ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের কারণে তীব্র খাদ্য সংকটে বন্যপ্রাণীরা

কক্সবাজারে অবস্থানরত মায়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার কারনে শুধু স্থানীয় মানুষ নয় সেখানকার বন্যপ্রাণীরাও ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে অসংখ্য বন্য প্রানী লোকালয়ে চলে আসছে, আবার অনেক বন্য প্রানী তাদের স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে গেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবী রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের বেশির ভাগ পাহাড় কেটে ফেলা এবং বন জংগল নস্ট করে ফেলায় বন্যপ্রানী গুলো তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য সংকটে অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। খুব দ্রুত অবস্থার উন্নতি না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এদিকে ১৮ নভেম্বর টেকনাফ উপজেলায় সার বিতরণ অনুষ্ঠানে বন্যপ্রানীদের খাদ্য সংকটের ফলে চাষীদের ফলন নস্ট করা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চাষীরা স্থানীয় সংসদ সদস্যকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা চাষী রমিজ আহাম্মদ বলেন গত সপ্তাহে আমার নিজের চাষাবাদ করা জমিতে হাতি নেমে সব ধান নস্ট করে দিয়েছে। শুধু আমার নয় এখানে অনেক চাষীদের জমির ধান নস্ট করে দিচ্ছে হাতির পাল। এছাড়া আগে ধান উঠার পর আমরা নানান ধরনের সবজির চাষাবাদ করতাম কিন্তু এখন কেউ সবজি চাষে আগ্রহি নয়। তিনি বলেন রোহিঙ্গাদের কারনে এখানকার বন্যপ্রাণীরা তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে। তাই তারা এখন লোকালয়ে চলে আসছে। আমরা দেখেও হাতির পালকে কিছুই করতে পারছি না, বেশি সামনে গেলে জীবনের ঝুকি থাকে তাই কেউ সামনেও যায় না। এছাড়া আগে ঘন জঙ্গলে অনেক বানর, হরিণ, শুকরসহ অনেক পাখি দেখা যেত কিন্তু এখন কিছ্ইু দেখা যায় না। সব কোথায় চলে গেছে।
টেকনাফ নেচার পার্ক ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ সভাপতি এবিএম আবুল হোসের রাজু বলেন আগে আমাদের নেচার পার্ক ছিল বন্যপ্রাণীদের অভয়ারন্য সব হাতি, বাণর, হরিন, শেয়াল সহ অনেক জন্তু জানোয়ার এখানে এসে নিরাপদে থাকতো। কিন্তু এখন কোন জীব জন্তু দেখা যায় না, আসলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আসার কারনে বন্যপ্রাণীদের অভয়ারন্য সব নস্ট হয়ে গেছে। আগে যেই পথ দিয়ে বন্যপ্রাণীরা হাটাচলা করতো সেই পথ এখন কিছুই নেই। তাই সব বন্যপ্রানী অন্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য না পেয়ে বন্যপ্রাণীরা এখন লোকালয়ে চলে আসছে। আবার অনেক জায়গায় আমরা খবর পাচ্ছি অনেক বন্যপ্রাণী না খেতে পেরে মারাও যাচ্ছে।
উখিয়ার এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকা নাসরিন সুলতানা বলেন কিছু দিন আগে আমার সুপারি বাগানে দেখছি ২ টি বানর, আগে কোন দিন এই পরিস্থিতি দেখিনি, মাঝে মধ্যে বেজি বা কোন চামচিকা দেখা যেত। পরে আরো কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে রোহিঙ্গাদের কারনে পুরু উখিয়ার বন জঙ্গল বলতে কিছুই নেই। সব পাহাড় এখন রোহিঙ্গাদের দখলে তাই সব বন্যপ্রাণী এখন বাইরে লোকালয়ে চলে আসছে। মূলত খাদ্য সংকটের কারনে এই পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছে। তিনি বলেন রোহিঙ্গাদের কারনে আমরা স্থানীয়রা খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি শুধু মানুষ নয় বনের পশুপাখিও কস্টে আছে। তাই দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত দেওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, এক সাথে এত মানুষ এক জায়গায় থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য নস্ট হবেই সেটা স্বাভাবিক, একই সাথে পাহাড় জঙ্গল যেভাবে কাটা পড়ছে তাতে বন্যপ্রাণীর খাবার সংকট সহ সব সমস্যা হবেই। তাই অনেক বন্যপ্রানী তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন বন্যপ্রাণীর মৃুত্যর খবর আসে নি।
এব্যাপারে উখিয়া টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেন সম্প্রতি উপজেলায় এক মিটিংএ গিয়ে চাষীরা এধরনের একটি অভিযোগ করেছে। তাদের দাবী খুবই যৌক্তিক আমি মনে করি বন্যপ্রানীর আভাসস্থল নস্ট হওয়ার ফলে তারা খাদ্য সংকটে আছে। ফলে অনেক বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এসে চাষীদের খেত খামার নস্ট করছে। এতে স্থানীয় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: