ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সীমান্তে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় একাধিক স্থান দিয়ে চলছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

Ukhiya-Pic-Rafique-300x207উখিয়া প্রতিনিধি ::

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা, প্রচন্ড খরতাপ। টহলরত সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা পালা বদলের জন্য ফিরে গেছে ক্যাম্পে। সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এ সময় প্রায় ফাঁকা। একইভাবে বিকেল পুরিয়ে সন্ধ্যা। এ সময় বিজিবি টহল দলের রদবদলের কারণে সীমান্ত প্রায় অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। এ সুযোগে শুরু হয় পুরোদমে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। সীমান্তে এসব অপরাধ চলছে বিজিবির কথিত সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে একাধিক দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
সম্প্রতি সরেজমিন প্রত্যক্ষ করা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের উখিয়ার ধামনখালী, রহমতের বিল, ডেইলপাড়া, করইবনিয়া, ঘুমধুমের নয়াপাড়া, জলপাইতলী, তুমব্রু পশ্চিম কুল, বাঁশ বাগান সহ মাহমুদুল ড্রাইভারের বাড়ি সংলগ্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে ৬টা, দুপুর ১২টা থেকে ২টা, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাতভর মিয়ানমার থেকে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে থাকে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তবাসীদের অভিযোগ। তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্প পাড়ার আইয়ুব আলী, পশ্চিম কুলের শাহজাহান ও তার ভাই মোহাম্মদ কবির, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জলপাইতলীর শাহা আলম, হাকিম, তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্প পাড়ার মোঃ রুবেল। এছাড়াও আরো কয়েক জনের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করে এনে তার নির্দিষ্ট স্থানে আশ্রয়ে রাখে। এরা মাথাপিছু রোহিঙ্গার নিকট থেকে ২শত টাকা আদায় করে। ঘুমধুম জলপাইতলী এলাকার সিএনজি অটোরিক্সা চালক নুর হোছন, নুরুল আমিন, লম্বা নুর হোছন, শাহা আলম, বেতবুনিয়ার নুরুল বশর, বিজিবি ক্যাম্প পাড়ার ইজিবাইক চালক মোঃ রুবেলরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী শত শত রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির এলাকায় পৌছে দেয়। এ বাবদ মাথাপিছু ৩শত হারে নিয়ে থাকে। ধামনখালী ও রাহমতের বিল পয়েন্ট দিয়ে জিয়াবুল, মুফিজ, হাশেম সহ ৮/১০ জন একইভাবে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে কুতুপালং শিবির এলাকায় পৌছে দিয়ে থাকে।
উখিয়ার করইবনিয়া, ডেইলপাড়া সংলগ্ন রেজু আমতলী, ওয়ালিদং পাহাড়ী সীমান্ত দিয়েও অনুপ্রবেশ করছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। এ তিন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদেরকাছ থেকে মাথাপিছু ৩/৪শত টাকা করে স্থানীয় বিভিন্ন দালাল চক্র আদায় করে থাকে বলে ঘুমধুম ইউনিয়নের চৌকদার বাদশা মিয়া, ডিগলিয়ার শাহজাহান, করইবনিয়ার আব্দুর রহিম, ইকবাল সহ বেশ কয়েকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথিত কয়েক জন দালাল জানায়, সীমান্তের তুমব্রু থেকে উখিয়ার ঘাট কাস্টমস্ পর্যন্ত প্রায় ৫ কিঃ মিঃ সড়কের তুমব্রু ও বেতবুনিয়ায় বিজিবির চেকপয়েন্ট রয়েছে ২টি। এক্ষেত্রে বিজিবির সোর্সকে জনপ্রতিনিধি টাকা নিয়ে বস্তা (রোহিঙ্গা) পাচার করা হয়। কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গড়ে তোলা রোহিঙ্গা বস্তিতে নতুন অনুপ্রবেশকারীদের ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোহিঙ্গা বস্তি পরিচালনা কমিটির কথিত সেক্রেটারী রাকিবুল্লাহর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে, পশ্রয়ে রেখে তাদের সুবিধামত স্থানে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে মাথাপিছু রোহিঙ্গাকে ৫শত টাকা করে দিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, উক্ত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা রকিবুল্লার ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি জানান, কয়েক মাস পূর্বে তাকে আটক করে বিজিবির মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলেও কিভাবে সে ফের অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গা বস্তিতে বহাল তবিয়তে বসবাস করে আবারো পুরনো কায়দায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ঘুমধুম তুমব্রু একাধিক পয়েন্ট দিয়ে দালালদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটানো ও চোরাচালান প্রসঙ্গে ঘুমধুম ইউ,পি, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটার কথা স্বীকার করে বলেন, কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে অবস্থানরতদের সাথে মিয়ানমারে অবস্থান রোহিঙ্গাদের পারিবারিক সহ বিভিন্ন সম্পর্ক থাকা এবং এদেশের সমস্ত পথঘাট ও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট তাদের নকদর্পনে থাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির সাথে সমন্বয় করে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার ১৭ বিজিবির ব্যাটেলিয়ান কমান্ডার লেঃ কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্তের উল্লেখিত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘাট বা পয়েন্টগুলো দিয়ে গত মার্চ মাসে ৩০৩ জন ও চলতি মাসের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭৩ জন সহ ৬৭৬ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আটক পূর্বক সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা ফেরত পাঠিয়েছে। বিজিবি সদস্যদের কথিত সোর্সদের পশ্রয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সম্পর্কিত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সীমান্তে যে সমস্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে সার্বক্ষণিত নিরাপত্তার স্বার্থে যে পরিমাণের জনবল প্রয়োজন, তার অর্ধেকও কর্মরত না থাকায় অনেক সময় বিজিবির অগোচরে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। তবে এ ব্যাপারে বিজিবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজনের সহায়তায় অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: