ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

শঙ্খ নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাঁশখালীর পুকুরিয়া

বাঁশখালী প্রতিনিধি ::  শঙ্খ নদীর তীব্র ভাঙ্গনের মুখে দিন দিন বিলীন হয়ে ছোট হয়ে আসছে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাসিন্দা অন্যত্র চলে গেলে ও অধিকাংশ জনগন বার বার স্থান পরিবর্তন করে বহুমুখী সমস্যার মাঝে কোন রকমে বেচেঁ আছে । যাদের কিছু অর্থ কড়ি রয়েছে তারা পাহাড়ি এলাকা সহ উচু ভূমিতে নতুন করে বসতি গড়ার সুযোগ পেলেও অন্যদের বার বার জোয়ার ভাটার কবলে পড়ে বেচেঁ থাকতে হচ্ছে।

জানা যায় শঙ্খ নদীর ভাঙনের মুখে বরুমছড়া, পশ্চিম বরুমছড়া, তেচ্ছিপাড়া ও সিকদার পাড়া সহ বেশ কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দাদের রাতে ঘুম হয় না । কখন জোয়ারের তোড়ে হারিয়ে যায় আপন বসত ঘরটি এ দুশ্চিন্তায়। অনেকের বসত ঘরটি চোখের সামনে নিমেষে ছিনিয়ে নিয়েছে শঙ্খ নদী। প্রতিনিয়ত ভাঙনের ফলে এলাকা বাসীর জনদাবির প্রেক্ষিতে বরুমছড়া, পশ্চিম বরুমছড়া অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক নগন্য বলে জানান স্থানীয় জনগন । তবে বর্তমানে প্রতিনিয়ত ভাঙনের মুখে থাকা তেচ্ছিপাড়া ও সিকদার পাড়া সহ আরো কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দাদের রাতে ঘুম হারাম হয়ে যায়।

সরজমিনে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন কালে জানা যায় বিগত দিনে পশ্চিম পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়া এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয় । তার মধ্যে নুরুল কবির, ফৌজুল কাদের, গোলাম মোস্তফা, আবদুল মান্নান, আবদুল গনি, জাফর আহমদ, আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান, শামসুল আলম,আহমদ মিয়া, মো: হারুন, আজিজুল হক, মোজাম্মেল হক, নুরুল আমিন, কবির আহমদ, নুরুল আলম, আবুল কালাম, আবদুল কাদের, এজাহার মিয়া, নুর আহমদ, আবদুল লতিফ, মফজল আহমদ, ছিদ্দিক হোসেন, মো: আলী , মো: হোছন, মোকতার আহমদ, আবদুল আলী, শাহা আলম, ফয়েজ আহমদ, নুরুল মনি, নুরুল কবির, মো: হাসেম, মাহাবুব আলম, রবিজা খাতুন, পশ্চিম পুকুরিয়া আইনউদ্দিন জামে মসজিদটি সহ আরো বেশ কিছু বাড়ি ঘর শঙ্খ নদীর ভাঙনের কবলে চলে যায় । যে কোন সময় বিলীন হতে পারে নুরুল হাছান, মো: আলী, কামরুন নাহার সহ অসংখ্য ব্যক্তির বাড়িঘর । তার পরে মৃত্যুকে সঙ্গী করে এরা বেচেঁ আছে আগামীতে একদিন স্বপ্নের বেড়িবাধঁ হবে আর তাতে তারা ফিরে পাবে হারানো বসত ঘর এ প্রত্যাশা নিয়ে।

শঙ্খ নদীর ভাঙনের ব্যাপারে হাবিবুর রহমান (৮০) জানান এক সময় এ তেচ্ছিপাড়ায় ৩টি সমাজের কয়েকশ পরিবার ছিল ,ভাঙনের মুখে সবাই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় । আমি এ পর্যন্ত ৯ বার ঘরটি বিভিন্ন স্থানে পরিবর্তন করে এখন আর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকাতে এখানে পড়ে আছি । জানিনা কখন শঙ্খ সব কিছু গ্রাস করে নিয়ে যায়। স্থানীয় মাহমুদ আলী (৭৫) বলেন , আমি প্রথম ভাঙনের কবলে পড়ি ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর । এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার বাড়ি পরিবর্তন করে ও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

এলাকার সচেতন যুবক পশ্চিম পুকুরিয়া যুব উন্নয়ন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আহমদ কবির বাবুল বলেন ,আমার বাড়িটি ও নদী গর্ভে অনেকে আগে বিলীন হয়ে যাওয়াতে বর্তমানে অন্যস্থানে বাড়ি করে বসবাস করছি। নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে বৃক্ষরোপণ থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি করি জনগনকে সচেতন করি ,যাতে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায়। সে জানান শঙ্খের ভাঙনের সাথে কিছু অসাধু ব্যক্তি বালি উত্তোলন করে সমস্যা সৃষ্টি করে। কিছুদিন আগে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দুটি বালু তোলার ড্রেজার আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে ।

পুকুরিয়ার সাধারন জনগন বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন পুকুরিয়ার তেচ্ছিপাড়া ও সিকদার পাড়া এলাকার কয়েকশ পরিবার রক্ষায় । না হয় যে কোন সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে এ সব পরিবারের বসত বাড়ি সহ শেষ সম্বলটি। শঙ্খ নদীর ভাঙনের ব্যাপারে পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আহসাব উদ্দিন বলেন , এ ভাঙনের ফলে আমার এলাকাটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে । জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে অনেকে চিরতরে গৃহহীন হয়ে পড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরুমছড়া অংশে কিছু কাজ করলে ও তা পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি জানান ।

পাঠকের মতামত: