিল গার্মেন্টস কর্মকর্তা সাঈদুল ইসলাম কোভিড-১৯ করোনা পজিটিভ হয়। তিনি আক্রান্ত হওয়ার পরে ২৯এপ্রিল তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের করোনা টেষ্ট পরীক্ষা করানো হয়। এতে সাঈদুলের বৃদ্ধ বাবা আবদুল মতলবের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তবে ওই সময় তাদের মধ্যে কোন উপসর্গ ছিলোনা।
তিনি আরও বলেন, করোনা পজিটিভ যখন আসে তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা দুইজনকে হোম আইসোলেশে রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। আমাদের পক্ষথেকে সব সময় চেষ্ঠা ছিল কিভাবে তাদের সুস্থ করে তোলা যায়। যখন সে ওষুধ দরকার হতো আমরা তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তা জানাতাম। নিয়ম মেনে চলা ও চিকিৎসা নেয়ায় তারা করোনাকে জয় করতে স্বক্ষম হয়েছে। তাদের গত ৬ মে আবার করোনা ফলোআপ টেষ্টা করানো হয়। ওই টেষ্টে তাদের রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এটা মূলত উপজেলার জন্য অত্যান্ত আনন্দের ও খুশির সংবাদ। তাই আজ তাদেরকে হাসপাতালে ডেকে এনে আনুষ্টানিকভাবে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস জয় করা সাঈদুল ইসলাম বলেন, প্রথম যেদিন করোন পজিটিভ রিপোর্ট সেদিন খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম। গত ২৭ এপ্রিল আমার পজিটিভ রেজাল্ট আসার পরে ২৯ এপ্রিল আমার বাবারও পজিটিভ রেজাল্ট আসে। হাসপাতালের ডাক্তারদের আশ্বাসে মনে শক্তি ফিরে আসে। তাই আমরা দুইজনে বাড়িতেই চিকিৎসা নেব বলে হাসপাতালের ডাক্তারদের জানাই। তারা সেভাবে আমাদের চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল যেভানে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে সেভাবে আমরা চলেছি। প্রচুর পরিমাণে গরম পানি, গরম পানির ভাপ নেয়া,বিভিন্ন ধরনের মসল্লা দিয়ে ঘনঘন রং চা খাওয়া সহ নানা ধরনের টুটকা গ্রহণ করেছি। আল্লাহ আমাদের সহায় ছিল বলে ১১দিনের মাথায় বাবা-ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছি।
আমরা আক্রান্ত হওয়ার পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন। তারা আমাদের চিকিৎসা ও খাদ্যসহ সার্বিক সহযোগীতা করেন। যার জন্য আমরা দ্রুত সুস্থ হতে পেরেছি। আমাদের সহযোগীতায় যারা এগিয়ে এসেছেন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে ফাঁসিয়াখালীর চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি সব সময় খোঁজ নিয়ে সবাইকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, চকরিয়া উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৯ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড-১৯) রোগে আক্রান্ত হয়। তৎমধ্যে এই প্রথম দুইজন কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোগী যারা হাসপাতালে ভ্যর্তি ছাড়াই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধানে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিয়ে রোগ মুক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ১৯ রোগীর মধ্যে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ৮জন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের নির্দেশনায় হোম আইসোলেশন (বাড়ি) রয়েছেন ৯জন। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে ১জন ও অপরজন লামা উপজেলায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ##

পাঠকের মতামত: