মাহাবুবুর রহমান. কক্সবাজার :: ক্লাস নেই,পরীক্ষা নেই তবুও স্কুল কলেজে বেতন ও পরীক্ষার ফি দাবী করছে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্টান। এতে আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। অনেকে সংশ্লিষ্ট্য শিক্ষা প্রতিষ্টানে দরখাস্ত করে অথবা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিপুল টাকার বেতন কিছুটা মওকুফ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পায়নি। এতে অনেকে বেতন আতংকে স্কুলেই যাচ্ছে না। সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষক এবং কর্মচারীদের বেতনের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরু বছরের বেতন আদায় করা হলেও সে সব ননএমপিও শিক্ষকদের ঠিকমত বেতন দিচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্টানে।
অভিযোগ উঠেছে স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্টান নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিল তাদের আর্থিক সুবিধার জন্যই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরু বছরের বেতন আদায় করা হচ্ছে। শহরের বৈদ্যঘোনার তপন শর্মা, কাজ করেন হোটেল বয় হিসাবে,তিনি জানান তার ২ ছেলে পার্শবর্তী বিবেকানন্দ স্কুলে পড়ে করোনা সংকটের কারনে দীর্ঘ ৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকলেও কোন দিন স্কুল থেকে একটা ফোন করে ছাত্র কেমন আছে জিঙ্গেস করেনি। এখন বছরের শেষে এসে পুরু বছরের বেতন দাবী করছে সে হিসাবে আমার প্রায় ৬/৭ হাজার টাকা বেতন আসছে এখন আমি ভাত খেতে পারছিনা এত বেতন কিভাবে দেব ? এখন স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে সব বেতন না দিলে বার্ষিক পরীক্ষার জন্য কি কাগজ পত্র আছে সেগুলো দেবে না। তাই আমি এবং ছেলেরা স্কুল থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
শহরের বাহারছড়া এলাকার ব্যবসায়ি আনিস বলেন,কক্সবাজার কেজি স্কুলে পড়ে আমার ছেলে মেয়ে মার্চ থেকে করোনা সংকট শুরু হলেও সেই থেকে স্কুল বন্ধ কিন্তু জুলাই মাসে ঠিকই স্কুল থেকে বার বার এক মহিলা শিক্ষক ফোন করে সম্পূর্ন বেতন আদায় করেছে। এখনও বাকি টাকার জন্য কয়েক বার ফোন দিয়েছে। আমার মত সব অভিভাবকদের ফোন করে অনেক টা জোর করে বেতন আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে জেলা শহরের অনেক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অভিযোগ করেন পুরু বছর স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও এখন স্কুল কলেজ থেকে পুরু বছরের বেতন এবং ফি দাবী করছে এতে আমরা চরম বিপদে পড়েছি। আমাদের ব্যবসা বানিজ্য নাই হাতে টাকা নেই এখন এক সাথে এত টাকা কিভাবে দেব। আমার টাকা না দিলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বার্ষিক পরীক্ষার জন্য কি সব প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দিবে না বলেছে এতে ছেলে মেয়েরা খুবই আতংকে আছে। সুমন,ফরিদুল আলম,রশিদ আহামদ সহ অনেক অভিভাবক জানান,অনেকে দরখাস্ত নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা কিছু কমিয়ে দিচ্ছে তবে বেশির ভাগ অভিভাবক অসচেতন হওয়ায় তারা দরখাস্ত দিতে পারছেনা কমাতেও পারছেনা,তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে শুধু স্কুল পর্যায়ে নয় কলেজ পর্যায়ে চলছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের হিড়িক।এদিকে জেলায় অবস্তিত চকরিয়া ডিগ্রী কলেজ, বদরখালী কলেজ, সিটি কলেজ, চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজ, ডুলাহাজার কলেজ, উখিয়া ডিগ্রি কলেজ, রামু কলেজ, মহেশখালী কলেজ সহ অনেক মাদ্রাসায় পুরু বছরের বেতন আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে বেশ কয়েকজন ননএমপিও শিক্ষক জানান,প্রতিটি স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়ার কথা বলে পুরু বছরের বেতন আদায় করা হচ্ছে অথচ আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানে ননএমপিও শিক্ষকদের সম্পূর্ন বেতন দিয়েছে কিনা। সেখানে উল্টো বলা হয়,কাজ করেন নি বেতন কিভাবে চান,পুরু কক্সবাজার সহ সারা দেশে শিক্ষা ব্যবসায়িরাই তাদের পকেট ভরার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরকরে টাকা আদায় করছে।
এ ব্যাপারে জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল আজম বলেন,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে এখনো ঠিকমত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি। তবে জেলায় প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি স্কুল আছে সে গুলোতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরু বছরের টাকা আদায় করা হচ্ছে এমন কথা শুনা যাচ্ছে। আসলে আমরা সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোন কাজ করতে পারিনা। সরকার আমাদের এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা দেয়নি। তবুও লিখিত অভিযোগ জানালে আমরা কিছু করতে পারি। একই মত দেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ছালেহ উদ্দিন চৌধুরী,তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এখন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরু বছরের বেতন আদায় করা ঠিক নয়। সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে অর্ধেক করে দিতে পারে। যেহেতু কোন ক্লাস হয়নি পরীক্ষা হয়নি সেটা বিবেচনা করা দরকার।
পাঠকের মতামত: