মুহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন কাদের :: কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গার পণ্যের নামে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি। শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তা ও অলিগলিতে, বার্মিজ মার্কেট, পৌর সুপার মার্কেট সহ খুচরা ও পাইকারি দোকান গুলোতে চলছে রমরমা নকল পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়। বাস্তবে রোহিঙ্গা পণ্য সস্তায় মিলে এরকম প্রচারকে পুঁজি করে এখন একশ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ীরা অবাধ ছড়িয়ে দিয়েছে নকল পণ্য। এহেন নকল পণ্যের ছড়াছড়িতে আসল পণ্য চেনা দায়। প্রতিনিয়ত খুব সহজেই প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
এসব নকল পণ্যের মধ্যে প্লাস্টিক সামগ্রী থেকে শুরু করে, টুথপেস্ট-ব্রাশ, বিভিন্ন প্রকার সাবান, স্যাভলন, ডেটল, বিভিন্ন প্রকারের প্রসাধনী সামগ্রী এমন কি এয়ার-ফ্রেশারও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পণ্য। রোহিঙ্গা বাজারের পণ্যের চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে বেজাল-নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যগুলো অবাধ চালিয়ে দিচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের লেভেল তুলে নিয়ে সেখানে নতুন করে লেভেল লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন নামকরা কোং ও বিদেশি পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতাদের বিশ্বাস, বিদেশি এনজিওগুলো বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। এসব পণ্যের দামেও কম। বাস্তবে মানুষের এমন মানসিকতার সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারের শহর থেকে গ্রামে প্রায় সকল স্থানে রমরমা বাণিজ্য করে যাচ্ছে নকলবাজরা।
শহরের লালদিঘীর পাড় রক্ষিত মার্কেটের অপজিটে ভ্যানে করে রোহিঙ্গা পণ্য বিক্রেতা জানান, রোহিঙ্গা পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব পণ্যগুলো রোহিঙ্গা পণ্য নামে বিক্রি হলেও আসলে প্রায় নকল এবং এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও রয়েছে। ইউনিলিভারের সীলে ডাব শ্যাম্পু ৩৮০মিলি. মাত্র ১২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা প্রকৃত বাজার মূল্য ৩৮০$। স্কয়ার কোং এয়ার-ফ্রেশার প্রকৃত বাজার মূল্য ১৯০টাকা হলেও এটি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০টাকায়।
পারভেজ কবির তারেক নামের একজন ক্রেতা জানালেন, রোহিঙ্গা শিবিরে দেওয়া খেজুর, এয়ার-ফ্রেশার, ৩০০/৪০০মিলি. ভ্যাসলিন, ৪৮০/৬০০মিলি. শ্যাম্পুও পাওয়া যাচ্ছে একদম সস্তায়। সচেতন মহলের প্রশ্ন, এত বড় বড় শ্যাম্পু, ভ্যাসলিন, এয়ার-ফ্রেশার এসব পণ্য কেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিচ্ছে এনজিও সংস্থাগুলো ? তারা আরও বলেন রোহিঙ্গা শিবিরের পণ্যের আড়ালে ভেজাল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ এসব নানা পণ্য-সামগ্রীর ওপেন-সিক্রেট ব্যবসা জেঁকে বসেছে কক্সবাজারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নকল পণ্য ব্যবহারে বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগে আক্রন্ত হওয়ার পাশাপাশি স্কিন-ক্যানসার সহ অনেক মারাত্ত¦ক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কক্সবাজারে এসব নকল পণ্যের অবাধ ছড়াছড়ি ও বাণিজ্যের পেছনে রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ এনজিও গুলোর হাত। প্রসাশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তদারকির অভাবে এনজিওগুলোর অসৎ কর্মকর্তারা রাতারাতি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে বাধ্য করছে নকল পণ্যের অবাধ বাণিজ্য করতে। এতে বিভিন্ন সাপ্লাইয়ার / টিকাদার প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, প্রসাশনের দীর্ঘদিন কোন প্রকার তদারকি না থাকায়, বাজারে অবাধ ভেজাল/নকল পণ্যের চলছে রমরমা বাণিজ্য, এতে বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক ব্যবসায়ীরা। বিএসটিআই, নির্বাহী-মেজিস্ট্রেট, ভোকতা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়মিত তদারকি নেই বললে চলে। তাই, সচেতন মহল ও ব্যবসায়ীদের দাবী, নিয়মিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি বাড়ানোসহ নকল/ভেজাল পণ্য বিক্রেতাদের ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সহ এনজিও সংস্থাগুলোকে নিয়নত্রণ করা গেলে জনজীবন নিরাপদ হবে।
পাঠকের মতামত: