নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকায় মোজাহেরুল ইসলাম ও আবুল কাশেম নামের দুই ব্যক্তির জালিয়াতির গোমর ফাঁস করলেন স্থানীয় বাসিন্দা মোজাহের আহমদের ছেলে শাহআলম। তিনি দাবি করেছেন, খতিয়ানে জমি না থাকলেও ভুঁয়া খতিয়ান দেখিয়ে অভিযুক্তরা পেশিশক্তির বলে করোনা সংক্রমণ সময়ে জনমানব শুন্য এলাকায় রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে ভীতি ছড়িয়ে মাটি ভরাটে অন্যের জমি দখলে নিয়েছে। চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়কের পাশে জায়গা দখলের ঘটনায় বর্তমানে কোরালখালী এলাকায় সড়ক সংকোচিত হয়ে পড়ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সর্বশেষ সম্প্রতি সময়ে ওই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে বাহাদুর মিয়া নামের চকরিয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের একজন কেয়ারটেকার।
সম্প্রতি সময়ে কোরালখালী এলাকায় জমি দখলচেষ্ঠার ঘটনায় চকরিয়া থানায় ভুক্তভোগি জমি মালিকপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলেও বৈঠক অমান্য করে অভিযুক্ত ওই চক্র ১৫ এপ্রিল রাতে ৭-৮টি ডাম্পার ট্রাকে মাটি ফেলে ওই জমি দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদিপক্ষের লোকজন।
ভুক্তভোগী জমি মালিক সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী গ্রামের মোজাহের আহমদের ছেলে শাহআলম জানান, ১৯৯১-৯২ সালের ৪১ নম্বর বন্দোবস্তি মামলামুলে তিনি ও তাঁর স্ত্রী বুলুআরা বেগম ৪৫৯২/ক দাগের ৬১১ নং খতিয়ানের এক একর ১০ শতক ও ভাই ফরিদুল আলম এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা খাতুন ৪০ নম্বর বন্দোবস্তি মামলামুলে ৪৫৯২/খ দাগের ৬১২ নং খতিয়ানের ২০ শতক জমির মালিক। বন্দোবস্তির পর প্রায় ৩০বছর ধরে দুইভাই উল্লেখিত জমিতে বৈধভাবে ভোগদখলে চাষাবাদ করে আসছেন।
ভুক্তভোগী জমি মালিক শাহআলম ও ফরিদুল আলম অভিযোগ তুলেছেন, সম্প্রতি সময়ে একই এলাকার অর্থাৎ কোরাখালী গ্রামের গুলু মিয়ার ছেলে যথাক্রমে মোজাহেরুল ইসলাম, আবুল কাশেম, মো.গোলাল, মোস্তাফা কামাল ও জালালের নেতৃত্বে একটি চক্র অনাধিকার প্রবেশ করে উল্লেখিত জমি জবরদখলের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় কয়েকদিন আগে ফরিদুল আলম বাদি হয়ে দখলচেষ্ঠায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী জমি মালিক শাহআলম জানান, পশ্চিম বড় ভেওলা মৌজার ৩৬৪ নং খতিয়ানের ৪৫৯২ দাগে মোট জমি ছিল ২ একর ৪০ শতক। উল্লেখিত জমির পুর্বের মালিক ছিলেন স্থানীয় মুবিনুল হক গং। পরবর্তী সময়ে সরকার উল্লেখিত জমি থেকে ১ একর ৩০ শতক জমি সড়ক সম্প্রসারণে অধিগ্রহন করেন। ফলে ওই খতিয়ানে অবশিষ্ট জমি থাকে ১ একর ১০ শতক। সেখান থেকে সরকারি মৎস্য বিভাগ ওই এলাকায় একটি মৎস্য সেন্টার স্থাপনে আরো ২৬ শতক জমি অধিগ্রহন করেন। এরপর জমি থাকে ৮৪ শতক।
পরবর্তী ২০০২-২০০৩ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ১৮ নং এলএ মামলা মুলে আরও ৫২ শতক জমি সেখান থেকে অধিগ্রহন করেন। সর্বশেষ ৪৫৯২ দাগে অবশিষ্ট জমি থাকে ৩২শতক। বিভিন্ন সময়ে আগের মালিক মুবিনুল হক তিনটি দলিলে উল্লেখিত ৩২ শতক জমি বিক্রি করে নি:স্বর্তবান হন। তৎমধ্যে তিনি ৩ নং দলিল মালিককে ৫ শতক, ৪ নং দলিল মালিককে ৪ শতক ও ৫ দলিল মালিককে ২৩ শতকসহ মোট ৩২ শতক জমি বিক্রি করেন।
ভুক্তভোগী শাহ আলম দাবি করেন, খতিয়ানে জমি না থাকলেও ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারী মুবিনুল হকের কাছ থেকে ৬ নং দলিলমুলে ২৩ শতক জমি ক্রয় করেন সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী গ্রামের মোজাহেরুল ইসলাম। ওই জমির বিপরীতে চকরিয়া উপজেলা ভুমি অফিস থেকে বিশেষ কায়দায় একটি নামজারি জমাভাগ খতিয়ান (নং ২৩০০) তৈরী করেন মোজাহেরুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে আমি উল্লেখিত নামজারি খতিয়ানের বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি দায়ের করি চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমির কাছে। আমার আবেদনটি আমলে নিয়ে জমি বিক্রির পর খতিয়ানে আর অবশিষ্ট জমি না থাকার বিষয়টি প্রমাণ পান সহকারি কমিশনার। এরপর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মোজাহেরুল ইসলামের তৈরীকৃত উল্লেখিত ২৩০০ নং জমাভাগ খতিয়ানের সবধরণের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষনা করে দেন।
ভুক্তভোগী শাহ আলম আরও জানান, একইভাবে ৪৫৯২ দাগের আগের মালিক মুবিনুল হকের ওয়ারিশ বোনের ছেলে যথাক্রমে রফিক উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও আনোয়ার উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর কাছ থেকে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ১৬৩৭ নং দলিলমুলে ভাগের ৩ কড়া ছাড়াও অতিরিক্ত ৫ শতক জমি ক্রয় করেন আবুল কাশেম। যদিও মুবিনুল হকের দাগে নিজের কোন জমি নেই, এমনকি ওয়ারিশদেরও কোন জমি নেই। মুলত ভুয়া খতিয়ানের অনুবুলে মোজাহেরুল ইসলাম ও আবুল কাশেম এসব জমি ক্রয় করার অজুহাতে পেশিশক্তির বলে আমাদের বন্দোবস্তিপ্রাপ্ত জমি দখলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
জমি মালিক ফরিদুল আলম বলেন, তাঁর ৪৫৯২/খ দাগের বন্দোবস্তি ৪০ নং মামলার বিপরীতে প্রাপ্ত ২০ শতক জমির ব্যাপারে হাইর্কোটের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। কিন্তু হাইর্কোটের ওই আদেশ অমান্য করে অভিযুক্ত চক্রটি আমার ভাই শাহ আলমের অংশের জমির সঙ্গে আমার জমির অংশও দখলে নিয়েছে।
জমি মালিকপক্ষের অভিযোগ, দখল চেষ্ঠা চালানোর সময় অভিযুক্ত ভুমিদুস্য চক্রটি অবৈধ অস্ত্রের মুখে ভীতি ছড়িয়ে দখলচেষ্ঠার ঘটনাটি করেছে। এতে জীবনহাণির আশঙ্কা থাকায় ভুক্তভোগী জমি মালিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁধা দিতে সাহস পাননি। বর্তমানে জমিতে চারিদিকে ঘেরাবেড়া দিচ্ছে। এমনকি আগুনে ভুক্তভোগী দুইভাই শাহ আলম ও ফরিদুল আলমের বসতবাড়ি পুড়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। এখন উল্টো বেশ কটি অনলাইন পোস্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বানোয়াট কল্পকাহিনী সাজিয়ে মোজাহের ও আবুল কাশেম গং আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এধরণের ভিত্তিহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জমি মালিক শাহ আলম ও তাঁর পরিবার প্রতিবাদ করছেন।
ভুক্তভোগী জমি মালিক শাহ আলম জানান, তাঁর জায়গা দখলের ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত মোজাহেরুল ইসলাম গংয়ের বিরুদ্ধে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের কাছে নালিশ দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগটি এমপি মহোদয়ের কাছে বিচারধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহ আলম।
অপরদিকে জবর দখলে জড়িত আবুল কাশেম ও তাঁর সহযোগি কামালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ চকরিয়া থানার ওসির কাছে দিয়েছেন। ওই অভিযোগটি তদন্ত করছেন থানার ওসি মো.হাবিবুর রহমান।
এদিকে অবৈধ দখলবাজ চক্রের কবল থেকে বন্দোবস্তি মামলামুলে সরকার থেকে প্রাপ্ত জায়গা উদ্ধারে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি আলহাজ জাফর আলম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার ওসির জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী দুইভাই শাহ আলম ও ফরিদুল আলম। ##
পাঠকের মতামত: