ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

শহরে অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসা, চলছে জুয়া ও মদের আসর

Potita-2বিশেষ প্রতিবেদক:
মদ, নারী আর তাশ-এই তিনেই সর্বনাশ। পর্যটন শহর কক্সবাজারের অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলে প্রকাশ্যে চলছে পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপরাধ। শহরের টপ টেররদের চাঁদাবাজি, মাদক, নারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হয় এসব হোটেল থেকেই। এখানে বসানো হয় নারী দেহের পসরা। শুধু আবাসিক হোটেল নয়- অপরাধ চালানো হয় বাসাবাড়ী ও আবাসিক মেসকেন্দ্রিক। অভিযোগ রয়েছে- এসব কাজে খোদ মলিকপক্ষই জড়িত। স্বাভাবিক ব্যবসা মন্দা- তাই পতিতাবৃত্তি করে হোটেলগুলো চালানো হয় বলে অনেক হোটেল মালিক জানিয়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে অবৈধ দেহ ব্যবসা। তবু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না।

শহরের লালদীঘির পাড় এখন অনেকটা পতিতার হাঁট হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেছে। পতিতা খদ্দের এখানে মিলিত হয়। ২৪ ঘন্টা চলে কেনা বেচা। ভুলা বাবুর পেট্রোল পাম্প থেকে শুরু করে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত ‘পতিতার হাঁট’ বিস্তৃত। ক্রমশঃ বাড়ছে পতিতা বাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের লালদীঘিপাড়ের হোটেল জিয়া প্রসিদ্ধ পতিতালয়। বিভিন্ন বয়সী পতিতার সাথে চুক্তিভিক্তিক সম্পর্ক হোটেল মালিকের। আবাসিক নয়, হোটেল জিয়ার মূল ব্যবসা এখন পতিতা। ঘন্টাভিত্তিক ভাড়া দেয়া হয় হোটেল কক্ষ। পতিতা ও খদ্দেরের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে ৪/৫ জন কর্মচারী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকবার বারণ করলেও তা মানেনা। মার্কেটের মালিক হওয়ায় উল্টো হুমকি দেয়া হয় প্রতিবাদকারী দোকানদারদের। শুধু হোটেল জিয়া নয়, জিয়া কমপ্লেক্সস্থ আমেনা গেস্ট হাউজ, পাঁচতারা বোর্ডিং, নজরুল বোর্ডিং দীর্ঘদিনের মিনি পতিতালয় হিসেবে পরিচিত।
বঙ্গবন্ধু সড়কের হোটেল সাতকানিয়া, নূর এ ছকিনা, হোটেল ফরিদিয়া, শাহপীর বোর্ডিং, হোটেল মেমোরী, ফরিদিয়া বোর্ডিং, এন্ডারসন রোডের হোটেল গার্ডেন, হোটেল সৌদিয়া, যমুনা গেস্ট হাউজে জমজমাট পতিতা ব্যবসা চলে।
প্রধান সড়কের হোটেল রাজমনি, হোটেল জিলানী, হোটেল আল নিজাম, হোটেল আল মুবিন, বাজারঘাটার হোটেল গোল্ডেন ইন, সী-হার্ট রিসোর্ট, রয়েল বোর্ডিং, আল হোসাইন, হোটেল শাহেরাজসহ অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলে পতিতা ব্যবসা, মাদক ও জুয়ার হাঁট বসে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হোটেল সৈকতসহ আদালত পাড়ায় ভ্রাম্যমান পতিতার অবাধ বিচরণ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ ফজল মার্কেটের সামনে হোটেল রাজমনিতে দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা, মাদক সেবন, ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম চলে আসছে। তাদের অপকর্ম চলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। এলাকার পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। অবশেষে স্থানীয় জনগণ অতীষ্ট হয়ে শনিবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে হোটেল থেকে হাতে-নাতে ৪জন পতিতা আটক পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ সময় আটক করা হয় হোটেলের মালিক মোহাম্মদ আলম ও ম্যানেজারকে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে বলে থানা সুত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজার অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব ডাক্তার মোহাম্মদ আমিন জানান, শহরের অনেকে আবাসিক হোটেলে প্রতিতাবৃত্তি, মাদক ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ কর্মকা- ঘটে চলেছে। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এ কারণে অপরাধ কমছেনা। যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পর্যটন নগরীর পরিবেশ। আগামী রমজানের আগেই চিহ্নিত আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযান চালানোর জোর দাবী জানান তিনি।
কক্সবাজার অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু জাফর ছিদ্দিকী, বাজারঘাটা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা কামাল উদ্দিন, কক্সবাজার ব্রাদার্স ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম হাসান, শ্রমিক নেতা এম ইউ বাহাদুর, ছাত্রনেতা মারুফ ইবনে হোসাইনসহ স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শহরকে পতিতাবৃত্তিসহ অসামাজিক কার্যকলাপমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবী জানান।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের সহজ সরল অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক মেয়েদের দেহ ব্যাবসায় বাধ্য করানোর অভিযোগও মিলছে হরহামেশাই। ক্যামেরার সামনে মুখ খোলতে চাননা এসব হোটেলে কর্মরতরা অথবা মালিক পক্ষ। আর পতিতারাও চলে নেকাব পরে-যেন তাদের স্বজনেরা চিনতে না পারে। শহরের লালদীঘির পাড়ের প্রতিদিনের চিত্র এটি।
দেহ ব্যাবসায় জড়িয়ে পড়া নারীরা জানালেন তাদের জীবণের করুণ কাহিনী। এদের অনেকেই জানায়, অভাবের তাড়নায় তারা এসেছে এই পেশায়। আবার অনেকে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েছেন এ কাজে। এদের অনেকেই বলেন, হোটেল মালিক তাদের এমনভাবে ব্যবহার করেছেন- ইচ্ছে করলেও এই পেশা ছাড়তে পারছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে খবর দিলেও পতিতা ও আবাসিক হোটেলগুলোর বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়না। চিহ্নিত আবাসিক হোটেল থেকে প্রতিমাসে থানা পুলিশ পাচ্ছে মাসোহারা। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরাও সাপ্তাহিক, মাসিক চাঁদা নেয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও প্রশাসন নির্বিকার। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো দু’একটি অভিযান চালানো হলেও তা ‘আই ওয়াশ’ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানা রাস্তার মাথার এক দোকানী বলেন, ব্যবসার নিরাপত্তার জন্য আবাসিক হোটেল মালিকরা মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে থাকেন। টাকা দিয়েই প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে অভিযানে নামার আগে খবর পৌঁছিয়ে দেয়া হয় হোটেল মালিকদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মোঃ রুহুল আমিন বলেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসিই এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার রাখেন, আমি নই।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, শহরের আবাসিক হোটেলগুলো আমাদের নজরদারীতে রয়েছে। অপরাধ সংগঠনের খবর পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ১৩ মে রাতে হোটেল রাজ মনি থেকে কয়েকজন পতিতা আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত: