বিশেষ প্রতিবেদক :: উত্তম বড়ুয়া নামের এক যুবকের ফেসবুকে কোরআন অবমাননা করে ছবি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুর প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে ২০৫ জনের মধ্যে ১ নম্বর অভিযুক্ত হন উত্তম বড়ুয়া।
রামু ট্র্যাজেডির সাত বছর পার হতে চললেও সেই উত্তম বড়ুয়ার আজও খোঁজ মিলেনি। তিনি কোথায় আছেন, তা কেউ জানে না। ঘটনার পর শিশুপুত্রসহ নিখোঁজ থাকলেও কয়েক মাস পর ফিরে এসে রামুতে বাস করছেন উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়া। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটছে তার।
রিতা বড়ুয়া জানান, উত্তম বড়ুয়ার হদিস তার পরিবারের কেউ পাচ্ছে না। উত্তমের কারণে তাদের জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে।
রিতা আরও বলেন, রামু ট্রাজেডির পর ক্ষতিগ্রস্তরা নানাভাবে সহযোগিতা পেলেও তার পরিবার নিগৃহীতই থেকেছে। সন্তান নিয়ে তার চরম কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
উত্তম বড়ুয়ার মা মাধু বড়ুয়া বলেন, উত্তম আমার একমাত্র ছেলে। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল আমরা কিছুই জানিনা। আমার ছেলে ধর্ম অবমাননাকর কোনো কাজ করবে আমি বিশ্বাস করিনা। সেদিন বিনা অপরাধে আমি, আমার বোন আটক হয়ে বেশ কয়েকদিন কারাবাস করেছি। ভাঙচুরের শিকার হয়েছে আমার বাড়িটিও। জেল থেকে মুক্ত হয়ে ধারদেনায় বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করলেও প্রতিবন্ধী মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে দিন যাচ্ছে অতি কষ্টে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছেলে কোথায় জানিনা। কোনো রাতেই ভাল মতো ঘুমাতে পারি না। গভীর রাতে উত্তম দরজা খুলতে ডাকছে শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাড়ির বাইরে গিয়ে দেখি ছেলের অস্তিত্ব নেই। আমার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে- এ পর্যন্ত বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাধু বড়ুয়া।
রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বলেন, খবর পেয়েছি উত্তমের স্ত্রী বাবার বাড়ির সহযোগিতা ও মানুষের কাছ থেকে ধারদেনায় চলছেন। দুই মুঠো ডাল-ভাতের আশায় পরের বাড়িতে কাজ করেন উত্তমের মা মাধু বড়ুয়া। চরম আর্থিক কষ্টে আছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোরআন অবমাননার একটি ছবি পোস্টি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামুতে সংঘটিত হয় ভয়াবহ সহিংসতা। রামুর বৌদ্ধমন্দির ও বেশকিছু বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া দুর্বৃত্তরা। এর পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর একই ঘটনা সংঘটিত হয় কক্সবাজারের সদর, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। এসব এলাকায়ও বৌদ্ধমন্দির ও বেশকিছু বসতি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
পাঠকের মতামত: