ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করাচ্ছে চড়াদামে নিম্নমানের প্রকাশনার বই কিনতে

Pictureএসব বই কিনতে গিয়ে এক অভিভাবকের দূর্গতি কথা লিখে পাঠিয়েছেন আমাদের কাছে, পাঠকের জন্য তা হুবহু প্রকাশ করা হলো :

 বিদ্যা অর্জন করা ফরয। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, প্রয়োজনে চীন দেশে গিয়ে বিদ্যা অর্জন কর। কিন্তু আমরা নিম্ন, মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের বাড়ির পার্শ্বে গজে উঠা রকমারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (কিন্ডারগার্টেন-মাদ্রাসা) ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। একটু ভালো পরিবেশে পরিচ্ছন্ন পড়ালেখা অর্জনের জন্য ছেলেমেয়েদের ভর্তি করালেও ঘটছে হিতে বিপরীত। ইন্টারমিডিয়েট লেবেলের শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো হয়। গ্রেজুয়েশন লেবেলের শিক্ষক খুবই কম। বছর শুরুতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে কোন প্রকাশনা কত টাকা দিবে, যেন হাট-বাজারে গিয়ে দরদাম করে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়। যে প্রকাশক যত বেশী টাকা দিবে, পড়ানো হচ্ছে সেসব প্রকাশনার বইগুলো। যদিওবা বইগুলো মানসম্মত হোক আর না হোক। বই কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে ধরে দেয়া হয় স্থানীয় লাইব্রেরীর বুক লিষ্ট। বাধ্য করা হয় তাদের সিলেক্ট করা বইগুলো কিনতে। দামও হাকিয়ে নেয় জবরদস্তী, ২০ টাকা দামের বই লুপে নিচ্ছে ১০০ টাকা। অভিভাবকদের পকেট থেকে দেদারছে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। আর লাভবান হচ্ছে লাইব্রেরী মালিকরা ও কন্টাক হওয়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নতুন সিলেবাস অনুযায়ী নির্ধারিত পাঠ্য তালিকা ২০১৭ সালের ইবতেদায়ী ৪র্থ শ্রেণীর জন্য ব্যাকরণ: মাতৃভাষা বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা লেখক: মোঃ আহসান হাবিব, আল আরাফাহ্ পাবলিকেশন্স ও ইংরেজি গ্রামার: Learners’ English Grammar Translation & composition-Md. Mohasin Khan, Al Arafah Publications নির্ধারণ করে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় লাইব্রেরীর বুক লিষ্ট ব্যাকরণ: নতুন পদ্ধতিতে বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি শিক্ষা (৪) এবং ইংরেজি গ্রামার: Care Advanced Grammar (iv)-Care Books নামক বইটি পাঠ্য করে অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীকে কেনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠান উল্লেখিত দুইটি বুক লিষ্ট ব্যবহার করে একবার বলে এই লিষ্টের আরেকবার বলে ঐ লিষ্টের বইগুলো কিনতে হবে। বই কিনতেও কত হয়রাণি। আমার কথা হচ্ছে বই দুইটিই গ্রামার কিন্তু প্রকাশক ভিন্ন। গ্রামার তো গ্রামারই। তাহলে এটা না ওটা পড়বে কেন? কোন একটাই পড়লেই তো হল। তাহলে কি আমরা ধরে নেবা প্রকাশক থেকে লাইব্রেরী মালিকরা এবং লাইব্রেরি থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা টাকা (উপঢৌকন) নেওয়ার কারণেই কি এই দশা। এই সমস্ত কিন্ডারগার্টেন বা কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসায় সরকারি নিয়মনীতির কোন বালাই নেই। হরেক রকমের গাইড বই (পাঞ্জেরী, নিউটন, ক্যাপ্টেন, লেকচার, আল ফাতাহ, দিগন্ত, আল আরাফাহ ইত্যাদি), সাধারণ জ্ঞান, সহায়ক গাইড, জ্যামিতি, কবিতা ও গল্পের বই পাঠ্য করে নামে মাত্র ছাড় দিয়ে (৫%-১০% কমিশন) ছাত্র-ছাত্রীদের কিনতে বাধ্য করে। কিন্তু এই সমস্ত বইগুলো শ্রেণী পাঠদান করা হয় না। শুধুমাত্র উপঢৌকন নেওয়া টাকাগুলো জায়েজ করতে অভিভাবকদের ঘাড়ে শসা ভাঙে। কিন্তু কোন কি প্রতিকার হয় না। শিক্ষক জাতির কর্ণধার। শ্রদ্ধার পাত্র। নামমাত্র ফায়দা লুটের জন্য কেন ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের এত হয়রানি করা হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, এমপিও ভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখার মনোন্নয়নের জন্য। দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মৌলিক প্রশিক্ষণ। আবার এসব শিক্ষকরা (যে সকল শিক্ষক কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত) কোচিং সেন্টারের নামে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থীদেরকে প্রলোভন/উদ্বুদ্ধ করছে প্রাইভেট পড়ার জন্য। অথচ একই শিক্ষক শ্রেণি পাঠদানে রত। তাহলে কেন প্রাইভেট/কোচিং এ ভর্তি হতে হয় শিক্ষার্থীদের। আমরা ধারণা করছি নিশ্চয় ক্লাসে তেমন কোন পড়ানো হয় না। যা ইচ্ছে তা করে সময়ক্ষেপণ করে ঘন্টার বাজার জন্য অপেক্ষা করা। তাই শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে প্রাইভেট/কোচিং এ ভর্তি হতে হয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকরাও নিরুপায়।

তাই আমরা আশা করব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়–ন, পরিচালনা করুন, জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করুন, অযথা পাঠ্য করে অপ্রয়োজনীয় টাকা ব্যয়ের জন্য অভিভাবকের পেটে ছুরি মেরে প্রকাশক কিংবা লাইব্রেরী মালিকের পেট না ভরিয়ে শিক্ষায় সচেতন হওয়ার সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী কিংবা অভিভাবকদের পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধ করুন। আর না হয় অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে না পারলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে, শিক্ষা থেকে ঝরে পড়বে শিক্ষার্থীরা। ফলে অভিশপ্ত হয়ে পড়বে সমাজ, দেশ ও জাতি।

পাঠকের মতামত: